আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তসলিমা নাসরিন ও নারীবাদ- (চতুর্থ পর্ব)

মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দেবার দুরন্ত প্রয়াস।

নারীবাদ নিয়ে তৃতীয় পর্বে তসলিমা নাসরিনের প্রসঙ্গ এনেছি তসলিমার জন্য নয়, ‘তসলিমাদের’ জন্য। তারা আমাদেরই কেউ।

আমাদের প্রতি তাদের যেমন দায়িত্ব আছে, তাদের প্রতিও আমাদের দায়িত্ব কম নয়। তাই ‘নারী প্রসঙ্গে’ আমার কিছু অনুসন্ধান, অভিজ্ঞতা ও মতামত তুলে ধরলাম। এতে তসলিমার কোনো ‘খোরাক’ আছে কিনা জানি না। তার তো একটা দু’টো নয়, অনেক সমস্যা ও অনেক চাহিদা। অনেকে মনে করেন তার দেশে ফিরতে হুজুররাই প্রধান বাধা।

কিন্তু এই সাক্ষাৎকারে (সাক্ষাৎকারটি লেখার শেষে দেয়া আছে। সাথে মিনার মাহমুদের দুটি মন্তব্যও) তিনি বলেছেন ‘নষ্ট’ সাহিত্যিক, সাংবাদিক লেখকরাও আজ তার প্রতিপক্ষ। যাহোক, এই ‘নষ্টামীর’ পেছনে দায়ি কি শুধু তারাই? এক হাতে তালি বাজে? আমি মনে করি ধর্ম সম্পর্কে তার পূর্বের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করলে হুজুররা আর তার প্রতিপক্ষ থাকবেন না। কিন্তু যত সমস্যা তার গভীর রাতের বিছানার ওই ‘একান্ত’ ব্যক্তিরাই। আর এটি তিনি করেছেন সম্ভবত লেখার অন্যকোনো বিষয় খুঁজে না পাওয়ায়।

ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভ-হতাশার কথা তো তিনি নিজেই বললেন। এদিকে প্রকাশকদের চাপ, অগ্রীম রয়্যালটি নিয়ে রেখেছেন, আবার তার অস্তিত্বও জানান দেয়া দরকার যে, ‘তসলিমা ফুরিয়ে যায়নি’। আমার তাকে কোনো বিচারেই লেখক মনে হয় না। দ্বিতীয়ত, ‘সাহিত্যের’ নামে, ‘আত্মজীবনীর’ নামে কীসব আজেবাজে লিখছেন? নষ্টামীগুলো না হয় বাদই দিলাম। ‘নির্বাসনে’ কোথায় কাপড় ছিড়েছে, পান থেকে চুন খসেছে, কোথায় চা খেয়েছেন, রাত কয়টায় ঘুমিয়েছেন জাতীয়... আর একই কথা, একই অভিযোগ, ঘুরেফিরে একই বকবকানী...।

লেখায় নতুন কিছু আসবে কিভাবে, শুরুটা যে হয়েছিল চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে? মিনার মাহমুদের সব অভিযোগ সত্য নাও হতে পারে। তবে একের পর এক সব স্বামীর সঙ্গে বনীবনা না হওয়া কেবল তাদেরই দোষে? তৃতীয়ত, আত্মজীবনী বলতে তিনি একটি লেখায় যা বললেন- প্রকাশ্য- গোপনীয়, ভেতরের-বাহিরের সবকিছুই নাকি আনতে হবে। সবটাই নাকি ‘আত্মজীবনী’। আমি তাকে প্রশ্ন করি, বাজার থেকে মুরগি আনার পর সবটাই কি তিনি রাঁধেন এবং খান, না কিছু অংশ ফেলে দেন? তার মা ও পরিচারিকা কি মুরগির ‘সবটাই’ তাকে খাওয়ায়? গরু-খাসির ভেতরের-বাহিরের উপরের-নিচের সবটাই? ওউউ! তাহলে তো তিনি বলতেই পারেন! কিন্তু আমি মনে করি তার জামার ‘ভেতরে’ কী আছে, রাতে তিনি কী করেন এগুলো তো ‘ছেলেরা’ জানেই। কেন এসব বলতে হয়? তাছাড়া কারও একান্ত ব্যক্তিগত ও গোপনীয় বিষয় নিয়ে কোনো ভালো মানুষের আগ্রহ বা সময় থাকে? ‘সবটাই আত্মজীবনী’ আর ‘সবটাই বলতে হবে’- এ দু’টো কথা কি এক? সবটাই গরু, অথবা মুরগি, সবটাই টাকা দিয়ে কিনে এনেছি, তাই বলে ‘সবটাই’ খেতে হবে? এ ধরনের উদ্ভট যুক্ত তিনি কোথায় পান? কে তাকে এগুলো শেখায়? সব বলতে হয় না।

