আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপন, সাথে দুটি-চারটি কথা

প্রথমে বিজ্ঞাপন দুটির কথা বলছি- প্রথমটি, নতুন জাতীয় দৈনিক মানবকণ্ঠের আর অপরটি বেসরকারী মোবাইল ফোন কোম্পানী বাংলালিংকের। এ দুটি বিজ্ঞাপনে দেশের ঐতিহ্যকে ছোট করা হয়েছে বলেই অভিমত পেয়েছি অনেকের কাছ থেকে, আমিও তাদের সাথে একমত। মানবকণ্ঠ দাবি করছে- তারা শুধু সাধারণ চিত্রই তুলে ধরে না, তার অন্ধকার দিকটিও তুলে ধরে। আর এ নিয়ে নির্মিত বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে, একটি মেয়ে বেড়ে উঠছে, কৈশোর পেরিয়ে বধুরূপে শশুরবাড়ি (স্যরি স্বামীগৃহ- সম্ভবত ভাড়া বাসা)। সেখানে কাজের মেয়ের হাতে একটি গ্লাস/প্লেট ভেঙ্গে যায়।

আর বধূ মেয়েটি সেই কাজের মেয়েটিকে মারধোর করে, বস্তায় বন্দী করে, মেরে ফেলে। -- আমার আপত্তি এখানেই; ঘটনার পেছনের ঘটনাকে তুলে ধরার জন্য মানবকণ্ঠের আর কোন সৃজনশীলতা ছিল না। দেশের নারীদের শ্বাশ্বত চিত্র নিয়ে তো তাদের সংস্কৃতি পাতা, নারীপাতায় কোটি কোটি শব্দ লেখা হবে। তাহলে কেন বিজ্ঞাপনে নারীকে ছোট করা। আপনি হয়তো বলবেন-- নারীরা কি এ ধরনের অপরাধ করছে না? তাদের কথা কি বলা যাবে না? আমি বলছি- অবশ্যই বলা যাবে, কোন নারী অপরাধ করলে সে সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন হতে কোন বাধা নেই।

কিন্তু যখন এটি একটি প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যমূলক বিজ্ঞাপন হয় তখনই আসে আপত্তি। বলেন, নারীরা হাতে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনার সংখ্যা কত? পুরুষের হাতে কি গৃহকর্মী নির্যাতিত হয় না? আর গৃহকর্মীকে ভালবাসে এমন নারীর সংখ্যা কি গুণে শেষ করতে পারবেন? তাই, বাঙ্গালি নারীর শ্বাশ্বত চিরন্তণ রূপটিকে এভাবে ছোট করে কি লাভ মানবকণ্ঠের। তাদের কাছে কেউ এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে কিনা? অথবা মানবকণ্ঠ তাদের এ বিজ্ঞাপনটিকে নিয়ে কোন বক্তব্য দিয়েছে কিনা জানিনা। তাদের উচিৎ বিষয়টি ভেবে দেখা, বিষয়টি বুঝতে পারলে তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। আর বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে- হারিয়ে যাওয়া স্বামী (বেচারা!! সাইফুল ) অনেক কষ্ট করে ফিরে আসছে নিজ গৃহে, স্ত্রীর প্রশংসা করতে করতে সাহায্যকারীকে অতিষ্ট করে তুলেছে বলা যায়।

কিন্তু বাসায় ফিরে দেখে দরজার নেমপ্লেটে তার নামের আগে মরহুম লেখা। স্ত্রীকে পরিচয় দিলে স্ত্রী রেগে যায়। বড় একটি বাজারের লিস্ট দিয়ে বাজার করে আনতে বলে। লজ্জায় পড়ে বেচারা স্বামী, সাহায্যকারী ব্যক্তিও মুখ লুকায় আড়ালে। তখন বাংলালিংক বলছে- স্ত্রী হারিয়ে যাওয়া স্বামীকে সাদরে গ্রহণ না করলেও বন্ধ থাকা সিম চালু করলে তারা বিভিন্ন সুবিধা (!) দেবে।

--- বাংলালিংক নম্বর আমি নিজে ব্যবহার করি। গ্রামীন ফোনের শর্তের আড়ালে বেশি বিল কাটার কারণে আমি এ ফোন কোম্পানীর গ্রাহক। কিন্তু তাদের বিজ্ঞাপন সত্যিই লজ্জার কারণ। আর বাংলালিংক দেশ প্যাকেজের নামে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সম্মানহানি ক্ষমার অযোগ্য কাজ। একজন গ্রাহক হিসেবে আমি তীব্র নিন্দা করছি।

কেননা--- হারিয়ে যাওয়া স্বামীকে ফিরে পেতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেখা গেছে এদেশের নারীকে। যা বিশ্বে বিরল। এমনও দেখা গেছে-- বউকে স্বামী মারছে; এটা দেখে কোন প্রতিবেশী সেই নারীর স্বামীকে গালমন্দ করলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে প্রতিবেশী। স্ত্রী বলেছে, আমার স্বামী আমাকে মেরেছে তো তোমার কি? এমনই একটি সমাজের নারীকে ঝগড়াটে হিসেবে বাংলালিংক কিভাবে উপস্থাপন করলো এটাই চিন্তুার বিষয়। আবার বিজ্ঞাপনটির নির্মাতার পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়।

তিনি হয়তো পরিবার-সমাজ দুরে তথাকথিত সভ্য সমাজের বাসিন্দা। বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বাইরে হয়তো তিনি বেড়ে উঠেছেন। অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে এদেশের নারী ও ঐতিহ্যকে ছোট করতে চেয়েছেন। তাছাড়া তাদের এ বিজ্ঞাপনটিকে প্রচারের অনুমতি কে দিল সেটাও একটা প্রশ্ন। কোন দেশপ্রেমিকের দ্বারা এসব সম্ভব নয়।

আমরা চাই, বাংলালিংক দ্রুত ক্ষমা চেয়ে এই অনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে নিক। আর পাঠক ও সচেতন মানুষকে বলবো-- ভেবে দেখুন আমি যে কথাগুলো বলেছি তার যৌক্তিকতা আছে কি না? আসুন, তথাকথিত সভ্যতা, ভালমানুষির মুখোশ উন্মোচনে জনমত গড়ে তুলি। আরও সমৃদ্ধ করি দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য আর সভ্যতাকে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।