আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমপিওভুক্ত সো-কলড সুশীল সমাজ থেকে সাবধান !!!

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে ত্রিশ লাখ শহীদ, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানী, অসংখ্য পঙ্গুত্ব নিয়ে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর তাদের এদেশীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী, আলবদর, আলশামস, রাজাকার ও বিহারী ছাড়া ওই সশস্ত্র সংগ্রামে গোটা সাড়ে সাত কোটি বাঙালি তখন এক সুতোয় গাঁথা ছিল। বাঙালি'র একজন নেতা ছিল 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান'। বাঙালি'র একটা শ্লোগান ছিল 'জয় বাংলা'।

বাঙালি'র একটি অহংকার ছিল 'মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা'। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট ছিল যে দীর্ঘ আন্দোলনের সূত্রপাত। তারপর বাহান্ন'র ভাষা আন্দোলন, বাষট্টি'র ছাত্র আন্দোলন, ষিষট্টি'র ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনের হাত ধরে নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের বিনিময়ে এলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ডিসেম্বর মাস বাঙালি'র বিজয়ের মাস। একজন বাঙালি হিসেবে এটুকুই গর্বের।

১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সেই ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে গণ পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১৬০টি আসন। জুলফিকার আলী ভুট্টো'র পাকিস্তান পিপল'স পার্টি পেয়েছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮১টি আসন। পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ + ৩০০ = ৬০০ আসনের মধ্যে পূর্ববঙ্গে আওয়ামী লীগ পেযেছিল ২৮৮টি আসন আর পশ্চিম পাকিস্তানে পাকিস্তান পিপল'স পার্টি পেয়েছিল ১৪৪টি আসন। গণ পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্টতা পেলেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেই প্রশ্নে ভুট্টো সাহেব বেঁকে বসলেন। তারপরের ইতিহাস সবারই জানা।

সত্তরের নির্বাচনে যারা গণ পরিষদে প্রতিনিধি নির্বাচন হন, পরবর্তী সময়ে তারাই বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করলেন। সংবিধান প্রণয়ন কমিটি'র সেই দলে নের্তৃত্ব দিলেন ড. কামাল হোসেন। সেই সংবিধান ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংসদে পাস হয় আর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ সাল থেকে কার্যকর হয়। মূলত বাহাত্তরের সেই মূল সংবিধানই ছিল বাঙালি'র গর্ব করার মত আরেকটি বিষয়। যেখানে চারটি মূল নীতি ছিল।

যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা ছিল। জাতীয়তার কথা ছিল। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ন্যায় নীতি ও সাম্যের কথাবার্তাও ছিল। তারপর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। যেখানে আওয়ামী লীগ পেল ২৯৩টি আসন (শতকরা ৭৩ভাগ ভোট), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ পেল ৫টি আসন (শতকরা ৭ভাগ ভোট), বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি পেল ১টি আসন (শতকরা ৪ভাগ ভোট) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পেলেন ১টি আসন (শতকরা ১ভাগ ভোট)।

এছাড়া মোট কাস্টিং ভোটের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) শতকরা ৮ভাগ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) শতকরা ৫ভাগ ভোট পেলেও সংসদে কোনো আসন পেলেন না। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনেই শতকরা ৮৫ভাগ ভোটের প্রতিনিধিরা সংসদে গেলেন। বাকী শতকরা ১৫ ভাগ ভোটারের কোনো প্রতিনিধি প্রথম সংসদেই ছিল না। কিন্তু দল হিসেবে তারা দেশের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ছিল। সংসদে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি পাবার সুযোগ থাকলে তখন দেশের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বৃহত্তম দলেরও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ তৈরি হত।

