বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দলের কর্মী-সমর্থকেরা গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করায় কয়েক হাজার যান আটকা পড়েছিল। মাঝরাতে নেতা-কর্মীদের সড়ক থেকে হটিয়ে পুলিশ সকাল নাগাদ প্রতিবন্ধকতা সরালেও যানজটে গতকাল শনিবার দিনভর কার্যত অচল ছিল ওই মহাসড়ক। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য তিন জেলা দেশের অন্যান্য স্থান থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল। বিএনপির নেতাদের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অন্তত ১২-১৩টি জায়গায় অবরোধ করেন। এ সময় আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী সাতটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় এবং আরও শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করেন তাঁরা।
মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় অর্ধশতাধিক গাড়ি এলোপাতাড়ি রেখে চাকার বাতাস ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে মহাসড়কের ওই স্থানে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ শুক্রবার রাতেই ঘটনাস্থলগুলোতে গেলে অবরোধকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এতে দুই পুলিশ সদস্য ও বিএনপির এক কর্মী আহত হন। রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ তাঁদের হটিয়ে দেয়।
কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার মাঝখানে ফেলে রাখা অর্ধশতাধিক গাড়ি সরাতে সকাল হয়ে যায়। ততক্ষণে ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কে কয়েক হাজার গাড়ি আটকা পড়ে। এরপর গতকাল দিনভর চেষ্টা করেও মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক করতে পারেনি পুলিশ। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দিনভর বিচ্ছিন্ন ছিল।
সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম হাওলাদার বলেন, ‘দুপুরের দিকে ধীরে ধীরে গাড়ি চলাচল শুরু হলেও দুর্বৃত্তরা আবার সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ বাইপাসে কয়েকটি গাড়ির চাকার বাতাস ছেড়ে দিয়ে মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে।
ফলে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা কার্যত অচল থেকে যায়। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ’ মহাসড়কে অচলাবস্থার কারণে গতকাল সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সীতাকুণ্ড উপজেলার জেএসসি-জেডিসি শিক্ষার্থীদের। অনেককে দীর্ঘ পথ হেটে পরীক্ষার কেন্দ্রে যেতে দেখা গেছে।
সীতাকুণ্ডের সুলতানা মন্দির এলাকার বাসিন্দা জেএসসি পরীক্ষার্থী সনি দাস বলে, ‘পরীক্ষা নিয়ে এমনি চিন্তায় আছি।
এর মধ্যে রাস্তায় গাড়ি বন্ধ। অনেক পথ হেঁটে পরীক্ষা দিতে এসেছি। ’ চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে সড়কপথে রওনা হন ইয়াছির মোহাম্মদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা রাত সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় গাড়িতে কাটিয়েছি। সকালে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে বিকল্প পথে ভেঙে ভেঙে যানবাহনে করে বেলা ১০টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেছি।
’
সীতাকুণ্ডের ২০ এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ: সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৩৭ কিলোমিটার পথে ২০টি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। সম্প্রতি রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ওই সব স্থানে বেশি সহিংস ঘটনা ঘটছে। জামায়াত-শিবির এবং বিএনপির প্রায় ৩০০ নেতা-কর্মী ওই সব ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করেছে পুলিশ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি মালামাল এবং প্রতিদিন লক্ষাধিক যাত্রী চলাচল করে।
মহাসড়ক এক দিন বন্ধ থাকলে বিপুল ক্ষতি হয় রাষ্ট্রের। ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।
প্রশাসন সূত্র জানায়, সীতাকুণ্ডের নুনাছড়া, পন্থিছিলা, ছোট দারোগারহাট, বাইপাস সড়কের উত্তর ও দক্ষিণ মাথা, হাছান গোমস্তা মসজিদ, হাসপাতাল গেট, সিরাজ মিয়া রাস্তার মাথা, বাড়বকুণ্ড, উত্তর মসজ্জিদা, চৌধুরীঘাটা, বাঁশবাড়িয়া, নিমতলা, ছোট কুমিরা, বারআউলিয়া, ফৌজদারহাট জলিল গেট এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি ওই সব জায়গায় বেশি সহিংতা ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটছে।
জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সীতাকুণ্ডের ২০টি এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা বেশি ঘটছে। এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় যাঁরা গণ্ডগোলের নেতৃত্ব দেন, তাঁদের প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। এঁদের সংখ্যা ৩০০ জন। এ ছাড়া বাইরের এলাকা থেকেও অনেকে এসে ঘটনা ঘটাচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।