আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিয়ের জন্য একটা "বায়োডাটা" লিখলাম, দেখুনতো, কেমন হলো...

! হজ্জ্ব থেকে ফিরে আব্বু-আম্মুর মাথায় নতুন ভূত চেপেছে, বাসায় “বিবাহযোগ্য” একটাই ছেলে আছে। একেযত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিতে হবে। [এই ভয়েই আমি গত তিনমাস যাবত বাসায় যাচ্ছি না ] প্রায়ই ফোনে এই প্রসঙ্গ চলে আসে, নানা ছলচাতুরি করে এড়িয়ে যাই। গতকাল ফোন করলো আপু। কথার প্রসঙ্গ একই।

এবার আর এড়িয়ে যাবার সু্যোগ হলো না। আপু খুব কঠোর গলায় বলে দিল, যত দ্রুত সম্ভব সবরকম ফর্মালিটিস মেইনটেইন করে একটা “বায়োডাটা” রেডি করে যেন তাকে মেইল করি। কি আর করা, সব কাজ রেখে একটা “বায়োডাটা” রেডি করলাম। যা দাড়ালো, তা নিম্নরুপঃ জনাব/জনাবা, আমার নাম সাকিব চৌধুরী ঝিলাম। মা-বাবা ঠিক কি ভেবে কাশ্মিরের ওই পাথুরে খরস্রোতা নদীর সাথে মিলিয়ে আমার নাম রেখেছিলেন, জানিনা।

বাস্তবে আমার সাথে ওই নদীর মিল নাই ঠিকই, কিন্তু পাথরগুলোর খুব মিল আছে। আমি পুরাই “ভ্যাগাবন্ড”। পারিবারিক স্ট্যাটাস খুব উচ্চ হলেও ব্যাক্তিগত স্ট্যাটাস খুবই করুন। আমার গায়ের রঙ দুধে আলতা (!), স্বাস্থ্যের অবস্থা মাসাল্লাহ ব্যাপক ভালো (!!), সিজিপি এর অবস্থা সুবানাল্লাহ আমার স্বাস্থ্যের থেকেও ভালো(!!!)। আমার খাওয়ার কোনো ঠিক নাই, ঘুমের কোনো ঠিক নাই।

আমার পছন্দের কোনও খাবার নাই। কতদিন না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি বলতে পারি না। প্রায়ই ঘুম থেকে উঠে দেখতাম, ক্লাশ টেস্টও মিস করেছি, সবগুলো ক্লাশও মিস করেছি। এরপর আবারো ঘুমিয়ে পড়তাম। আমার আশপাশের মানুষজন আমাকে খুবই ভদ্র ছেলে হিসেবে জানে।

ভিতরের কাহিনী হলো, আমি আজাইরা বাক্যালাপ একবারেই পছন্দ করি না। আজাইরা কথাবার্তা আমার কাছে মধ্যরাতের কাউয়ার কচকচির চেয়েও খারাপ লাগে। এমন অবস্থায় পড়লে আমি হয় চুপচাপ মুখ বন্ধ করে বসে থাকি (আর কল্পনা করি, লিউনার্দো হইয়া টাইটানিকে উঠছি ) অথবা সুযোগ বুইঝা উক্ত স্থান ত্যাগ করি। আর গুরুজনেরা ভাবে, বাহ, ছেলেটা কি ভদ্র আর লাজুক, কি অল্প কথা বলে !! আমি বাকপটু নই, আপনাদের ভাষায় “ইস্মার্ট”ও নই। বাড়ি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়মিত হারে পাঠাইলেও আমার ভূষণ-বসনে তা বোঝার উপায় নাই।

শেষ কবে চুলে চিরুনী দিয়েছিলাম মনে পড়েনা। হাফ প্যান্ট পইড়াই জীবনের অর্ধেকটাই পার কইরা দিছি (একবার চিটাগাং থেকে রংপুর আইছিলাম শুধু হাফ প্যান্ট আর টি-শার্ট পইড়া, সেটা ছিল পুরা ২ দিনের জার্নি )। পহেলা বৈশাখে যখন সবাই পাঞ্জাবী পড়ে প্রেমিকার হাত ধরে ঘুরতে বের হয়, আমি তখন ঘুম থেকে উঠি চোখ ডলতে ডলতে, ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির হয়ে। তারপর, ডাইরেক্ট চলে যাই হল “খাজা বাবা”য় নাস্তা করতে, হাফ প্যান্ট পড়েই, প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিস্মিত দৃষ্টির সামনেই। নাস্তা শেষে ফিরে এসে আবার ঘুম।

