লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই,তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। (http://www.ishakkhan.blogspot.com)
অভিযোগ
আমি অভিযোগ করবো না।
অভিযোগ করতে আসি নি।
অভিযোগ করা আমার মানায় না।
অভিযোগ করতে আমি জানি না।
অভিযোগ করার অধিকার আমায় দিয়েছিলে কোন একদিন,
আমি নিই নি।
হয়তো আমার ভুল ছিল!
তাই বলবো না আমায় কষ্ট দিয়েছ,
বলবো না উপেক্ষা করেছ ইচ্ছেমত।
বলবো না, আমায় অপেক্ষায় রেখে করেছ ব্যস্ততার ভান।
বলবো না, আমি তোমায় রেখেছিলাম সবার আগে, সবার চেয়ে যত্নে,
আর তুমি? আমায় রেখেছিলে সবশেষে, সবাইকে দিয়ে-থুয়ে,
অনুভূতির আস্তাঁকুড়ে! কি নিদারুণ অপমানে!
বলবো না, তুমি ছিলে আমার জন্য মহামূল্য উপহার,
আর আমায় তুমি বিবেচনা করেছ এক অপ্রয়োজনীয় কিছু,
এমন এক বোঝা, যাকে নামিয়ে রাখতে পারলেই যেন বেঁচে যেতে।
বলবো না, আমি তোমার সব বুঝে নিয়েছি,
আর আমার অনুভূতিকে তুমি করেছ বিদ্রূপ।
বলবো না, আমি সবসময় ছিলাম তোমার জন্য,
তোমার থাকবার সময় হয় নি।
বলবো না, আমি তোমার সব কথা শুনেছি,
আর তুমি মেতে থেকেছ নিজেকে নিয়ে,
আমি কেমন আছি, শুধোবার সময় তোমার হয় নি।
বলবো না, আমি তোমার সব কষ্ট নিজের বুক পেতে নিয়েছি,
তুমি হয়েছ শুধুই সুখী, স্বার্থপরের মত।
বলবো না, তোমার সব বেদনা কাঁধে হাত রেখে আমি হালকা করেছি,
তুমি কখনো জিজ্ঞেস কর নি, আমার দুঃখ হয় কীনা।
বলবো না, নিয়েছ অনেক, আমার ঝুলি করেছ খালি!
বলবো না, তোমার জন্য সবসময় রেখেছিলাম উষ্ণ আশ্রয়,
আর তুমি দিয়েছ নিষ্ঠুর শীতলতা।
বলবো না, তোমার আবেগের আতিশয্য আমি হাসিমুখে সয়েছি,
আর আমার জন্য মমতার বদলে ছিল অভিমান।
বলবো না, তোমার মুখের হাসির জন্য কত কিছুকে উপেক্ষা করেছি,
ছেড়েছিও অনেক কিছু!
আর তুমি? আমার মুখ ভার দেখেও তুমি দেখো নি!
বলবো না, নাক উঁচু এই তোমার ধারণা ছিল,
কষ্ট শুধু তুমিই পেতে পারো, আমি নই।
বলবো না, তোমায় অনুভব করেছি সর্বক্ষণ,
আর তুমি? আচ্ছা, থাক্, বলবো না!
বলবো না, আমি বুঝি, আর তুমি বোঝো না।
বলবো না, আমি দিয়েছি, তুমি দাও নি।
বলবো না, তুমি থেকেও ছিলে না,
পাশে দাঁড়িয়েও আমায় রেখেছিলে বড্ড বেশী একা।
বলবো না, আপনজন হয়েও আমায় পর করেছিলে,
কোথাকার কাদেরকে খুব করে আঁকড়ে ধরেছিলে।
বলবো না, আমি হাত বাড়িয়েছি বলেই করেছিলে অবহেলা,
আর তোমার কষ্টে যাদের কিছু যায় আসে না, তাদেরকেই টেনেছ কাছে!
বলবো না, খুব কাছে দাঁড়িয়ে থেকেও আমার নিঃশ্বাসের
গুমোট কষ্টটা তুমি ধরতে পারো নি।
বলবো না, বিভ্রমের জগতে দাঁড়িয়ে বুঝতে সবসময় ভুল করেছ,
আমিই আসলে ছিলাম, ওরা কেউ নয়।
বলবো না, সবসময় যা ইচ্ছে চেয়ে নিয়েছ,
কখনো ভাবো নি, আমারও চাওয়া থাকতে পারে।
বলবো না, অন্য সবার জন্য তোমার দৃষ্টি ছিল,
আমার জন্য ছিলে তুমি অন্ধ!
বলবো না, অন্য সবার জন্য তুমি ছিলে মুখর,
আমার জন্য ছিলে মূক।
বলবো না, অন্য সবার কথা শুনতে তুমি ছিলে অধীর,
শুধুমাত্র আমার আর্তনাদই তোমার কর্ণকুহরে পৌঁছত না।
বলবো না, আর সবার জন্য আগে আগে এগিয়ে গেছ,
আমায় পেছনে ফেলে।
বলবো না, আর সবার জন্য ইমারত রচনা করেছ,
আমার জন্য রেখেছ পুরনো এক সমাধি মাত্র, কোনরকমে!
বলবো না কখনোই, বলবো না।
বলেছি না, অভিযোগ করা আমার দ্বারা হবে না!
(২৬ নভেম্বর, ২০১৩)
অভিযোগের জবাব
তোমরা তো এমনই,
বলার সুযোগ দিলে থামতে চাও না!
