নিজেকে নিয়ে কিছু একটা লেখার চেষ্টা, এখোনো করে যাচ্ছি . . .
আমার ঘরের বারান্দায় একটা টবে সবুজ গাছ রাখা আছে, সেই গাছে খুব গুণে গুণে সাতটা পাতা, পাতার রংগুলো একদম গাড়ো সবুজ। পাতার গায়ে শিরা উপশিরাগুলো এতো আকিঁবুকি, যেন দেখে মনে হবে পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট ছোট নদী আর সমূদ্রের দাগ ওগুলো। একটা পাতা খানিকটা ধূসর আর আরেকটা প্রায় সাদা মত দেখতে, আমি খুব অবাক হই গাছও কি এমন ভিন্ন রুপী হতে পারে ? কিন্তু আমার যতটা অবাক হওয়া তার চাইতেও যে এত বিষ্ময় রয়েছে গাছটাতে তা যদি সেদিন না জানতাম তাহলে পৃথিবীর ওই অদ্ভূত শক্তি সম্পর্কে প্রায় অজানাই থাকতো।
এই গাছ'টা কিন্তু আমার না, আমার প্রিয় মানুষের; সে যখন চলে যায় আমাকে গাছটা দিয়ে যায়।
সেদিন ছুটির দিন ছিল।
সকালের দিকে বারান্দায় বসা ছিলাম, হঠাতই কি এক আনমনে সেই গাছটার পাতায় হাত দেবার কিছু সময় বাদেই মা ঘর থেকে চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন, আমি তো হতবাক - যেই না গাছের পাতাটায় হাত দিলাম আর মা অমন করে চিৎকার করছেন কেন ? তড়িঘড়ি করে ঘরে ঢুকতেই বুঝতে পারলাম নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে, মা পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছেন টেলিভিশনের স্ক্রীনে। ব্রেকিং নিউজ - "চীনে ভয়াবহ ভূমিকম্প"
বিষয়টাকে সেদিন সত্যি সত্যিই অবহেলা করেছিলাম, ভেবেছিলাম এ আর কি ! এমনটা তো হয়েই আসছে - নতুন তো কিছু নয়। কিন্তু তার কিছুদিন পর যে ব্যপারটা আবার ঘটলো তখন কিন্তু আর অবহেলা করবার মত কিছু থাকলোনা।
সন্ধ্যার একটু আগে মানে বিকেলই বলা যায়, বাড়ীতে ফিরে কি মনে হল একটা গ্লাসে কিছু পানি নিয়ে গাছটার পাশে গিয়ে দাড়ালাম, একটা পাতাকে বেশ এলোমেলো লাগছিল, তাই গ্লাসের পুরো পানিটাই ওই পাতার উপর ঢেলে দিলাম, বিষয়টা ঠিক কি বেঠিক সে বিবেচনা না করেই ঘরে আসার কিছুক্ষণ পরই আবার সেই আগের মতন মায়ের চিৎকার, এবার একই দৃশ্য; টিভিতে ব্রেকিং নিউজ - "ভারতে তুমুল বন্যা" আমি দৌড়ে গাছটার কাছে গিয়ে দেখি পাতার পানি তখনও শুকায়নি, ফোঁটা ফোঁটা করে গড়িয়ে পড়ছে।
সেদিন রাতে ঘুম হলনা, ঘটনাটা কি ? অনেক প্রশ্ন গাছটাকে ঘিরে কিন্তু কোন উত্তর মিলছেনা ! একটা অস্থিরতা, মাঝে মাঝে খানিকটা ভয়ও করছে।
পরদিন সকালে আকাশ জুড়ে কালো মেঘ আর খানিকটা দমকা হাওয়াও বইছিল, বারান্দায় গিয়ে আরও একটা অদ্ভুত ব্যপারের সম্মুখীন হলাম, বাইরে এতো জোড়ে বাতাস বইছে যে বারান্দায় শুকোতে দেয়া কাপড়গুলো সামলানোও মুশকিল হচ্ছে অথচ গাছের একটা পাতাও নড়ছেনা, আমার প্রায় দম বন্ধ হবার মত অবস্থা, হার্টবিট দমে দমে বাড়ছে । তাহলে কি সেদিন পাতায় পানি দেয়ায় বন্যা ? বা পাতা ধরতেই ভূমিকম্প ? হঠাতই আরো একটা প্রশ্ন - এই গাছটায় শুধু ৭টা পাতা কেন ? আচ্ছা পৃথিবীতে তো ৭ টা মহাদেশ ! তাই না ? না না ! আমি আর কিছুই ভাবতে পারছিলাম না, কেমন যেন অবশ হয়ে যাবার মত চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসছিল !
পুরো বিষয়টা একদিকে যেমন আমার কাছে বিষ্ময়কর তেমনি ভয়ংকরও বটে ! যদি সত্যিই গাছটার সাথে পৃথিবীর কোন সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে তো ....... এ কথা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ খেয়াল করলাম গাছেটাকে সরানো হয়না বলে একটা দিক সবসময় অন্য পাশে থাকে, যে পাশটাতে সাধারণত সূর্যের আলো পড়েনা। আরো মজা হল সেই পাশের গাছের পাতাটা বরফের মত পুরো সাদা রং-এর। আমি টবটাকে খুব সাবধানে ঘুরিয়ে সাদা পাতাটাকে সূর্যের আলোর দিকে রেখে দিলাম।
যখন অফিসে পৌছেছি, দেখতে পেলাম - অফিসের প্রায় সবাই হুমড়ি খাবার মত টেলিভিশনের পর্দায় কি যেন দেখছে, তা দেখে এগিয়ে যেতেই গিয়ে দেখি -
ব্রেকিং নিউজ "বৈশ্বিক উষ্ঞতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আটলান্টিকের বরফ আশংকাজনক হারে গলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পানি বৃদ্ধির উদ্বেগ"
সেদিনের পর থেকে আমার আর বুঝতে বাকী থাকে না, অসম্ভব শক্তির সেই গাছটিই একটা পৃথিবী।
গাছের সাতটি পাতা ৭ টি মহাদেশ।
মনে পড়ে, পুরনো বেশ কিছুদিন আগের কথা, যখন প্রিয় মানুষটি চলে যাবে তার ঠিক কিছুদিন আগে। সেদিন প্রিয় মানুষটিকে বলেছিলাম তুমি আমাকে সর্বোচ্চ কি দিতে পারো, সে বলেছিলো "ভালবাসা" আমি খুব হেসেছিলাম, আমি আবার জিজ্ঞেস করেছিলাম 'তারপর, আর কি দিতে পারো', সে বলেছিল "পুরো পৃথিবী" দিতে পারি। একথা শুনে আমার বিষম খাবার মত অবস্থা ! "পুরো পৃথিবী ! কিভাবে ?" প্রিয় মানুষটি আর কিচ্ছু বলেনি।
সেদিন প্রথম বুঝতে পারি, আমার প্রিয় মানুষটি যখন চলে যায়, সে সত্যি সত্যিই আমাকে একটা পুরো পৃথিবী দিয়ে যায়, আমি এখন থেকে খুব যত্ন নেই সেই পৃথিবীটার, সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখি যেন এতটুকুন অবহেলা না হয় !
আমার পাওয়া সেই পৃথিবীটাকে আমি বড্ড বেশী ভালবাসি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।