আমার কোনো হবি নেই, আমি কোনো কিছু “collect” করি না। আমার কাছে মনে হয়, obsessive compulsive behavior রোগে ভোগা ব্যাক্তিরাই কোনো কিছু “collect” করে। আমার প্রিয় কাজ ঘুরে বেরানো। এর বাইরে জীবনে আর দুটি কাজই মন দিয়ে করেছি, কম্পিউটারে গেমস খেলা আর মুভি দেখা। এছাড়া আমার আর কোনো আগ্রহ নেই।

সরি, একটু ভুল বলে ফেললাম, এসবের বাইরে আর একটা কাজ খুব মন দিয়ে করি, সেটা হল, সিগারেট ফুঁকানো। আমার জীবনে কোনও দুঃখ নেই, কোনও কষ্ট নেই, কোনও কষ্ট এলে বিড়ি ফুঁকে, আর হা হা করে হেসে উড়িয়ে দিয়ে কিঃবা মধ্যমা দেখিয়ে বিদায় করা আমার বহুদিনের পুরোনো অভ্যাস। আমি দায়িত্বশীল নই, দায়িত্ব নিতে একদম পছন্দ করিনা। যেকোনও রকম ঝামেলা এড়িয়ে যেতে আমি সিদ্ধহস্ত। অন্য কারও মতামতের থোড়াই কেয়ার করি, নিজের যা ভাল মনে হয় সবসময় তাই করি।

বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, আমি কখনো কোনো মেয়েকে টিজ করিনি, সবসময় বড়দের সম্মান করে চলেছি, কোনওদিন কোনও টাকা পয়সা এদিক-ওদিক করিনি কিঃবা অসৎ পথে উপার্জনের চেষ্টা করিনি। [মা-বাবার দেয়া এই কয়টা গুণই এখনও টিকে আছে আরকি……] বুঝতেই পারছেন, দেশীয় প্রেক্ষাপটে একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আমার ভবিষ্যত পুরাই অন্ধকার। single লাইফটা প্রচন্ড রকম পছন্দ করি। মানবসঙ্গ খুব একটা পছন্দ নয়, মানবসঙ্গ জীবনে দুটো ক্ষেত্রেই ইনজয় করেছি। প্রথমত, আমার মা-বাবা, দ্বিতীয়ত, আমার বন্ধুবান্ধব।

চায়ের দোকানে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ায় আমি প্রচন্ড রকম আসক্ত। আমি ছবি আঁকতে পারিনা, কবিতা বুঝিনা, গান গাইতে পারিনা, গিটার দুইদিন ট্রাই মারছিলাম, আঙ্গুল ব্যাথায় কাতর হইয়া পরদিনই ইস্থফা দিছি। এককথায় আমার কোনো প্রতিভা নাই। সৃষ্টিকর্তা আমারে বানানোর সময় নিশ্চয় কোনও ingredient কম দিয়েছিলেন। একদিক দিক দিয়া ভালোই হইছে অবশ্য, ঠেলা কমছে।

কোনো প্রতিভা থাকলে সেই প্রতিভার ঠেলা সামলাইতে পারতাম কিনা ব্যাপক সন্দেহ। আমার জীবনের aim/স্বপ্ন বলতে একটাই, সেটা হলো, হারিয়ে যাওয়া। একদিন খুব ভোরবেলায় ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিয়ে, মনের সুখে শিষ বাজাতে বাজাতে হারিয়ে যাবার এই বন্য ইচ্ছাটা আমি কোনও ভাবেই মাথা থেকে বের করতে পারিনি। আমি irresponsible, aggressive । আমার মেয়ে পটানোর মত কোনও গুণও নাই, চেষ্টাও নাই।

শুধুই responsible হতে হবার ভয়ে এই ২৩ বছরের জীবনে কোনও প্রেম করা হলো না, হলো না কোনও মেয়ের হাত ধরা… উদাস হইয়া গেলেন নাকি ?!! আসল কথাটা কই, কোনও দিন চেষ্টাও করিনি। প্লাস, হারিয়ে যাবার ওই স্বপ্নটায় পাশাপাশি দু’জন বড্ড বেশি বেমানান, একজনের জন্যই বরং মানানসই। আমার জীবনযাত্রা নিয়ে আমি প্রচন্ডরকম গর্বিত। আমি মনে করি, সকল পুরুষের জীবনটাই আমার মতো হওয়া উচিৎ। এবার বলেন, আমার মতো এমন সুপুত্র এদেশে আর কোথাও পাবেন? বিলাত-আম্রিকায় পাইলে পাইতে পারেন…… বি.দ্রঃ আমি রিভার্স খেলবার চেষ্টা করছি ভেবে ভুল করবেন না ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।