ওরা দিনের আধারে ঘুমায় ওরা রাতের আলোতে হাটে, ইটের দেয়ালে মাথা রেখে ওরা হৃদয় খুলে হাসে । ওরা ভালোবাসা বিলিয়ে যায় ,ওরা কষ্ট লুকিয়ে বাচে ।
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ডকুমেন্টারি হলো বিয়ে বাড়ীর ভিডিও । বাপরে বাপ । কি নাই এই ভিডিওতে , যতবার নিজের কারো বিয়ের ভিডিও দেখি মনে হয় এর চেয়ে এন্টারটেইনিং ভিডিও দুনিয়াতে আর কিছু নাই ,চেনা মুখগুলো এক সিডিতে এমনভাবে আসে যে মনটা আনন্দে ভরে উঠে , সবচেয়ে মজা পাই খাওয়া দাওয়ার দৃশ্য দেখে ,এমনিতেই বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হল খাওয়ার দৃশ্য ।
মামা, চাচা, ভাই ,খালা ,আপারা যখন গাপুস গুপুস খায় সেগুলো ভিডিওতে দেখলে এতো ভাল্লাগে কেন জানিনা । ভিডিও ওয়ালারা কম জোকার না , জুম করে করে দেখায় হাড় হাড্ডি ক্যামনে চিবাচ্ছে চাচাটা ,জুম করে দেখায় ঝাল খেয়ে আপুটা কেমন শশাচ্ছে , বাচ্চারা খেতে চাচ্ছে না কিন্তু মা জোর করে খাওয়াচ্ছেন ,সাথে নিজেও খাচ্ছেন আর মরিচের ঝালে শসাচ্ছেন । হাসির বেগ থামানো যায় না যখন দেখি, যিনি মাংস পরিবেশন করছেন তিনি কোন এক আংকেলের প্লেটে মাংস দিবেনই আর আংকেল বলছেন না না না না না না না না না ,কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না ,বড় চামুচ দিয়ে অনেক গুলো মাংসের টুকরো পড়ে যায় প্লেটে ,আংকেলের মুখে আদুরে বিরক্তি
আমাদের জেলা কিংবা থানা শহরের বিয়ে গুলো ঢাকা শহরের মত কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করা হয় না । বিরাট ছামিয়ানা টাঙ্গিয়ে বিয়ের উৎসব , গোটা অনুষ্ঠান ভিডিও করা হয় , গায়ে হলুদ থেকে ভিডিও শুরু । একজন একজন করে এসে ছেলের গায়ে হলুদ ডলে ডলে দিচ্ছেন সাথে নিজেও ভিডিওর দিকে চেয়ে হাল্কা একটা হাসি দিয়ে পোজ দিচ্ছেন ,হাজার হলেও বিয়ের ভিডিও ,অনেক দিন থাকবে , বর সাহেব মূর্তির মত বসে আছেন ,খানিকটা লজ্জা নিয়ে ,আশেপাশের উৎসাহী মেয়ের দল ,কেউ হলুদ শাড়ি পড়েছে ।
বরযাত্রী যাওয়ার আগে দেখা যায় ছেলেকে সবাই সিরিয়ালি মিষ্টি খাওয়াচ্ছে ,বেচারা মিষ্টি খেতে খেতে আর পারছে না তবুও খেতে হচ্ছে ,ভিডিও ম্যান ভিডিও করছে ,এরপর সবাই গাড়িতে উঠলে বড় পক্ষের ভিডিও কিছুসময়ের জন্য শেষ ।
