আমি পরিবর্তন চাই...............! সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীট, দেশের প্রথম ও বৃহত্তম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পুর্বে এটি ছিল সিলেটবাসী তথা দেশের উত্তর-পুর্বাঞ্চলীয় মানুষ গুলোর প্রানের দাবি। আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারী তথা সকল শ্রেনীর মানুষের একটাই মনোবাসনা ছিল আর তা হল বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্তে ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান জানাতে ছিল না কোন মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য। তার পিছনে ছিল একযুগেরও বেশি সময়ের নোংড়া ইতিহাস আর প্রতিক্রিয়াশীলদের রুগ্ন তাবা। সকল প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫ ব্যাচের ওদ্ধ্যমী ছাত্র-ছাত্রীরা ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ১৯ বছরের ব্যার্থতা মোচনের সুক্ষ্ম চেষ্টা করেছিল “চেতনা-৭১” নামের একটা অস্থায়ী কাঠ আর স্টীলের ভাস্কর্য তৈরী করে।
যা পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অর্থায়নে পুর্ণাঙ্গ ভাস্কর্যে রুপ দেয়া হয়। যা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শ্রেণীর মানুষের(কিছু নোংড়া প্রতিক্রিয়াশীল কুলাঙ্গার ব্যাতীত) আত্ম-অহঙ্কারে রুপ নেয়। সামাজিক যোগাযোগ সাইট ও ব্লগ গুলোতে এই ভাস্কর্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা যায় ব্যাপক উৎসাহ। যা হয়তবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাহস জুগিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভাস্কর্য তৈরী করতে। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারীতে যেদিন বিশ্ববিদ্যালয় একটা কলঙ্কজনক অধ্যায় থেকে বেরিয়ে এসেছিল, মানে দীর্ঘ্য একুশ বছর পর প্রথমবারের মত শিবির মুক্ত হয়েছিল সেই রাতেও নাকি চেতনা-৭১ নামের এই ভাস্কর্যটা ভেঙ্গে ফেলার একটা ব্যার্থ চেষ্টা শিবির করেছিল যা তৎক্ষণাৎ আমরা যারা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলাম তারা শুনেছিলাম।
কিন্তু “চেতনা-৭১” সেদিনের মত প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল। কতদিন বাঁচতে পারবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। যাই হোক, সব কিছু পিছনে ফেলে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আপ্রান প্রচেষ্টায় অবশেষে যখন কাঙ্গিত ভাস্কর্য আলোর মুখ দেখার স্বপ্ন দেখা দিয়েছে ঠিক তখনি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী আবার ভয়ংকর রুপ ধারন করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তারা এই ভাস্কর্য নিয়ে নানা রকম গুজব রটানোর পায়তারা করতেছে। তাদের ভাষ্যমতে “এটা ভাস্কর্য নয় এটা মুর্তি, এবং একসময় একে পূজা করা হবে”।
প্রগতিশীল এক সাংবাদিকের সাথে এটা ভাস্কর্য না মুর্তি তা নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর একটা তর্কও হয়ে যায়। প্রগতিশীল-মধ্যপন্তী-প্রতিক্রিয়াশীল সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে আমার একটা প্রশ্ন, আপনারা কি কেউ কখনো দেখেছেন বা শোনেছেন যে পৃথিবীর কোথাও কোন ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে বা কেউ কোন ভাস্কর্যকে পূজা দিচ্ছে?
ধর্মীয় অনুসারে সৃষ্টিকর্তাকে সকল মানুষই পূজা দেই এবং আরাধনা করি। কিন্তু কারো প্রতি শ্রদ্ধাপ্রদর্শন করলে কি আমরা তাকে পূজা করি? আমরা কি আমাদের বাবা-মাকে পূজা করি কিন্তু আমাদের সবাইতো নিজেদের বাবা-মাকে পৃথিবীর সবছাইতে বেশী শ্রদ্ধা করি এবং ভালবাসি।
প্রতিক্রিয়াশীল কখনোই ভাল কোন গুন না। যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে চায় তারাই প্রতিক্রিয়াশীল।
তারা ধার্মিক না তারা ভন্ড ধর্ম ব্যবসায়ী।
ধর্ম কখনই প্রতিক্রিয়াশীল না, ধর্ম সবসময়ই প্রগতিশীল। ধর্ম সমাজের আলোকবর্তিকা।
আমাদের সমাজের কিছু প্রতিক্রিয়াশীল লোক সমাজের সহজ-সরল মানুষ গুলোকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তাদেরকে বিপথে নিয়ে যায় এবং সমাজে বিভিন্ন অপকর্মের জন্মদেয়।
যা এখন হচ্ছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মিতব্য মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যকে নিয়ে।
কিন্তু আমার বিশ্বাস তারা সফল হতে পারবে না। কারন বাংলাদেশের মানুষ এখন আর এত বোকা নয়। তারা প্রতিক্রিয়াশীলদের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা প্রত্যাখান করবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অন্তরে লালন করবেই করবে।
আমার প্রিয় ক্যাম্পাসে(শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য হবেই হবে।
আর প্রতিক্রিয়াশীলদের ঐ সব ধ্বংসাত্মক মানসিকতার পরিবর্তন কি আমরা চাইতে পারি না?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।