আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি একেএম ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হালিম ও উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরসহ ২১ আসামি জেলহাজতে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি একেএম ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হালিম ও উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরসহ ২১ আসামিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সাইফুর রহমান সিদ্দিকী তাদের জামিন না মঞ্জুর করে সবাইকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ মামলার অভিযোগপত্র ভূক্ত ২৯ আসামির ২১ জন আজ সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করেন। বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) প্রবীণ আইনজীবী জসীম উদ্দিন খান এবং আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী গোলাম সারওয়ার খোকন। বাদী পক্ষের আইনজীবী জসীম উদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, "জামিনের আবেদনকারী আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

তাদের বাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্রও পাওয়া গিয়েছিলো। তারা নির্মমভাবে ইকবাল আজাদকে হত্যা করেছে। যার কারণে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেননি। " অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী গোলাম সারওয়ার খোকন বাংলানিউজকে বলেন, "আমরা আসামিদের জামিনের জন্য আবেদন করি। বিজ্ঞ আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করেন।

তবে আদালত থেকে আমরা ন্যায় বিচার পাব বলে আশা করি। আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। " প্রসঙ্গত, গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি গঠনের জের ধরে খুন হন ইকবাল আজাদ। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আজাদ বাদী হয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

দুই মাস পর গত ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ আরও ৭ জনের নাম অর্ন্তভূক্ত করে আদালতে অভিযোগ পত্র দেন। (বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম) সরাইলে সুষ্ঠধারার পরিচ্ছন্ন রাজনীতি চালু করতে চেয়েছিলেন এ.কে.এম ইকবাল আজাদ। টেন্ডারবাজ,ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী ও দখলবাজদের বিরুদ্ধে বরাবরই ছিল তার অবস’ান। তিনি অন্যায়-অবিচারকে প্রশ্রয় দিতেননা। তাই অল্পদিনেই সরাইলবাসীর প্রিয় নেতায় পরিণত হন তিনি।

আচার-আচরন ও ব্যবহার দিয়ে লোকজনকে খুব সহজেই আপন করে নিতে পারতেন তিনি। এজন্য অল্পবয়সেই ঘাতকের টার্গেটে পরিণত হন তিনি। দলে তার প্রতিপক্ষরা তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে। সরাইলের সর্বস্তরের মানুষের মুখে এখন তার কথা। ইকবালের প্রসঙ্গ আসলেই তারা কেঁদে ফেলেন।

১৯৯০ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন ইকবাল আজাদ। সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরই তিনি তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সংগঠিত করতে মনোনিবেশ করেন। ০৯টি ইউনিয়নেই শুরু হয় তার পদচারনা। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে সরাইলে একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাড় হয় আওয়ামীলীগ। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই দল শক্তিশালী হয়।

ফলে তিনি সরাইলবাসীর প্রিয় নেতায় পরিণত হন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইকবাল আজাদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল) আসনে প্রার্থী হন। এরপরই তিনি দলের তার বিরুদ্ধপক্ষের কাছে বিরাগভাজন হন। তাকে দমাবার চেষ্টা তখন থেকেই শুরু করে প্রতিপক্ষের লোকেরা। এতে তারা অনেকটা সফলও হন।

রাজনৈতিকভাবে ইকবাল আজাদকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে পরিকল্পনা মাফিক ২০০৩ সালের সম্মেলনে সাধারন সম্পাদকের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দেওয়া হয় কমগুরুত্বপূর্ন সিনিয়র-সহ-সভাপতির পদ। কিন’ দমে যাওয়ার পাত্র নন ইকবাল আজাদ। নতুন উদ্যোমে আবারো শুরু করেন রাজনীতি। পুরো নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়ান তিনি।

তার অমায়িক ব্যবহারে জনগনের হৃদয়ে স’ান করে নেন তিনি। দল সংগঠিত হয় তার নেতৃত্বে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে তিনি প্রার্থী হন। কিন’ মহাজোটের শরীকদল জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হন তিনি। ইকবাল আজাদের জনপ্রিয়তার উপর ভর করে ১৯৭৩ সালের পর এই আসনটিতে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থী অ্যাডভেকেট জিয়াউল হক মৃধা জয়লাভ করে চারদলীয় ঐক্যজোটের শরীকদল ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি মুফতী ফজলুল হক আমিনীকে পরাজিত করে।

পরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১ বছর আগ থেকেই মাঠে নামেন ইকবাল আজাদ। দলকে গুছাতে চেষ্টা করতে থাকেন। দলের ক্ষমতাসীনদের কাছে নানাভাবে নির্যাতিত ও অত্যাচারের শিকার লোকেরা তাকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকেন। এতেই মাথায় বাজ পড়ে ইকবালের বিরুদ্ধপক্ষের।