কিছু নিজের জন্য রেখে দিতে হয়। ‘একান্ত’ ও ‘গোপনীয়তা’ জীবনেরই একটা অংশ অবশ্যই। কিন্তু সেটা গোপনীয়তা হিসেবেই। প্রকাশ্যে আনলে প্রকাশ্য বিষয়গুলোর যেমন মূল্য কমবে, গোপনীয় বিষয়গুলোরও মূল্য কমবে। শরীরে পোশাক পরিধানের পর, কিছু অংশ ঢেকে দেয়ার পর সৌন্দর্য বাড়ে নাকি কমে? বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।

গোপন অংশ গোপন রাখাই শ্রেয়, প্রকাশ্যগুলো বাহিরে। এবার আমরা তার সাক্ষাৎকারটি দেখে নেব এবং তার সম্পর্কে মিনার মাহমুদের দু’টি উদ্ধৃতি। তসলিমার সাক্ষাৎকার : তসলিমা নাসরিনের মুখোমুখি কেমন আছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন? প্রায় দেড় যুগের মতো তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসনে। বিদেশে বসেও থামেনি তার লেখালেখি। পেয়েছেন কলকাতার আনন্দ পুরস্কারসহ লেখিকা হিসেবে বিশ্বের অনেক পুরস্কার।

কিন্তু এবারের কিংবা তার আগের বেশ ক’টি বই মেলায় নতুন কোন সাড়া জাগানো বই নেই তার। আগের মতো লিখতে পারছেন না বা লিখছেন না। ‘উতল হাওয়া’, ‘আমার মেয়ে বেলা’, ‘ভ্রমর কইও যাইয়া’, বা ‘ক’-এর মতো বই আর আসছে না। আগের মতো কাব্যও নেই, কবিতাও না। একাধিক স্বামী ও একাধিক পুরুষের সাথে তার দেহজ সম্পর্কের কথা তো তিনি বেশ রসিয়ে লিখেছেন।

কিন্তু আজকাল বয়সের কারণে নারী হিসেবে আর এই সম্পর্ক অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এখন তিনি হতাশ, চোখের নিচে কালি পড়েছে, চামড়ায় বয়সের ছাপ, শরীরের মধ্যে নানারকম ব্যথা-বেদনা তো আছেই। একাকিত্ব তাকে আরও পঙ্গু করে দিচ্ছে। এমনি অবস্থায় বিদেশের কোথাও থিতু হতেও পারছেন না। দেশে ফেরাও তার জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে গেছে।

সেই মৌলবাদীদের ভয়ে তিনি দেশ ছেড়েছিলেন, সে ভয় এখনও তাকে তাড়িয়ে মারছে। লন্ডন থেকে দিন কয়েকের জন্য গিয়ে ছিলাম ভারতে। আর কাকতালীয় ভাবেই দেখা গেল এই বিতর্কিতা লেখিকা ডা. তসলিমা নাসরিনের সাথে। তিনদিনে নানা বিষয়ে তার সাথে কথা হলো। এ বিষয়গুলো তুলে ধরতেই আজকের এই প্রয়াস।

প্রশ্ন : আপনার কাছে একটা প্রশ্ন। এই যে লেখালেখি করলেন, এর মূল উদ্দেশ্য কি ছিল, দেহের স্বাধীনতা না চিন্তার স্বাধীনতা? তসলিমা : প্রশ্নাটা আপেক্ষিক। আসলে আমিতো পেশায় ছিলাম চিকিৎসক। আমার বাবা চেয়েছিলেন তার মতো মানে অধ্যাপক ডা. রজব আলীর মতো আমিও একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক হই। শৈশবে, কৈশোর এবং যৌবনে আমি অনুভব করি, নারীরা আমাদের সমাজে ক্রীতদাসীর মতো।