শুরু হল কন্যা পক্ষের বাড়ির ভিডিও , এখানকার উল্লেখ্যযোগ্য অর্থাৎ টান টান উত্তেজনা আসে যখন মেয়েকে কবুল পড়ানো হয় । মেয়ে হাউমাউ করে কাদছে পাশের বলা হলো “বল মা কবুল “ বল বল “বল মা কবুল” । , মেয়ে সহজে কবুল বলে না ,কান্নার বেগ বাড়িয়ে দেয় কারন তাকে বলে দেয়া আছে কান্না করতে হবে , তাই নিয়ম ,কান্না না করলে জিনিসটা কেমন জানি দেখায় । অনেক আদুরে অনুরোধ বিনুরোধ শেষে মেয়ে আস্তে করে মাথা নিচু করে বলে “কবুল” ।
, বাকি সবাই জোরে সোরে বলে উঠে “শুকুর আলহামদুলিল্লা”
সত্যিকারের হৃদয়বিদারক দৃশ্যটি দেখা যায় যখন মেয়েকে চূড়ান্ত বিদায় দেয়া হয় । আমাদের ভাষায় বলা হয় সঁপে দেয়া । একদিকে কন্যার মা হাউহাউ করে কাদছেন ,ছোট ভাইটা চোখ মুচছে ,বাবার অন্তরটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু তিনি নিজেকে সামলে রেখেছেন , হঠাৎ তার মেয়ে যখন তাকে জড়িয়ে ধরল তিনি নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলেন না । বুকে ধাক্কা মেরে কান্না বেরিয়ে আসলো তারও । মনে হচ্ছে চিরদিনের জন্য আলাদা হয়ে যাচ্ছেন তারা ।
এই একটা দৃশ্য আমি বেশি দেখি না , ভিডিওটা টেনে দেই ।
বরের বাসায় কনেকে নিয়ে আসার পর আবার আনন্দের ভিডিও শুরু ,চারিদিকে মেকাপ আর বিউটি পারলারিং এর বাহার ,মেয়েরা দল বেধে ঘুরে বেরাচ্ছে ভাব নিয়ে ,কিছু ছেলে তাদের ইম্প্রেস করার চেষ্টা করছে । ছেলেরা মনে করে বিয়েতে কাউকে প্রপোজ করলে নাকি মেয়ে পটে যায় ,জানিনা এর সত্যতা কতটুকু , তবে এই আশায় তারাও ভাব ধরার ট্রাই মারে । , তারপর বড় আর কনে কে এক বিছানায় বসিয়ে রেখে ভিডিও চালু করা হয় ,অনেকে তাদের পাঁশে গিয়ে পোজ দেন । এক্ষেত্রে সিরিয়াল মেন্টেইন করা হয় ।
বিয়েতে আরও অনেক ব্যাপার হয় ,যেমন দেখা গেলো যেকোন একটা বিষয়ে ঝগড়া লেগে যায় প্রায় অধিকাংশ বিয়েতে । এসব অবশ্য ভিডিও তে স্থান পায় না ।
যাইহোক বিয়ের ভিডিওর বেশি ভাগি আনন্দের । আজ অনেকদিন পর নিজের একজনের বিয়ের ভিডিও দেখে অনেক অনেক আনন্দ পেলাম ,ভাল্লাগে কেন জানি পরিচিতদের ভিডিওতে দেখে , যদিও তা হাই ডেফিনেশন কোন ভিডিও নয় কিন্তু তবুও চোখদুটো অনেক মনোযোগী হয়ে যায় । আমি নিজেও দুএকটা বিয়ের ডকুমেন্টারি তে আছি , তবে ডাকাত রুপে , কি কারনে জানিনা আমাকে ডাকাতের মত লাগে বিয়ের ভিডিওতে ।
নিজেকে দেখে হো হো করে হেসে উঠি
ভেবেছি আমার বিয়েতে আমার নিজের ভিডিও তো দূরে থাক কোন ছবিও তুলা যাবে না এই বলে ফরমান জারি করা হবে ,সর্বসাকুল্যে একটি ছবি, শুধুমাত্র কনের সাথে একটি ছবি ডিএসেলার দিয়ে তুলে এডবি ফোটোশপ দিয়ে সহীহ এডিট মেরে টাঙ্গিয়ে রাখা হবে :
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।