তারা তাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এতে তারা সফলও হন। গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ইকবাল আজাদ শারদীয় দূর্গাপূজা পরিদর্শনের জন্য গাড়ি নিয়ে সরাইল বাজারে প্রবেশকালে গাড়িটি টেম্পু স্ট্যান্ডের কাছে পৌছলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ আলী তাকে গাড়ি থেকে নামার সিগন্যাল দেয়। ইকবাল আজাদ গাড়ি থেকে নামা মাত্র মাহফুজ আলী, তার শ্বশুর ইসমত আলী, শ্যালক বাবু, মোকাররম হোসেন সোহেল ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল আসাদ সিজার তার উপর হামলা করে। হামলাকারীরা তাকে উপর্যপুরি কুপিয়ে ও বুকে বল্লম দিয়ে আঘাত করে।

ইকবাল আজাদকে রক্ষা করতে গিয়ে গাড়িতে থাকা তার ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি গিয়াসউদ্দিন সানাউল্লাহ সেলু সহ ৫ জন আহত হয়। আশংকাজনক অবস’ায় তাকে জেলা সদর হাসপাতালে আনা হলে রাত সাড়ে ৭টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ২২জনকে আসামী করে মামলা করেন ইকবাল আজাদের ভাই জাহাঙ্গীর আজাদ। পুলিশ এ পর্যন- পাঁচজনেক গ্রেপ্তার করে। এ ব্যাপারে প্রয়াতের ছোট ভাই প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আজাদ বলেন, টি.আর, কাবিখার লুটপাট ও টেন্ডারবাজীর প্রতিবাদ করতেন আমার ভাই ইকবাল আজাদ।

তিনি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ছিলেন, তাই তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। জাহাঙ্গীর আজাদ আরো বলেন, তিনি চেয়েছিলেন সরাইলে সুষ্ঠুধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত ইউক। তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনটি শক্তভিত্তির উপর দাঁড় হউক। অমায়িক ব্যবহারে আমার ভাই সরাইলবাসীর প্রিয় নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। জাহাঙ্গীর আজাদ দাবি করেন, ঘটনার আগের রাতে (২০ অক্টোবর) অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতারা থানায় যান ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিতে।

তখনই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তিনি বলেন হত্যা ঘটনায় তৎকালীন ওসি সরাসরি জড়িত। তাই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস’তি নিচ্ছি। এ ব্যাপারে উপজেলা যুবলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির প্রথম যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন’ পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনে বলেন, আগাম ঘোষণা দিয়ে ইকবাল আজাদকে খুন করা হয়। খুনীরা সেদিন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দিনভর উপজেলা সদরে মহড়াও দেয়।

বিষয়টি জানানোর পরও ওসি কোনো ব্যবস’া নেননি। তিনি বলেন, এটি পরিকল্পিত খুন। দলীয় সভাপতি আব্দুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুরের নির্দেশে মাহফুজ আলী, তার শ্বশুর ও শ্যালকসহ প্রতিপক্ষ তাকে খুন করেছে। জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু বলেন, ইকবাল আজাদ সরাইলে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করতেন। নিরীহ মানুষকে ভালোবাসতেন।

রাজনৈতিকভাবে তাকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েই তাকে খুন করা হয়েছে। জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মেজর (অবঃ) জহিরুল হক খান বীর প্রতীক অভ্যন্তরীন কোন্দলের কথা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। আমরা এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই। সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স’ায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, এটি একটি নিন্দনীয় ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের অবশ্যই বিচার হবে।

এদিকে অপর গ্রুপের নেতা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি হত্যাকান্ডের সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, ইকবাল আজাদ সরাইলের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তার নির্মম হত্যাকান্ডে আমি শোকাহত। আমি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করি। এদিকে গত ২ নভেম্বর বিকেলে সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া পৈত্রিক বাড়ীতে ইকবাল আজাদ স্মরনে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন প্রবীণ ধর্মীয় নেতা মাওলানা মোহাম্মদ আলী।

এ সময় উপসি’ত ছিলেন র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এম.পি, পৌর চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি পৌর মেয়র মোঃ হেলাল উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মেজর (অবঃ) জহিরুল হক খান বীর প্রতিক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তম কুমার চক্রবর্তী, ঢাকাস’ সরাইল উপজেলা সমিতির সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান, ওয়াহিদ রহমান, মোঃ শাজাহান, জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হুসাইন আহমদ তাফসির উপসি’ত ছিলেন। মিলাদ মাহফিলের পর প্রয়াত নেতা ইকবাল আজাদের সহধর্মীনি শিউলী আজাদ বলেন, গত বুধবার দুই সন্তান ও আহত দেবরকে সাথে নিয়ে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেছিলাম। তিনি ইকবালকে খুব ভালবাসতেন। প্রশংসা করেছেন তার সততার। ইকবালের নৃশংশ হত্যাকান্ডে তিনি ব্যথিত হয়েছেন।

খুনীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে আমাদেরকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি আমাদেরকে অনেক সময় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কথায় ও আশ্বাসে বুঝতে পেরেছি আমরা ইকবাল হত্যার বিচার পাবই। এ সময় তার পাশে ছিলেন ইকবালের একমাত্র ছেলে ইফাজ ইকবাল, কন্যা শাজরিয়া ইকবাল ও ছোট ভাই প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আজাদ।

(digitalbrahmanbaria.com) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।