স্বাধীন দেশে স্বাধীন ভাবে চলতে চাই.......
গতকাল হয়ে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক সাধারন সভা (এজিএম)। আর সভার মূল আকর্ষন হচ্ছে ভারতীয় টিভি সম্প্রচারক কোম্পানি নিমবাস। বার্ষিক সাধারণ সভা আর গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত সংশোধনী প্রস্তাব থেকে প্রশ্নোত্তর পর্বটা সরে গেল নিমবাস চুক্তির দিকে। ২০০৬ সালের নভেম্বরে হওয়া বিসিবির টেলিভিশন সম্প্রচার স্বত্ব চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন আগে থেকেই ছিল। কাল বার্ষিক সাধারণ সভা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সে প্রশ্নটাকেই আরও জোরালো করলেন বিসিবির সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল।
‘চুক্তিতে ব্যাংক গ্যারান্টির উল্লেখ নেই। নিমবাসের চুক্তিকে তাই কোনো চুক্তিই বলা যাবে না। ব্যাংক গ্যারান্টি থাকা দরকার ছিল। আমরা এখন একটা সাদা কাগজের ওপর নির্ভর করে কাজ করছি’—বলেছেন সভাপতি।
নিমবাসের সঙ্গে প্রায় ৫৭ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দেখিয়েছিল ধনী হওয়ার হাতছানি।
অথচ সময় যত গড়িয়েছে, চুক্তির জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটই। নানা অজুহাতে, নানা ফাঁকফোকর বের করে বিসিবিকে প্রাপ্য অর্থ থেকে বঞ্চিত করছে ভারতীয় সম্প্রচার সংস্থাটি। শুধু ২০০৯-১০ অর্থবছরেই নিমবাসের কাছে বকেয়া ২৩.৭৬ মিলিয়ন ডলার। কাল বোর্ড সভাপতিই জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সিরিজের সফরসূচি এবং সময়সূচি এদিক-সেদিক হওয়ায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে গত অর্থবছরে বিসিবির প্রাপ্য অর্থ থেকে ১৭ মিলিয়ন ডলার ছাড় চাইছে নিমবাস। পরে সেটা কমে ১৪ মিলিয়ন ডলারে নেমে এলেও মোস্তফা কামাল বলেছেন, ‘বিসিবি থেকে আমরা বলেছি, আমরা ১ টাকাও ছাড় দেব না।
তাদের যদি ক্ষতি হয়েই থাকে, নগদ টাকায় ছাড় না দিয়ে সেই ক্ষতিপূরণ অন্য কোনোভাবে করা যায় কি না, সেই পথ খুঁজছি আমরা। আমরা চেষ্টা করছি ভারতের সঙ্গে দুটি বাড়তি সিরিজ খেলে সেটা দিয়ে ক্ষতি পোষাতে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরও আমাদের ৪ কোটি টাকার মতো লাভ হবে। আশা করি, মাস খানেকের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে। ’
নিমবাস-সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে না হলে চুক্তি অনুযায়ী আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে।
কিন্তু বিসিবি আদালতে গেলে নাকি আর একটি টাকাও দেবে না নিমবাস! ‘যেভাবে চুক্তি হয়েছে, তাতে এ নিয়ে আদালতে গেলে এক টাকাও পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই অনিয়মটা যারা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও টাকা পাব না’—শঙ্কা বোর্ড সভাপতির।
নিমবাস চুক্তিতে ব্যাংক গ্যারান্টির উল্লেখ আছে কি নেই, সেটা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। চুক্তির বেশির ভাগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় আলী আসগর লবি বোর্ড সভাপতি থাকার সময়। এরপর ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যখন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তখন বোর্ড সভাপতি ছিলেন ওই সময়ের কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সিনিয়র সহসভাপতি মাহবুবুল আনাম।
চুক্তিতে ব্যাংক গ্যারান্টির উল্লেখ না থাকা নিয়ে মাহবুবুলের বক্তব্য, ‘ব্যাংক গ্যারান্টি যোগ করার কথা ছিল লং ফর্ম অ্যাগ্রিমেন্টে। লং ফর্ম অ্যাগ্রিমেন্টের সময় আমি বোর্ডে ছিলাম না। ’ লং ফর্ম অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে সিনা ইবনে জামালীর তত্ত্বাবধায়ক বোর্ডে। ওই সময় উপদেষ্টা হিসেবে বোর্ডে থাকা এবং বর্তমান সহসভাপতি আহমেদ সাজ্জাদুল আলমের বক্তব্য, ‘চুক্তিতে গ্যারান্টি মানির কথা উল্লেখ নেই, কথাটা ঠিক না। লং ফর্ম অ্যাগ্রিমেন্টের সময় আরও ৮-১০টি বিষয়ের সঙ্গে এটাও যোগ করা হয়েছিল।
সে অনুযায়ী প্রতিবছরের শুরুতে নিমবাসের পক্ষ থেকে ব্যাংক গ্যারান্টি মানি দেওয়ার কথা বিসিবিকে। কিন্তু নানা কারণে সেটা তারা দিচ্ছে না। ’ চুক্তিতে নিমবাসের জয় হয়ে গিয়েছিল আসলে হেড অব অ্যাগ্রিমেন্ট দিয়েই। পরে লং ফর্ম অ্যাগ্রিমেন্টে কিছু শর্ত যোগ করে কেবল সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণই কমিয়ে আনার চেষ্টা হয়েছে।
২০০৬-০৭, ২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯—গত তিন অর্থবছরে বিসিবিতে কোনো বার্ষিক সভা হয়নি।
গতকালের সভা তাই এই তিন অর্থবছরেরই আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন করেছে। গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা থাকলেও ৩০ নভেম্বর ইজিএমের তারিখ নির্ধারণ হওয়ায় এখন সেখানেই তোলা হবে খসড়া সংশোধনী। এর আগে ২৮ অক্টোবর বোর্ড পরিচালকদের সভায় চূড়ান্ত করা হবে সেটা। ইজিএমে অনুমোদন করা হবে বহুল আলোচিত বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার গঠনতন্ত্রও। তবে সিইওর পরিবর্তে সিওও পদ সৃষ্টির প্রস্তাব সম্পর্কে কাল আবারও নিজের অবস্থান জানিয়েছেন মোস্তফা কামাল, ‘ক্রিকেটের স্বার্থের পরিপন্থী কোনো সিদ্ধান্ত বিসিবি নেবে না।
আমরা অন্য দেশগুলোর মতো পেশাদার বোর্ড চাই। সরকার আমাকে এখানে গঠনতন্ত্র রক্ষা করতে পাঠিয়েছে, পরিবর্তন করতে নয়। তার পরও ক্রিকেটের প্রয়োজনে কিছু সংশোধনী হয়তো আনতে হবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই, বিসিবিতে সিইও পদ থাকুক। ’
সুত্র : বাংলাদেশি নিউজ পেপার
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।