পুরুষরা তাদের ভোগ্যপণ্যের মতো ব্যবহার করে। এ কারণেই বিষয়গুলো নিয়ে প্রথমে লেখালেখির কথা ভাবি। প্রশ্ন : আমার প্রশ্নের জবাব হলো না। কী স্বাধীনতার দাবিতে আপনার এই লড়াই? তসলিমা : আমি প্রথমত নারীর জরায়ুর স্বাধীনতার দাবি তুলি। একজন পুরুষ যখন চাইবে, তখনই তার মনোস্কামনা পূর্ণ করতে ছুটে যেতে হবে, এটা তো হতে পারে না।

অথচ তখন ছুটে না গেলে জীবনের সব পূণ্য নাকি শেষ হয়ে যাবে। চিন্তার স্বাধীনতা না থাকলে ভালো লেখক হওয়া যায় না। দেহের স্বাধীনতার বিষয়টা গৌণ। তবে একেবারে ফেলনা নয়। পুরুষই একচেটিয়া মজা লুটবে, নারী শুধু ভোগবাদীদের কাছে পুতুলের মতো হয়ে থাকবে, এটা মেনে নিতে পারিনি।

প্রশ্ন : আপনি পরিকল্পিতভাবে নিজেকে আলোচিত ও অপরিহার্য করে তোলেন। আজ বাংলা সাহিত্যে বা বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে আপনি তো চরমভাবে অবহেলিত। তসলিমা : আমি একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছি। সত্য কথা সাহিত্যে এলে তা অনেকের জন্য কষ্টদায়ক হয়। আমি আমার বহু স্বামী ও ভোগ্য পুরুষদের নামধাম প্রকাশ করে দেয়ায় অনেক বন্ধু আমাকে এড়িয়ে চলেন।

বাংলা সাহিত্যের অনেক দামি দামি পুরুষও চান না যে আমি দেশে ফিরি। এক সময় আমার বিপক্ষে ছিল কট্টর মৌলবাদীরা। এখন প্রগতিশীল অনেক সাহিত্যিকও বিপক্ষে। কারণ এদের নষ্ট মুখোশ আমি খুলে দিয়েছি। প্রশ্ন : আপনি চিকিৎসক থাকলেই ভালো করতেন।

মিডিয়াতে কেন এলেন? সাহিত্যেই বা কেন ঢুকলেন? তসলিমা : আমি নারীর অধিকার নিয়ে ভেবেছি। কিন্তু এখন মনে হয় আমি মানবিকভাবে আশ্রয়হীন। আর এ কারণেই আমি অন্য স্রোতে সুখ খুঁজেছি। পরিবার হারালাম, স্বামী সন্তান হলো না, ঘর-সংসার হলো না। তখন দৈহিক সম্পর্কে নেশাগ্রস্থ না থেকে আর কোনো পথ খোলা ছিলো না।

প্রশ্ন : এখন আপনি কী চান? তসলিমা : অনেক কিছু। আমার হারিয়ে যাওয়া জীবন, যৌবন, ভোগ-উপভোগ, স্বামী-সন্তান, পরিবার-পরিজন। কিন্তু দিতে পারবেন কি? আজ আমি নিজ দেশের কাউকে দেখলে কুণ্ঠিত ও লজ্জিত হই। খ্যাতি, অর্থ, পুরস্কার সবই আছে, তবুও মনে হয় আমি ভীষণ পরাজিত। দিনে হইচই করে কাটাই, রাত হলে একাকিত্ব পেয়ে বসে।

আগের মতো পুরুষদের নিয়ে রাতকে উপভোগ করার মতো শরীর মন কোনোটাই নেই। প্রশ্ন : পুরনো বন্ধুরা যোগাযোগ রাখে কি? এখন কেমন পুরুষ বন্ধু আছে? তসলিমা : এক সময় অনেক ব্যক্তিত্ববানদের পেছনে আমি ঘুরেছি। ব্যক্তিত্বহীনরা আমার পেছনে পেছনে ঘুরেছে। আজকাল আর সুখের পায়রাদের দেখি না। মনে হয় নিজেই নিজেকে নষ্ট করেছি।

