প্রাথমিক শুনানির পর মূল শুনানির তারিখ ঠিক হয়েছিল ১৮ নভেম্বর। শুনানিতে উপস্থাপনের জন্য বিসিবি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও গোছাতে শুরু করেছিল। এর মধ্যেই এল দুঃসংবাদ—অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে বিসিবি-নিমবাস চুক্তিসংক্রান্ত সালিসের শুনানি।
সময়মতো ব্যাংকঋণ শোধ না করায় ভারতের আদালতে মামলা হয়েছে নিমবাস কমিউনিকেশনস লিমিটেডের বিরুদ্ধে। বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ওই মামলার সুরাহা হওয়ার আগ পর্যন্ত বিসিবির সঙ্গে সালিসে আর এগোতে পারবে না নিমবাস।
স্থগিত থাকবে শুনানি। বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীও কাল নিশ্চিত করেছেন, ‘ভারতের আদালতে ব্যাংকঋণ-সংক্রান্ত একটি মামলা হয়েছে নিমবাসের বিরুদ্ধে। সেটির নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্য কোনো মামলায় এগোতে পারবেন না বলে নিমবাসের আইনজীবীরা আমাদের আইনজীবীদের জানিয়েছেন। আমি সেটি বোর্ডকে অবহিত করেছি। ’ নিমবাসের সঙ্গে চুক্তিটা তাই এখন বিসিবির জন্য গলার ফাঁসই হয়ে গেছে।
২০০৬ সালের নভেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর বিসিবির ‘স্বপ্নের’ নিমবাস চুক্তি শেষ হয়েছে ২০১২ সালের জুলাইয়ে। সেই টেলিভিশন স্বত্ব চুক্তির পুরো টাকা বিসিবি তো পায়ইনি, উল্টো টাকা আদায়ের জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় গিয়ে সিঙ্গাপুরভিত্তিক আইনি পরামর্শককেও দিচ্ছে মোটা অঙ্কের ফি। ৫৬.৮৮ মিলিয়ন ডলারের নিমবাস চুক্তি থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪ মিলিয়ন ডলারের মতো পেয়েছে বিসিবি। নির্মাণ খরচ বাদ দিয়ে বকেয়া পাওনার পরিমাণ এখনো ২১-২২ মিলিয়ন ডলার। শুনানি স্থগিত হয়ে পড়া মানে বিসিবির এই বিশাল অঙ্কের প্রাপ্যটাও অনিশ্চিত হয়ে পড়া।
এদিকে নিমবাস চুক্তি শেষ হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন করে লম্বা সময়ের জন্য টেলিভিশন স্বত্বের চুক্তি করতে পারেনি বিসিবি। গত জুলাইয়ে নিমবাস চুক্তি শেষ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দুটি হোম সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। দুটির টেলিভিশন স্বত্বই বিক্রি হয়েছে আলাদা আলাদা করে। বোর্ড সূত্রের তথ্য, গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজে টেলিভিশন স্বত্ব বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৫৫ হাজার মার্কিন ডলারের মতো। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সিরিজে আয়টা প্রায় ৭০ হাজার ডলার।
আলাদা আলাদা সিরিজ বিক্রি না করে আইসিসির এফটিপি (ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা) ধরে লম্বা সময়ের জন্য টেলিভিশন স্বত্ব বিক্রি করলে গড়পড়তা আয় আরও বেশি হতো বলে ধারণা অভিজ্ঞদের।
ভবিষ্যতের জন্য বিসিবির মার্কেটিং ও কমার্শিয়াল কমিটির সুপারিশও তা-ই। কমিটির প্রধান ও বিসিবির পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম কাল বলছিলেন, ‘টেলিভিশন স্বত্ব সিরিজ ধরে ধরে বিক্রি করা যেতে পারে, আবার আইসিসির বর্তমান এফটিপি অনুযায়ী ২০২০ সাল পর্যন্ত সব খেলার জন্যও বিক্রি করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। তবে মার্কেটিং ও কমার্শিয়াল কমিটির সুপারিশ, স্বত্বটা ২০২০ সাল পর্যন্ত একসঙ্গে বিক্রি করা গেলে ভালো।
বিসিবি তাতে বেশি লাভবান হবে। ’
এই জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আরেকটি হোম সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। তখনো যদি আলাদা করে শুধু শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্যই টেলিভিশন স্বত্ব বিক্রি করা হয়, হয়তো আরও একবার বাজারমূল্যের চেয়ে কমেই বিক্রি হবে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
বোর্ডে অস্থায়ী কমিটি থাকাকালে সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছিলেন, টেলিভিশন স্বত্ব বিক্রির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটা নির্বাচিত বোর্ডের হাত দিয়ে হওয়াই ভালো। কিন্তু সেই নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে নির্বাচিত বোর্ড গঠিত হওয়ার প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো স্বত্ব বিক্রির প্রক্রিয়াই শুরু করেনি বিসিবি।
নির্বাচনের পর পর হওয়া একটি পরিচিতিমূলক সভার পর পরিচালনা পর্ষদের আর কোনো সভাও হয়নি, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হতে পারে।
নিমবাসের শুনানির মতো তাই ঝুলে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেট বিপণনের ভবিষ্যৎও। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহীর আশ্বাস, ‘২০২০ সাল পর্যন্ত পুরো প্যাকেজ একসঙ্গে বিক্রির ইচ্ছা আমাদের। শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগেই হয়তো সেটা হয়ে যাবে। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।