আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“রুবাইয়্যাৎ” : এক অনুপম রচনা শৈলী

অহন থিক্কা সব শয়তানরে দৌরের উপর রাখুম।

রুবাইয়্যাৎ : আরবি বা ফারসী ভাষায় রচিত চতুষ্পদী কবিতা বা কবিতাসমূহ। রুবাই (رباعی‎) আরবী শব্দ। অর্থ- চতুষ্পদী অর্থাৎ চার পঙক্তি বিশিষ্ট কবিতা। এটা বিশেষ ধরনের কবিতা।

কিছু কিছু কবিতা আছে বিশেষ কিছু নিয়ম-কানুন মেনে সেগুলো লেখা হয়। যেমন- সনেট, লিমেরিক, এলিজি, ওড, রুবাই ইত্যাদি। রুবাইয়ের বহুবচন রুবাইয়্যাৎ (رباعيات) ) ১০৪৮ঈসায়ী পারস্যের (বর্তমান ইরান) কবি হযরত উমর খৈয়াম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও কবি হযরত হাফিজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের হাতে কবিতার এই বিশেষ ধরনটি চরম উৎকর্ষ লাভ করে। এটি ছড়া নয়। ছড়া হচ্ছে মূলত শিশুতোষ রচনা।

রুবাই উচ্চমার্গের দার্শনিক রচনা। তাসাউফ ও দার্শনিক মতের সাথে মিল পাওয়া যায় রুবাইয়ের দর্শনের। প্রধানত তাসাউফ দর্শন দ্বারা প্রভাবিত এসব রুবাই মাত্র চার লাইনে লেখা হয়েছে। রুবাইয়ে উল্লিখিত সাকি সুরা প্রতীকী বা রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে সাকি বা প্রিয় হলেন মুর্শিদ আর সুরা বা শরাব হচ্ছে দিব্যজ্ঞান/পথের দিশা বা মুহব্বত-মা’রিফত।

কিছু কিছু লিখাতে রোমান্টিকতাও রয়েছে। রুবাইয়্যাৎ-এর কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ লাইনে একই অন্তমিল রাখা হয় তৃতীয় লাইনটি মুক্ত অর্থাৎ কোন অন্তমিল থাকে না, যেমন- ‘ককখক’। ১৮৫৯ সালের দিকে ইংরেজ কবি এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড হযরত উমর খৈয়াম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রুবাইসমূহ ইংরেজি অনুবাদ করার পর পাশ্চাত্য জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তারই সূত্রে ইংরেজি থেকে বাংলায় কয়েকজন কবি সেগুলো অনুবাদ করলেও কিন্তু এসব অনুবাদে মূল অন্তমিল কাঠামো বজায় রাখা হয়নি। কারণ ভাব ও ভাষা উভয়ই ঠিক রাখা কঠিন।

তাই প্রচলিত কবিতার ন্যায় প্রথম দ্বিতীয় লাইনে মিল এবং তৃতীয় ও চতুর্থ লাইনে আরেকটা মিল রাখা হয় (ককখখ)। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে মূল ফারসী থেকে সরাসরি বাংলায় অনুবাদ করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম, বহু ভাষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। কাজী নজরুল ইসলাম মূল রুবাইয়ে ব্যবহৃত রচনাকৌশল ও অন্তমিলই (ককখক) ব্যবহার করেছেন। মূল ফারসী থেকে করা অনুবাদগুলোর মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামের অনুবাদগুলোই সবচেয়ে ভালো বলে বাংলার গুণীরা স্বীকৃতি দিয়েছেন। সাহিত্যিক ও লেখক ডক্টর সৈয়দ মুজতবা আলী তিনি নজরুলের অনুবাদকের ভূমিকায় বলেছেন, ‘কাজীর অনুবাদ সকল অনুবাদের কাজী।

’ এখানে হযরত উমর খৈয়াম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি ফারসী রুবাই ও কিছু অনুবাদ উপস্থাপন করা হলো : گویند کسان بهشت با حور خوش است من می گویم که آب انگور خوش است این نقد بگیر و دست از آن نسیه بدار کآواز دهل شنیدن از دور خوش است অনুবাদ : কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১) প্রভাত হলো। শারাব দিয়ে করব সতেজ হৃদয়-পুর, যশোখ্যাতির ঠুনকো এ কাঁচ করব ভেঙে চাখনাচুর। অনেক দিনের সাধ ও আশা এক নিমিষে করব ত্যাগ, পরবো প্রিয়ার বেণী বাঁধন, ধরবো বেণুর বিধুর সুর। (২) সবকে পারি ফাঁকি দিতে মনকে পারি ঠারতে চোখ, খোদার উপর খোদকারিতে ব্যর্থ হয় এ মিছে স্তোক। তীক্ষè সূক্ষ্ম বুদ্ধি দিয়ে জাল বুনিলাম চাতুর্যের, মুহূর্তে তা দিলো ছিঁড়ে হিংস্র নিয়তির সে নখ।

অনুবাদ : এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড Alike for those who for TO-DAY prepare, And those that after a TO-MORROW stare, A Muezzin from the Tower of Darkness cries “Fools! Your Reward is neither Here nor There!” একই ধারায় লিখা কত গুনাহ করেছি এ জীবনে বাঁচাবে কে! মোরে ওই অনল যাপনে। মুর্শিদ আমার, তিনি তো খোদার বন্ধু দক্ষিণে পাড়ে বসবেন তিনি, নিক্তির মাপনে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.