পরিচিত হয়েছি নষ্ট নারী, নষ্টা চরিত্রের মেয়ে হিসেবে। লেখালেখি করে তাই এসব পুরুষদের উপর আমার রাগ, ঘৃণা ও অবহেলাকে প্রকাশ করেছি। যৌনতার রানী হিসেবে প্রকাশিত হলাম, অথচ এই রানীর কোনো রাজাও নেই প্রজাও নেই। এই জন্য আজ হতাশায় নিমজ্জিত আমি। প্রশ্ন : ধর্ম-কর্ম করেন? তসলিমা : মাঝে মধ্যে মনে হয় সব ছেড়ে নামাজ-রোজা করি, তওবা করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করি।

কম্যুনিস্টরাও তো একসময় বদলে যায়। আমার জন্ম ১২ ই রবিউল আউয়াল, মহানবীর জন্মদিনে। নানী বলেছিলেন, আমার নাতনী হবে পরহেজগার। সেই আমি হলাম বহু পুরুষভোগ্যা একজন ধর্মকর্মহীন নারী। বলা তো যায় না, মানুষ আর কত দিন বাঁচে।

আমার মা ছিলেন পীরের মুরীদ। আমিও হয়ত একদিন বদলে যাবো। প্রশ্ন : বিয়ে-টিয়ে করবার ইচ্ছে আছে কি? তসলিমা : এখন বিয়ে করে কী করবো? পুরুষটিই বা আমার মধ্যে কী পাবে? সবই পড়ন্ত বেলায়। যে বিয়ে করবে, সে যদি আমার মধ্যে যৌন সুখ না চায়, সন্তান না চায়, এমন মানব পেলে হয়ত একজন সঙ্গী করার কথা ভাবতেও পারি। প্রশ্ন : আপনি কি একেবারেই ফুরিয়ে গেছেন? তসলিমা : না, তা ঠিক নয়।

তবে পুরুষতো শত বছরেও নারীকে সন্তান দেয়। মেয়েরা তো পারে না। আমার এখনও রজস্রাব বন্ধ হয়নি। মেশিনারি ঠিক আছে। তবে নতুন বা আনকোরাতো নয়, লক্কর-ঝক্কর মেশিনারির মতো আর কি? পুরুষদেরও বয়স বাড়লে খাঁই খাঁই বেড়ে যায়।

এতটা মেটানো তো আর এই বয়সে সম্ভব হবে না। প্রশ্ন : বয়স বাড়লে পুরুষেদের সেক্স বাড়ে এটা কিভাবে বুঝলেন? তসলিমা : কত বুড়ো, মাঝ বয়েসী ও প্রবীণ বন্ধুদের নিয়ে দেহজ খেলায় মেতেছি, এটা আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। প্রশ্ন : রাত যখন বিশ্বকে গ্রাস করে, আপনার ঘুম আসছে না, তখন আপনার বেশি করে কি মনে পড়ে? তসলিমা : খুব বেশি মনে পড়ে আমার প্রথম প্রেম, প্রথম স্বামী, প্রয়াত কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে। অনেক কাঁদি তার জন্য। পেয়েও হারালাম তাকে।

রাগ হয়েছিল বিয়ের রাতেই। আমি তো ডাক্তার তার, পুরুষদণ্ডে ক্ষত দেখি। বুঝতে পেরেছিলাম যাকে জীবন দিয়ে ভালবাসি, সে বেশ্যাবাড়ি যায়। সিপিলিস-গনোরিয়ায় আক্রান্ত সে। তবু তাকে বলি, আজ বাসর রাতে যৌনকেলি হবে না।

তোমার শরীরে রোগ। এখন আমার শরীরে তুমি ঢুকলে আমিও এ রোগে আক্রান্ত হবো। তোমাকে সুস্থ করে তুলবো, তারপর হবে আমাদের আনন্দ বাসর। কিন্তু পুরুষতো, জোর করতে চাইলো, ব্যর্থ হয়ে চলে গেলো পতিতার বুকেই। প্রশ্ন : অন্য স্বামীদের কথা মনে পড়ে না? তসলিমা : তারা এমন উল্লেখযোগ্য কেউ নন।

তাদের মুরোদ আমি দেখেছি। তার চেয়ে বহু বন্ধুর মধ্যে আমি দেখেছি কেমন উন্মত্ত তেজ। ওদের স্মৃতি মনে পড়ে মাঝে মধ্যে। প্রশ্ন : দেশে ফিরবেন না? তসলিমা : দেশই আমাকে ফিরতে দেবে না। আর কোথায় যাবো? বাবা-মা-ভাই-বোন সবাইকে আমি লেখাতে জবাই করে দিয়েছি।

