শ্বাস-প্রশ্বাসে আছে স্বাধীনতা, চিন্তায় মানবতা...
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজী (বিআইএমটি)- কিছু না লিখলেই নয়!
বিআইএমটি কমিউনিটি পেইজ অ্যাডমিন হয়েও অনেকদিন আমার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে কিছু লিখার জন্য কলম হাতে নেয়া তো দূরের কথা কী-বোর্ডেও আঙ্গুল ছোয়াইনি। কিন্তু এখন যে লিখতেই হবে। অনিয়ম-লুটপাট, শিক্ষকদের দায়িত্বে চরম অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে শত মেধাবীর স্বপ্ন। দক্ষিন এশিয়ার অন্যতম এবং বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক নৌ-প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দেশের আনাচ-কানাচ হতে মেধাবীরা আসে এখানে...শত বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে কেউ চান্স পায় মেধার জোরে, কেউ আবার ভর্তি বানিজ্য পরিচালনাকারী কোন প্রভাবশালী অসাধু কর্মকর্তা-শিক্ষক বরাবর মোটা অঙ্ক চালান করে। এ যাবতকালে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ বেতনের চাকরি কেবল মেরিন-মেরিটাইম শিল্পে আর বিআইএমটি এই সেক্টরের উপর বেইস্ড রেপুটেড নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় অনেক ক্যাচাল কাহিনি! এখান থেকে মোটামুটি ভালোভাবে পাশ করে বেরোলেই উচ্চবেতনের চাকরি মিলতে সাবেক ক্যাডেটদের তেমন বিলম্ব হয়নি।
কিন্তু, এখন যতই দিন যায় ততই নিচের দিকে নামছে বিআইএমটি’র একাডেমিক প্রায় সব কার্যক্রম। দায়িত্বশীল কেউই এখন দায়িত্বে থাকতে চান না। যে শিক্ষকের ক্যাম্পাসে থাকার কথা সন্ধ্যা ৬:৩০ পর্যন্ত সে দুপুর ২টা বা ৪টা/৫টা’র শীপে ক্যাম্পাস থেকে হাওয়া! সবাই যার যার পার্টটাইম জব আর ব্যসায় ফুলটাইম হতে ব্যস্ত। বিআইএমটিতে তো টিচারদের স্যালারি একেবারেই কম না!! তারপরও আরও চাই অনেকের! তাই, নিয়মিত ক্লাস হয় না...ক্যাডেটদের সাথে স্যারদের যাচ্ছেতাই দুর্ব্যবহার। হাতে গোনা ক’জন ছাড়া সিলেবাসও কমপ্লিট করে দেয়না কোন টিচার।
যারই ফলশ্রুতিতে আমাদের রেজাল্ট দিন দিন খারাপ হচ্ছে। হ্যা, ঠিক আছে অনেকেই ভালো সিজিপিএ অর্জন করে। কিন্তু তার বেশীরভাগই আসে সেই অবৈধভাবে! কোন না কোন প্রভাবশালী টিচারের নিকট-আত্মীয় বলে কথা! খাতায় যাই লিখুক, প্র্যাক্টিক্যালে পারফরম্যান্স যেমনই হোক তার জন্য সেরা গ্রেড থাকতে হবে। বাস্তবে সত্যি বলতে, তাদের চেয়ে আমিও ভালো ছাত্র। আর বিরামহীন দুর্নীতির কথা? হেহ্, প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল, প্রিন্সিপালের এপিএস সহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধানেরা পুরো বিআইএমটি খেয়ে বেড়াচ্ছে।
প্রতি বছর সরকারের পক্ষ থেকে পাচ কোটি টাকা বরাদ্দ হয় বিআইএমটি’র জন্য। আমাদের ব্যুরো’র চমৎকার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দুই-সোয়া দুই কোটি খরচ দেখিয়ে বাকী তিন কোটি ফেরত পাঠিয়ে দেন তার সততা আর মিতব্যয়ীতার প্রমান সরূপ। খরচের টুং-টাং লাখ চল্লিশেক খরচ করে বিআইএমটি’র জন্য আর কোটি-দেড়েক ভাগাভাগি করেন প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপালসহ হোমড়া-চোমড়া সব অসাধুদের সাথে। ব্যাস, হয়ে গেছে সব উন্নতি। ল্যাবে পর্যাপ্ত পরিমানে প্রকৌশল অবজেক্ট পাওয়া যায় না।
গেলেও অনেক নিম্নমানের। ওয়ার্কশপে শত শত কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে টেক-কেয়ার হয় না বলে। ব্যবহৃত হয় না তিন তলা একাডেমিক কাম ওয়ার্কশপ ভবন। ক্যাম্পাসের হোস্টেলগুলো যেন রানা প্লাজা! পুরনো হোস্টেল সবগুলো দেখলে বুক কেপে ওঠে...মনে হয় এখনি ভেঙ্গে পড়লো...!! তারপরও সেখানেই থাকছে বাইরের শহর থেকে আসা ক্যাডেটরা। প্রায়ই হোস্টেলের বারান্দায় উপরের সিলিং থেকে সিমেন্ট খুলে খুলে পড়ে বৃষ্টির মত।
বারান্দায় হাটা-চলা করতেও চরম আতংক! একটু জোরে হাটলে বা দৌড় দিলে পুরো ফ্লোর কাপে ব্যাপক শব্দে। ছাত্রদের জন্য থাকা দুটি ছোট আধুনিক শক্তিশালী ইঞ্জিনবিশিষ্ট জাহাজ বিআইএমটি লঞ্চ-১ এবং বিআইএমটি লঞ্চ-২ এর মধ্যে বিআইএমটি লঞ্চ-১ সচল। সাইজে সামান্য ছোট অপরটি সামান্য যান্ত্রিক ত্রুটির ফলেই বিকল। পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে মাসের পর মাস। সামান্য ছোট্ট রিপিয়ারিং এর জন্য দেয়া টাকাটাও পেটায় নম!! ক্যাম্পাসের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখন আর সেইরকম নেই।
এত খেয়েও সন্তুষ্ট হতে পারছেন না অনেকে। বড় বড় গাছগুলো বিক্রি করা হচ্ছে অবলীলায়। আমাদের সামনেই ক্রেতা পক্ষের লোক এসে গাছ কেটে নিয়ে যায় ক্যাম্পাসের বাইরে...! আগে অনেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে বিআইএমটি’র এই ক্যাম্পাসে আসতো। গার্ডরা ঢুকতে দিতে চাইতো না সংরক্ষিত এলাকা বলে। আর এখন?? একটা গেইটেও গার্ড বুথে গার্ড থাকে না! কেউ মাছ ধরে কেউ আলু-পিয়াজ চাষ করছে ক্যাম্পাসের বাইরের অব্যবহৃত জায়গায়।
দায়িত্বে থাকে না কেউ! কি আজব। প্রিন্সিপাল থেকে শুরু করে গার্ড পর্যন্ত সবার একই আদর্শ।
এইভাবেই চলছে ঐতিহ্যবাহী বিআইএমটি। স্বর্ণ তৈরির কারখানা খ্যাত যেই বিআইএমটি থেকে বের হওয়া ক্যাডেটরা ৭,০০০-৮,০০০ ইউএস ডলারে চাকরি পেত, সেই একই প্রতিষ্ঠানের এখনকার অধ্যয়নরত ক্যাডেটদের ভবিষ্যৎ কি হবে???
(চলবে...)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।