আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যাঙ

কোন কাইজ্জ্যার মধ্যে নাই , আম্লীগ, বিমম্পী বুঝিনা, রাজাকার দূরে যা, শিবির তোরা দূরে থাক । দেশে সুশাসন চাই । তবে দেশের বিচারপতি গন হতে হবে পাকি বিচার পতিদের মত ।

ব্যাঙটা বেশ কিছুদিন ধরেই দরজার নিচ গলে ঘরে ঢুকছে। আমি তাকিয়ে থাকি।

প্রথম যেদিন ঢুকেছিল সেদিন এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে আমার বুকশেলফের নিচে আশ্রয় নিয়েছিল। পরদিন থেকে সোজা জায়গা মতো চলে যায়। বাসায় ফিরে শুয়ে শুয়ে বই পড়ি আর নতুন আনুষঙ্গ হিসেবে ব্যাঙটা যুক্ত হয়েছে সেটাকেও দেখি। এগুলোকে মনে হয় কুনো ব্যাঙই বলে। খসখসে চামড়া, গাছের গুড়ির মতো।

একদিন দেখি মেঝেতে পড়ে থাকা ভাত খাচ্ছে, কত আগ্রহ করেই না খাচ্ছে। খাবার সময় গলা নড়ছে, মনে হচ্ছে চিবুচ্ছে। কিযে ভালো লাগছিল দেখতে। পরদিন থেকে রেণুর চোখ এড়িয়ে আমি কিছু ভাত শেলফের নিচে রেখে দেই। ব্যাঙটাও স্থায়ী নিবাস করে নিয়েছে।

প্রতিদিন আসতে লাগলো। আমাদের পরিবার আবার তিন জনের হয়ে গেল। তবে রেণুর অজান্তেই। ও আবার জন্তু জানোয়ার একদম দেখতে পারেনা। দেয়ালের টিকটিকি দেখলেই ঘিনঘিন করে।

ভুল করে যদি মশা মেরে ফেলে তবে হাত ধুয়েও এমন ভাবে থাকে যেন এখনো রক্ত লেগে আছে। ওকে আমার সন্ধ্যারাতের অতিথির কথা না বলাই ভালো। রেণু তার ঘরের কাজে ডুবে থাকে আর আমি মাঝে মাঝে ব্যাঙটার সাথে কথা বলি। আমার মনে হয় ও আমার কথা বোঝে। কিরে, আজকে খানা কেমন হয়েছে? আজ কিন্তু ডাল মেখে দিয়েছি।

ব্যাঙটা তাকিয়ে থাকে যেন শুনছে মনোযোগ দিয়ে। গলাও নড়ছে। কিছু বলছে নাকি? কাল সন্ধায় গিয়েছিলাম এক বন্ধুর বাড়ি। এসে দেখি ব্যাঙটা ঘুরছে এদিক ওদিক। আহারে! আজ ভাত দেবার কেউ ছিলনা! আমি রান্নাঘর থেকে কিছু ভাত এনে দিলাম।

কি তৃপ্তি নিয়েই না খেল। কলেজ রোডে একটা দোতলা বাড়ির নিচতলায় আমি আর রেণু সংসার পেতেছি বছর চারেক হল। আমাদের প্রথম মেয়েটা মারা গেছে অল্প কিছুদিন হল। মায়াকাড়া চেহারা ছিল, রেণুর মতো। ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকতো।

কাতুকুতু দিলে খলবলিয়ে হাসতো। নিউমোনিয়া হয়েছিল। দোতলার হোসেন সাহেবের কোলেই থাকতো সারাদিন। প্রেম করে বিয়ে করেছি শুনে লোকটা প্রথম দিকে আমাদের খুব একটা ভালো চোখে দেখতেন না। বাড়িওয়ালার কাছে নাকি একবার আমাদের বের করে দেয়ার কথাও বলেছিলেন।

এখন অবশ্য মেয়েটার কারনে রেণুর কাছে তিনি পিতৃতুল্য হয়ে উঠেছেন অল্প দিনেই। তবুও ভদ্রলোককে কেন জানি আর আপন ভাবতে পারিনি। রেণু হোসেন সাহেবকে দাওয়াত করে খাওয়াতো, গত ঈদে একটা পাঞ্জাবীও দিয়েছিলো। উনার ছোট মেয়ে মেঘলা ওকে ভাবি বলে ডাকে। আমি বুঝি, একা একটা মেয়ে, বাবা-মাকে ছেড়ে থাকে তাই এখানে এদের মাঝেই মিশে যেতে চাইছে।

আমার এসব ভালো লাগেনা। বলা যায় আমি লুকিয়েই থাকি। দোতলায় কখনো যাইনা, ছাদেও না। হোসেন সাহেবের সাথেও ছ মাসে ন মাসে একবার দেখা হয়। সেদিন বাজারে দেখা হয়ে গেল, বললেন রেণু মেয়েটা খুব লক্ষ্মী।

আমার স্ত্রীও এরকম ছিলেন, সবাইকে আপন করে ফেলতেন। তা বাবা পালিয়ে বিয়ে করলে কেন? বাবা-মার সন্তানের উপর হক আছে জানতো। বাসায় ফেরার সারাটা পথ তিনি অনর্গল কথাই বলে গেলেন আমি হু হাঁ বলে উত্তর দেই। ইচ্ছে করে যে দিয়েছি তাও না। কিছু জিগ্যেস করার বা আলাপ করার মতো খুঁজে পাইনি।

রেণুর চোখ এড়ানো গেলনা। ব্যাঙটাকে দেখে এই আপদটা ঘরে ঢুকলো কি করে বলে কি হৈচৈ যে করল। ওকে হৈচৈ করতে নিষেধ করলাম, কে শোনে কার কথা। মেয়েটা মারা যাবার পর থেকে রেণু সব কিছু নিয়েই একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে। রেণুকে বুঝিয়ে শান্ত করলাম।

আদৌ কিছু বুঝেছে কিনা কে জানে। গতকাল মেঘলা কলেজে গিয়ে আর ফেরেনি। হোসেন সাহেব কোথাও খুঁজতে বাকি রাখেননি। রাত ৮ টার দিকে খবর পাওয়া গেল। মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে।

এতোটুকুন একটা মেয়ে অথচ তিনি ভাবতেও পারেননি এই মেয়ে এই কাজ করতে পারে। হঠাৎ তার অতিরিক্ত ঘাম হতে লাগলো। দরজার চৌকাঠ ধরতে গিয়েও পারেননি, পড়ে গেলেন। রেণুর সামনেই মারা গেলেন। ওর চিৎকারেই আশেপাশের মানুষ ঘটনা জানলো।

রেণুকে আমি এতোটা উন্মাদের মতো আচরণ করতে আগে দেখিনি, বাবা-মাকে ছেড়ে আসার পরেও না। হোসেন সাহেবের জানাজা পড়া হলনা। আমার কেন জানি হয়ে ওঠেনা। ব্যাঙটার সাথে কথা বলছিলাম— -কিরে তোর খবর কী? হোসেন সাহেব মারা গেছেন জানিস? আজকেতো মনে হয় রাতে কিছু রান্না হবেনা এ বাড়িতে। তুই খাবি কি? পরদিন থেকে দেখি আমার দেখাদেখি রেণুও ঝোল দিয়ে মেখে ভাত রাখছে মেঝের এক কোণায় ।

মূল লেখক : সাদামাটা । সূত্র : ইন্টারনেট ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।