মনে মনে একশোবার অভিযোগ করবে না করবে না বলে
কতবারই না আমায় ছোট কর।
হ্যাঁ, করেছি তোমায় উপেক্ষা,
যাতে তুমি সাহস করে বলতে পারো তোমার চাওয়া।
হ্যাঁ, রেখেছিলাম তোমায় সবচেয়ে অযত্নে,
যাতে বুঝতে পারো, তোমায় যত্ন করার অভিনয়ের
প্রয়োজন আমার নেই।
যত্ন-আদর-আদিখ্যেতা তো ওদের জন্য, যারা কেউ নয়,
তোমার জন্য শীতল উপেক্ষা রেখেছিলাম,
জানো কি? ওটা আর কারো জন্য নয়।
তোমায় নামিয়ে রাখতে চেয়েছি, জ্ঞান করেছি বোঝাসম,
আমার অভিনয় ধরতে পারো, তোমার সাধ্য কী?
করেছি এমন, যাতে প্রাণপণে কাছে থেকে যাও,
দূরে সরে যাবার ধৃষ্টতাপূর্ণ কল্পনা যেন তোমার কাছে না ঘেঁষে।
সবসময় তো আমিই বলে গিয়েছি, বাচালের মতো,
কেন জানো? যাতে একটা সময় বিরক্ত হয়েই
বলতে শুরু কর তোমার মনের কথা।
যেন জোর করে থামিয়ে দাও আমায়,
আর আমি যেন প্রাণভরে শুনতে পারি!
হ্যাঁ, সুখী হতে চেয়েছি, তোমার কষ্টের দিকে না তাকিয়ে,
নির্ভরতাটুকু শুধু তোমার কাছে পেয়েছি বলেই।
সাহসটুকু তুমি দিয়েছ বলেই।
তোমার দুঃখ হয় কীনা জিজ্ঞেস কেন করবো?
আমি তো ওদের মত ভাসা ভাসা দৃষ্টির নই যে
তোমার চশমার আড়ালে বেদনার্ত চক্ষু দু’টির ভাষা
পড়তে পারবো না।
ইচ্ছেমতো সব নিয়েছি, চেয়ে নিয়েছি, কেড়ে নিয়েছি।
কেন? দেবার আনন্দ তুমি পাবে, নেবারটা আমার জন্য থাকবে না?
আমার জন্য ছেড়েছ অনেক কিছু, এটুকুই তো জানো!
জানো না, যখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছ, তখন গোপন করেছি আনন্দ্রাশ্রু।
পাছে তুমি জেনে ফেলো, পাছে পায়াভারী হয়ে যায়,
পাছে আমার যত্নের বাঁধনটি আলগা করে দাও!
তোমার কাছে এসে আবেগ ছড়িয়েছি? কেঁদেছি যখন-তখন?
করবোই তো, একটিমাত্র আশ্রয় রইলে
স্বার্থপরের মতো মমতা অন্বেষণ করে না কে?
সবাইকে বুঝেছি, সবাইকে দিয়েছি,
তোমায় করেছি বঞ্চিত, রেখেছি পেছনে, রেখেছি নিচে,
রেখেছি অবহেলায়।
সবার জন্য হয়েছি ব্যগ্র, মুখর, অধীর,
তোমার জন্য হয়েছি শীতল, নির্লিপ্ত, মূক, বধির, অন্ধ!
কেন? কারণ, খুব জানি, শত কিছুতেও তোমায় হারাবার ভয় নেই।
আপন আর পর বুঝতে ভুল? সে আমি করি নি।
সে তো আপন নয়, যাদের সাথে রক্ষা করে চলি নিয়মকানুন,
সে-ই তো আপন, যাকে নির্ভয়ে উপেক্ষা করা চলে!
তোমার কষ্ট দেখেও দেখি নি,
তোমার বেদনা শুনেও শুনি নি,
তোমার ব্যথা বুঝেও বুঝি নি?
আরো যত পারো অপবাদ দাও,
তারপরও বলে যাবো,
আপনার জনের ব্যাকুল ভালোবাসা পেতে
যতটা সম্ভব অবহেলা দেখাতে রাজী আছি!
তারপরও গোপন করবে?
মনে মনেই অভিশাপ দেবে?
দৃঢ়তার ভান করবে?
বয়ে বেড়াবে চাপা কষ্ট?
বলবে না আমায় ইচ্ছেমত?
দোষারোপ করে যাবে?
সব দুয়ার আমার জন্য বন্ধ রাখবে?
আড়াল থেকে কথা বলবে?
তোমার ইচ্ছে।
দাও, যেভাবে খুশি আমায় শাস্তি দাও,
যতটা পারো পুড়িয়ে যাও আমায়,
দগ্ধ কর আমৃত্যু।
শুধু যেন আমি তোমার কেউ নই,
এমনটা ভাবতে সাহস কোরো না।
শুধু যেন আমার স্থান
মুছে ফেলার চিন্তা ঘুণাক্ষরেও কোরো না।
শুধু যেন মনে মনেই আমায়
এইভাবে ভালোবেসে যেও চিরকাল।
শুধু যেন আমার জন্য আশ্রয়টুকু
রেখে দিও, অন্য কারো জন্য বরাদ্দ কোরো না।
তোমার নিয়মতান্ত্রিক ভদ্র ভালোবাসায়
হয়ে পড়েছি অভ্যস্ত!
অভিযোগ? আছে আমারও।
কিন্তু তাতে আর কাজ কী? থাক না!
তুমি না হয় মনে মনেই আমায় অভিযোগ করে গেলে,
আমি না হয় তৃপ্তি আর সুখ নিয়েই বেঁচে রইলাম!
(২৬ নভেম্বর, ২০১৩)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।