৭২ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণার চার ঘণ্টার মধ্যেই ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। রাত পৌনে দুইটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিএনপির মোট পাঁচজন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সন্ধ্যায় সোনারগাঁও হোটেলের সামনে থেকে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং এম কে আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন থেকে বের হওয়ার পর রাত একটা ১০ মিনিটে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁর উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসকে। এঁদের সবাইকে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে রাখা হয়।
এ ছাড়া গত রাতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু তাঁরা বাসায় ছিলেন না। রাত পৌনে দুইটায় এ খবর লেখা পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য জমির উদ্দিন সরকার ও যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনের বাসা ঘেরাও করে রেখেছিল পুলিশ। এর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও আটকের জন্য চেষ্টা করা হয় বলে জানা গেছে।
রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয় ও বাসার আশপাশে এবং নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
পুলিশের এমন আচরণকে অগণতান্ত্রিক বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, হরতাল করে মানুষকে খুন ও খুনের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির এসব নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, যারা হরতাল ডেকে মানুষ খুন করবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে। এদিকে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট আগামীকাল রোববার থেকে সারা দেশে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে।
রোববার সকাল ছয়টা থেকে হরতাল শুরু হয়ে শেষ হবে বুধবার সকাল ছয়টায়।
গতকাল বিকেলে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে এই হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির ডাকা এটাই সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের হরতাল। এর আগে সর্বশেষ গত ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর এবং ৪ থেকে ৬ নভেম্বর বিরোধী দল টানা ৬০ ঘণ্টা করে দুই দফা হরতাল পালন করে।
বিভিন্ন স্থানে আজ হরতাল: মওদুদ আহমদকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা, এম কে আনোয়ারকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কুমিল্লার হোমনা ও তিতাস উপজেলা, রফিকুল ইসলাম মিয়ার নির্বাচনী এলাকা ঢাকার মিরপুরের পল্লবী ও রূপনগর থানা এলাকায় এবং এই তিন নেতার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ভোলায় আজ শনিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে স্থানীয় বিএনপি। তবে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।
যেভাবে গ্রেপ্তার: প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় সোনারগাঁও হোটেলে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিএনপির গ্রেপ্তার হওয়া তিন নেতাই এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তাঁরা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে সোয়া আটটার মধ্যে পর্যায়ক্রমে রফিকুল ইসলাম মিয়া, মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার অনুষ্ঠান থেকে বের হন। সোনারগাঁও হোটেল থেকে বের হয়ে কিছুটা সামনে এগোনোর পর পুলিশ তাঁদের আটক করে। এরপর খালেদা জিয়ার সভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়।
রাত পৌনে একটার দিকে ওই বাসা থেকে বের হন আবদুল আউয়াল মিন্টু ও শিমুল বিশ্বাস। এ সময় সেখান অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের মিন্টু বলেন, ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে সংলাপের বিষয়ে কথা বলতে তিনি
বিরোধীদলীয় নেত্রীর বাসায় গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, দুই নেত্রী বা দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে তিনি গত রাতে ওই বাসায় এসেছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মিন্টু বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংলাপের পথ খোলা আছে। কিন্তু এই ধরপাকড়, অত্যাচার নির্যাতন সংলাপের পথ রূদ্ধ করবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর সেখান থেকে গুলশান অঞ্চলের পুলিশ মিন্টু ও শিমুল বিশ্বাসকে আটক করে নিয়ে।
হরতাল বাড়তে পারে: এর আগে রাতেই জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, একতরফা নির্বাচন করতে সরকার বিএনপির নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে। তিনি নেতাদের মুক্তির দাবি করে বলেন, আগামী তিন দিন ৭২ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি রয়েছে।
তাঁদের মুক্তি দেওয়া না হলে এই কর্মসূচি আরও দীর্ঘায়িত ও কঠোর হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধ, ভাঙচুর: প্রথম আলোর সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, বিএনপির তিন নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডু এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা গতকাল মধ্যরাতে সাতটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। এ সময় পুলিশের বিএনপিকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময় হয়। এর আগে বাড়বকুন্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শতাধিক গাড়ি এলোপাথাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে সেগুলোর চাকা পাংচার করে দেওয়া হয়। ফলে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
সীতাকুন্ড থানার উপ পরিদর্শক শাহ আলম হাওলাদার আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকায় গাড়িতে আগুন: তিন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর গতরাতে ঢাকায় বিজয়নগর, নয়া পল্টনের সিটি হার্ট মার্কেটের সামনে ও সোনারগাঁও হোটেলের সামনে তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মওদুদ আহমদের গুলশানের বাসভবনের সামনে দুটি ও কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এছাড়া নয়া পল্টন এলাকায় কয়েক দফায় কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।