আসলে নেশাগ্রস্তই ছিলাম, অনেক কিছু বুঝিনি। আজ আত্মীয়-স্বজনও আমাকে ঘৃণা করে। মরার পর লাশ নিয়ে চিন্তা থাকে, আমার নেই। যে কোনো পরীক্ষাগারে দেহটা ঝুলবে। ছাত্রদের কাজে লাগবে।

মিনার মাহমুদঃ “তার লেখালেখিসহ জীবন-যাপনের অনেক কিছুর সঙ্গে আমি একমত আবার অনেক কিছুর সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করেছি। তসলিমা নাসরিন নিয়মিত ‘বিচিন্তা’য় লিখতেন। বিচিন্তাতেই কাজ করতেন অম্লান দেওয়ান। বর্তমানে বাংলাদেশস্থ ফরাসি দূতাবাসে কর্মরত অম্লানের অভ্যাস ছিল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লেখাপড়া করা। সে হঠাৎ তসলিমা নাসরিনের একটি লেখা আর ভারতের নারীবাদী লেখিকা সুকুমারী রায়ের একটি লেখা নিয়ে আসে।

দুটো লেখা মিলিয়ে দেখা গেল তসলিমা নাসরিনের লেখাটি আর সুকুমারী রায়ের লেখা হুবহু এক। দাড়ি-কমাসহ। আকার-ইকারও কোন রকম বদলায়নি। এটাকে আমরা বলি চৌর্যবৃত্তি। তো তৎকালীন বিচিন্তায় তসলিমা নাসরিনের লেখাটি আর সুকুমারী রায়ের লেখা আমরা পাশাপাশি ছাপালাম।

যা হয়- এখান থেকেই সাংসারিক ক্ষেত্রে আর আদর্শগত দিক থেকে আমাদের দ্বন্দ্বের সূচনা। আমি আসলে তখন বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি, আমি যখন সম্পাদক তখন সেখানে, ব্যক্তিগত সম্পর্কের চেয়ে আমার দায়িত্বের এখতিয়ার অনেক বড়। এখতিয়ারই বলে যে, আমাকে লেখাটি ছাপাতে হবে। অপরাধ যদি আমার ঘরে থাকে তবে আমি অন্যদের অপরাধ কিভাবে ছাপাবো। বিষয়টি তাকে বোঝাতে আমি ব্যর্থ হই।

এটিকে সে অত্যন্ত অফেনসিভ হিসেবে নেয়। সে আমাকে বললো, আমি তার সঙ্গে শত্র“তা করেছি। আমি পাল্টা জবাবে বলেছিলাম, এটা রিয়েলিটি, তুমি নিজেই দেখ। তোমার নিজের লেখার পাবলিকেশন্স তারিখ আর সুকুমারী রায়ের লেখা ছাপা হয়েছে তিন-চার বছর আগে। চুরিটি ছিল খুবই কৌশলের চুরি-এটা প্রকাশিত না হলে কেউ জানতো না।

পরে তসলিমা নাসরিনের প্রথম বই ‘নির্বাচিত কলামে’ও লেখাটি ছাপা হয়েছিল। যেদিন থেকে এ ঘটনা জানতে পারি সেদিন থেকে আমি তসলিমার লেখালেখির ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। কারণ, একটি মৌলিক লেখা যা অন্যের তা কাট-পেস্ট করার কোন মানে হয় না। মূলত সেই থেকেই আমাদের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। ” “তসলিমা যা লেখেন তিনি নিজেই তা বিশ্বাস করেন না।

তার সঙ্গে বসবাসের সুবাদে এটা আমি জেনেছি। তিনি নারী স্বাধীনতা আর নারী মুক্তির কথা বলেন, কিন্তু নিজে ব্যক্তিগতভাবে যে ধরনের আচরণ করেন, তাতে আমার মনে হয়েছে তিনি নিজেই নিজের লেখা বিশ্বাস করেন না। ......... তার সঙ্গে বসবাসের ফলে আমি এমন স্ববিরোধী নানা আচরণ খেয়াল করেছি। ও নিজেই আসলে নিজের লেখা বিশ্বাস করে না। মানুষ কিভাবে বিশ্বাস করবে।

তার লেখালেখির বিষয়ে আমি খুব একটা শ্রদ্ধাশীল নই। ”

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।