আন্দোলনের মাঠে রীতিমতো ঝিমিয়ে পড়েছে যশোর বিএনপি। হরতাল, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশের মতো কর্মসূচিগুলোতে দলের কর্মী-সমর্থকদের অংশগ্রহণ দিন দিন কমছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে নামকাওয়াস্তে। এসব নিয়ে সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে তিন ধারায় বিভক্ত হওয়া সত্ত্বেও যশোরের রাজনীতির মাঠ গরম করে রেখেছে আওয়ামী লীগই।
বিরোধী দলের হরতাল-কর্মসূচি চলাকালে তিনটি পক্ষই শহরে আলাদা মিছিল করে। নিজেদের দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে সব পক্ষই তাদের মিছিলে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী জড়ো করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। আর সে কারণে সব মিছিলই বড় হয়, আর হরতালের দিনে যশোর চলে যায় আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। যশোরে বিরোধী দলের আন্দোলন চাঙ্গা না হওয়ার জন্য সাধারণ কর্মীরা তাদের জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের দায়ী করেছেন। কর্মীদের অভিযোগ, জেলা বিএনপির নেতারা স্থানীয় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করে রাজনীতি করছেন।
নিজেরা নিরাপদে থেকে নামকাওয়াস্তে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করেন তারা। হরতালের দিন সকাল হওয়ার আগেই শহরে এর সমর্থনে মিছিল করে নেতারা নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। সাংবাদিকরাও জানতে পারেন না তাদের মিছিলের কথা। হরতালের দিন জেলার যে কয়েকটি স্থানে পিকেটিং কিংবা সড়ক অবরোধের মতো ঘটনা ঘটে, তার প্রায় সবগুলোই করেন জামায়াত-শিবির কর্মীরা। আওয়ামী লীগের মতো যশোর জেলা বিএনপিতে দলাদলি না থাকলেও এখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামই 'সবকিছু'।
বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্থানীয় কর্মীরা অভিযোগ করেন, তরিকুল ইসলাম যখন যশোরে থাকেন, তখন জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ব্যাপক তৎপর দেখা যায়। কিন্তু তিনি যশোর ছাড়লেই এসব নেতাদের আর খোঁজ থাকে না। তবে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, 'সব কর্মসূচিই ঠিকমতো পালন করছি। হরতালের দিন সকাল থেকেই রাজপথে থাকি।
আওয়ামী লীগ হরতালবিরোধী মিছিল বের করলে পুলিশ কিছু সময়ের জন্য আমাদের রাজপথ থেকে সরিয়ে দেয়। মিছিল চলে গেলে আবার আমরা রাজপথে অবস্থান নিই। ' তিনি বলেন, 'যশোরে আওয়ামী লীগ আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা নিয়ে মিছিল বের করে। আমাদের কাছে কোনো অস্ত্র, বোমা নেই। সে কারণে আওয়ামী লীগের অস্ত্র, বোমার জবাব আমরা রাজনৈতিকভাবেই দেওয়ার চেষ্টা করি।
'
এদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনে যশোরের ৬টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন দলটির ৪৪ নেতা। এর মধ্যে যশোর-৩ সদর আসনের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী রেজা রাজু, সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার, বর্তমান সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান পিকুল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক কাজী নাবিল আহম্মেদ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ ও আওয়ামী লীগ নেতা মেজর (অব.) বনি রয়েছেন। তবে এ সাতজনের মধ্যে শাহীন চাকলাদার, খালেদুর রহমান টিটো ও আলী রেজা রাজুই নিয়মিত শোডাউন করে চলেছেন। দলে এ তিনজনেরই রয়েছে বিপুল কর্মী-সমর্থক। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রে লবিংয়ের পাশাপাশি এলাকায়ও পৃথকভাবে নিজেদের শক্তিমত্তা জাহির করছেন তারা।
আর সে কারণেই হরতালের দিন বিএনপি একটি মিছিল করলে আওয়ামী লীগের হরতালবিরোধী মিছিল হচ্ছে ৩-৪টি। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই যশোরের বিভিন্ন আসন থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে এখনই জেলা আওয়ামী লীগের কিছু করণীয় নেই। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা হওয়ার পর যদি নেতাদের মধ্যে মান-অভিমানের সৃষ্টি হয়, তখন জেলা আওয়ামী লীগ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় ও প্রাচীন দলে মনোনয়ন পেতে নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকাটাই স্বাভাবিক।
তা সত্ত্বেও দলীয় কর্মসূচি সফল করতে নেতা-কর্মীরা রাজপথে থাকার ব্যাপারে কখনোই পিছপা ছিলেন না, ভবিষ্যতেও তারা একসঙ্গেই রাজপথে থাকবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।