আবছায়া আলো-অন্ধকারময় নীল
বাংলা একাডেমির একটি প্রকল্পে কাজ করতাম আমি, সে তো আগেই বলেছি। প্রকল্পের সেই ঘরটি ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত-সুসজ্জিত। লম্বা ঘরের দুই পাশে খোপ খোপ করে সারিবদ্ধ ছিল বাসার ব্যবস্থা। প্রত্যেকের সামনে এক সারি ইন্টারনেট বিহীন কম্পিউটার। ইন্টারনেট ছিল কেবল দুটি পিসিতে।
এদের মধ্যে একজন ছিলেন সাইফুল ইসলাম (সহযোগী পরিচালক)। প্রকল্পে এই মানুষটির কাছ ছিল কেবল প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তারা কে কতবার বাথরুমে গেল, কার কতবার মোবাইল ফোন এলো, কে কার দিকে তাকালো, কতবার তাকালো, কে হাসলো তা নোট রাখা এবং স্কাইপে লন্ডনে অবস্থানরত প্রকল্প-প্রধান গোলাম মুরশিদ স্যার ও মোবাইল ফোনে প্রকল্পের সহকারী সম্পাদক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকারকে জানানো।
ঘরের উপরের দিকের এক কোণে ছিল ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ওটা মনিটর করতেন গোলাম মুরশিদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, প্রকল্প পরিচালক শাহিদা খাতুন ও স্বরোচিষ সরকার।
ওই প্রকল্পে কাজ করতাম দশ জন।
এর মধ্যে ছিল একজন নারী। বয়সে আমাদের প্রায় সকলেরই সিনিয়র ছিলেন তিনি। স্নেহময়ী, মমতাময়ী ওই মানুষটিকে আমরা আপু করে ডাকতাম। উনি ছিলেন আমাদের সকলের কাছে শ্রদ্ধেয়। আপুর একটি দুষ্টু-সুন্দর অথচ মেধাবী ছেলে আছে যাকে আমরা সবাই খুব স্নেহ ও ভালোবাসতাম।
এখনও বাসি।
তো কোনো একদিন, কোনো একটি শব্দ নিয়ে বিপাকে পড়ে যাই আমি। আমার ডানে-বায়ে বসা সহকর্মীদের জিজ্ঞেস করে এর কোনো সুরাহা করতে পারিনি। তাই বিপরীত দিকে বসা আপুর সাহায্য নিতে যাই। আমাকে নিজের সিট থেকে উঠে বিপরীত দিকে বসা আপুর কাছে যাওয়াটি সিসি ক্যামেরায় দেখে রাজশাহীতে বসা অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার।
সঙ্গে সঙ্গে আমার মোবাইলটি বেজে ওঠে- অপর পাশ থেকে স্বরোচিষ সরকারের কণ্ঠ- "এই ছেলে এই, তোমার সাথে মাহফুজার কী? তোমার সমস্যা কী?"
এ ধরনের কথা শোনার জন্য মোটেই আমি প্রস্তুত ছিলাম। আমি বিনীত স্বরে বললাম- "স্যার, একটা শব্দের অর্থ জানার জন্য আমি আপুর কাছে গিয়েছিলাম। "
স্বরোচিষের উত্তর- "কী শব্দ? ওওওও এই শব্দের অর্থ জানো তো কাজ করো কেন? তোমার কাছে ডিকশনারি নাই?"
আমি নির্বাক হয়ে মোবাইলে স্বরোচিষ সরকারের চিৎকার শুনতে থাকি। যাই হোক, আপুর কাছে জানতে চাওয়া শব্দের অর্থ হয়ত আমার জানা ছিল না সেসময়। তবে ভৎর্সনার নামে ওই চিৎকারের মধ্য দিয়ে স্বরোচিষ কী বোঝাতে চাইছিল তা বোঝার মতো মেধা আমার ছিল, এখনো আছে।
সরি মাহফুজা আপু, সেদিন আমার পাশাপাশি আপনাকেও আপমানের মুখে ফেলেছিলাম আমি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।