বিবেকবর্জিত ও নীতি-নৈতিকতাহীন রাজনীতির সুবাদে দূর্নীতি আজ সর্বগ্রাসী রুপ ধারন করেছে । যেই সকল রাজনীতিবিদদের জনগন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠায় জনগনের অধিকার আদায় ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে জনগনের পক্ষে কথা বলার জন্য । সেই সকল জনপ্রতিনিধিরাই জনগনকে সম্পূর্নরুপে অধিকার বঞ্চিত করে নিজেদের আমৃত্যু ভোগ-বিলাস নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে জনগনের প্রদানকৃত সরকারীকোষাগারের অর্থ জনগনের কল্যানে ব্যয় দেখিয়ে লুটপাট করে নেয় । আর এই সকল কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সরকারের প্রতিটি সেক্টরে দলীয় অযোগ্য লোকদের পদায়িত করে । ফলে জনগনের সেবাপ্রদানকারী প্রতিটি সরকারী প্রতিষ্ঠান আজ দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে ।
একদিকে জনগন তার নিত্য প্রয়োজনীয় ক্রয়কৃত প্রতিটি জিনিসের মাধ্যমে সরকারকে টেক্স প্রদান করে থাকে, তদুপরি সরকারী প্রতিটি সেবা গ্রহনের সময় উৎকোচ প্রদান করতে বাধ্য হয়,যেমন-হাসপাতাল,আদালত,পুলিশ,বিদ্যুৎ,গ্যাস,পানি,রাজউক,সিটিকর্পোরেশন,পৌরসভা,ইউনিয়নপরিষদ ইত্যাদি ছাড়াও এমন কোন খাত নেই যেখানে উৎকোচ ছাড়া কাজ করা যায় । জনগনকে সরকারের সেবা পেতে হলে সরকারী লোকদেরকে উৎকোচ দেওয়া যেন সরকারী নিয়মে পরিনত হয়েছে । এছাড়া জনগনের সামনে আর কোনই পথ খোলা নেই । কার কাছে জনগন নালিশ জানাবে ? যাদের কাছে নালিশ জানানোর কথা, তারাই এই সকল অনিয়মের সুফলভোগকারী অর্থ্যাৎ যেই খেত বাচাঁনোর জন্য বেড়া দিলাম, সেই বেড়ায়ই যদি খেত খায় তবে সেই খেতের যেই অবস্থা আমাদের জনগনের হয়েছে ঠিক সেই একই অবস্থা । উপরোন্ত এই সকল জনপ্রতিনিধিরাই চাঁদাবাজি,মাদকব্যবসা,অন্যের জমিদখল ইত্যাদির মতো ঘৃন্য কাজে পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে অবৈধ অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে ।
এখন দূর্নীতির এই সর্বগ্রাসী আক্রমন থেকে বাচঁতে হলে আমাদের জনগনকেই কিছু একটা করতে হবে । সরকার বলুন আর বিরোধীদল বলুন, কেউই দূর্নীতি প্রতিরোধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ কখনও নিবে না, এটা আমি বেশ জোর দিয়েই বলতে পারি, কারন তাদের রাজনীতির একটাই উদ্দেশ্য-কিভাবে জনগনকে ধোকা দিয়ে তাদের রক্ত চুষে নিজেদের তথা তাদের পংগপালদের আখের গোছানো যায় । আল্লাহর পরে জনগনই জনগনের একমাত্র বন্ধু, তা আরও একবার সাভার ট্রাজেডিতে প্রমানিত হলো । যদি জনগন রানা ভবন ধসের পর দূর্গতদের সাহায্যার্থে জাপাইয়া না পড়ত, তাহলে পরিস্থিতি যে কি পর্যায়ে গিয়ে পৌছত, তা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না । দেশের প্রতিটি দূর্যোগের সময় জনগনের নি:স্বার্থভাবে অংশগ্রহনের ফলেই কিন্ত আমরা প্রতিটি দূর্যোগকে সফলতার সাথে মোকাবেলা করতে সক্ষম হই ।
এই চিরসত্য বাস্তবতাটি আমাদের রাজনীতিবিদেরা কখনও উপলব্ধি করতে পারে নাই । তারা সব সময়ই দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগনকে দূরে সরিয়ে রাখে, যেন জনগন শুধু হালের বলদ আর কি ! এরা শুধু চাষ-বাস করবে, আর রাজনীতিবিদদের মুখে অন্ন তুলে দিবে । তাই আমি মনে করি যে, যেহেতু জনগনকে ছাড়া দেশের কোন অর্জনই সম্ভব নয়, তাই দূর্নীতি ও অপরাজনীতি প্রতিরোধে জনগনকেই সর্বোতভাবে এগিয়ে আসতে হবে । এইক্ষেত্রে জনগনের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সবচেয়ে বেশী জরুরী । যদি অন্তত দূর্নীতির এই একটি ইস্যুতে আমরা জনগন নির্বাচনকালীন সময়ের মতো মন থেকে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তবে অবশ্যই দূর্নীতিবাজ ও অপরাজনীতিবিদদের প্রতিরোধ করা খুব একটা কঠিন কাজ হবে না আমাদের জন্য ।
এইলক্ষ্যে আমি একটি অহিংস অথচ অভিনব কার্যকরী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি । এই আন্দোলনের রুপরেখাটি হবে নিন্মরুপ:
আন্দোলনের প্রথম ধাপ হিসাবে আমরা আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় বড় দূর্নীতির ও রাজনীতির অনৈতিকতার যেসকল ঘটনাগুলি ঘটেছে, যেমন-শেয়ারবাজার দূর্নীতি, পদ্মাসেতুর দূর্নীতি, ডেসটিনির দূর্নীতি,হলমার্ক দূর্নীতি,তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সরকারের অনৈতিক অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে যারা দায়ী তাদের উদ্দেশ্যে কারো নাম উল্লেখ ছাড়া বিষয়গুলি উল্লেখপূর্বক প্লেকার্ড লিখে একটি নির্দিষ্ট স্থানে সেইগুলি স্থাপন করে ঐসকল প্লেকার্ডগুলিতে আমরা সকল জনগন থুথু নিক্ষেপের মাধ্যমে ঐসকল দূর্নীতিবাজ ও অপরাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে ঘৃনা প্রকাশ করব । আমার বিশ্বাস এই অহিংস অথচ অভিনব কর্মসূচীতে জনগনের ব্যাপক সারা পাওয়া যাবে । এই কর্মসূচীর প্রতি জনগনের ব্যাপক অংশগ্রহনের পরও যদি অবস্থার কোন উন্নতি পরিলক্ষ্যিত না হয়, তখন দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহন করা হবে । দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনের কর্মসূচীর রুপরেখাটি হবে নিন্মরুপ:
আমাদের জনগনের দৃষ্টিতে উপরোক্ত সেক্টর সংশ্লিষ্ট যেই সকল ব্যক্তিরা দূর্নীতিবাজ ও অপরাজনীতিবিদ হিসাবে চিহ্নিত হবে, তাদের ছবি ও নাম উল্লেখপূর্বক প্লেকার্ড একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করে, উপরের নিয়মানুযায়ী থুথু নিক্ষেপের মাধ্যমে তাদের প্রতি ঘৃনা প্রকাশ করা হবে ।
তৃতীয় ধাপের আন্দোলনের রুপরেখাটি হবে নিন্মরুপ:
ছবি ও নাম উল্লেখপূর্বক প্লেকার্ডে থুথু নিক্ষেপের পরেও যদি অবস্থার কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত না হয়, তবে ঐ সকল ছবি ও নাম উল্লেখপূর্বক প্লেকার্ডগুলির উপর মূত্র ত্যাগের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।
চতুর্থধাপের আন্দোলনের রুপরেখাটি হবে নিন্মরুপ:
ছবি ও নাম উল্লেখপূর্বক প্লেকার্ডে মূত্রত্যাগের পরেও যদি অবস্থার কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত না হয়, তবে ঐ সকল ছবি ও নাম উল্লেখপূর্বক প্লেকার্ডগুলির উপর বিষ্টা ফেলার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস,আমাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের বেশী আন্দোলনের প্রয়োজন হবে না । আমাদের দেশের দূর্নীতিবাজেরা ও অপরাজনীতিবিদেরা লজ্জাহীন হলেও এতোটা লজ্জাহীন নয় যাতে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত যাওয়া লাগবে ।
কর্মসূচী বাস্তবায়নস্থল:কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হতে পারে সংসদভবন এলাকার চতুরপার্শ্বের ফুটপাত ও ফুটপাত সংলগ্ন নরম ঘাস যেখানে প্লেকার্ড স্থাপন করা সহজ হবে ।
এই আন্দোলনের রুপরেখাটি হরতাল, অবরোধসহ সকল ধ্বংসাত্বক রাজনৈতিক কর্মসূচীর বিকল্প হিসাবেও একাধারে কার্যকরী ও অন্যদিকে সকলের কাছে জনপ্রিয় হতে পারে, কারন এই ধরনের কর্মসূচীর কারনে যেমন মানুষকে দূর্ভোগ পোহাতে হবে না, তেমনি অর্থনীতিরও কোন ক্ষতি হবে না ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।