সেই সুযোগ যে প্রচলিত ভোটের রাজনীতিতে ছিল না, ফলে তখন থেকেই বিরোধী পক্ষের আসল ষড়যন্ত্রের বীজ বপন যেমন শুরু হল, তেমনি ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতাকে আরো টেকসই ও পাকাপাকি করার একটা অযুহাত অনুসন্ধানও শুরু হল। তারপর ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই সংবিধানে প্রথম সংশোধনী আনা হল। যেটি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখী করা। সেই যে শুরু হল সংবিধানের সংশোধন যা এখন সর্বশেষ পঞ্জাদশে এসে ঠেকেছে। এ পর্যন্ত সংবিধানে যে ১৫টি সংশোধনী হয়েছে, তার মধ্যে বিতর্কিত সংশোধনী গুলো হল দ্বিতীয় সংশোধনী (জরুরী অবস্থা জারী করার বিধান), চতুর্থ সংশোধনী (রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ও একদলীয় গণতন্ত্র), পঞ্চম সংশোধনী (ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ), সপ্তম সংশোধনী (মার্শাল ল), অষ্টম সংশোধনী (প্রজাতন্ত্রের ধর্ম ইসলাম), নবম সংশোধনী (ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন), দশম সংশোধনী (সংসদে নারীদের জন্য ৩০টি সংরক্ষিত আসন), একাদশ সংশোধনী (সাহাবুদ্দিন আহমেদ ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট হবেন আবার প্রধান বিচারপতি পদে ফেরত যাবেন), ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার), চতুর্দশ সংশোধনী (সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ করা) ও পঞ্চাদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপ ও রাষ্ট্রের ধর্ম ইসলাম)।

এছাড়া সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী ছিল ভারতের সঙ্গে ২৫বছরের শান্তি চুক্তি, ছিটমহল ও করিডোর বিনিময় এবং সীমানা নির্ধারণ। ষষ্ঠ সংশোধনীতে ছিল যেখানে সংবিধানের আর্টিকেল ৫১ ও ৬৬ কে সংশোধন করে বলা হয় যে, রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীগণের অফিস হবে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। আর দ্বাদশ সংশোধনীতে ছিল যেখানে প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকারের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ রহিত করা হয়। অর্থ্যাৎ মোট ১৫ সংশোধনী হলেও মাত্র চারটি সংশোধনী অর্থ্যাৎ প্রথম, তৃতীয়, ষষ্ঠ ও দ্বাদশ সংশোধনী ছিল মোটামুটি বিতর্কের ঊর্ধ্বে।

বাকি এগারোটি সংশোধনী ছিল বিতর্কিত। সারা বছর আমরা সংবিধানের এতো যে দোহাই শুনি, সংবিধান নিয়ে এতো যে ক্যাচাল শুনি, সংবিধান নিয়ে কতো টকশো, কতো সেমিনার, কতো সভা-সমাবেশ, কিন্তু সংবিধানের বর্তমান চেহারাটি যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, তাতে এই সংবিধান যদি সাধারণ জনগণ এখন মুখস্থ করে এর স্বরূপ প্রকাশ করতে শুরু করে, তাহলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোশ সবার সামনে পুরোপুরি খুলে যাবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বর্তমান সংবিধান বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে গেছে বলে যারা গালভারী ঝাড়িঝুড়ি দেন, তারাও জানেন, এটা বাহাত্তরের সংবিধান থেকে কতোটা দূরে। বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রেরও একটা ধর্ম আছে যার নাম ইসলাম। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশের ধর্ম ইসলাম।

আবার নেতারা মুখে ফেনা তুলে বলাবলি করেন, বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিন্তু সংবিধানে লিখে রেখেছেন রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। বর্তমান সংবিধান রচনায় তাড়াহুড়োর কারণে একটি জটিলের জটিলতা জনিত জটিলতায় একটি জটিল জগাখিচুড়িতে পরিনত হয়েছে। যা দিয়ে বাংলাদেশে ন্যায় নীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা তো সুদূরের ব্যাপার বরং রাষ্ট্রে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনাই একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল থাকবে! নিয়মতান্ত্রিক সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদ ভেঙ্গে যাবার পর কেবিনেট অন্তর্বতী সরকারের দায়িত্ব পালন করে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করে।

কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ বহাল থাকবে, একটা নামমাত্র অন্তর্বতী সরকারও থাকবে, নির্বাচনও হবে। আবার সেই নির্বাচন অন্যান্য সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে হয় সংসদ ভাঙ্গার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে। আর বাংলাদেশে সেটি একধাপ এগিয়ে সংসদ বহাল রেখে সংসদের মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান করা হয়েছে। আক্কেল একেবারে গুড়ুম!!! এর নাম বুঝিবা আওয়ামী বেআক্কেল!!! বাংলাদেশে একটি দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিতিশীরতা তৈরির সকল ক্ষেত্র পুরোপুরি নির্মাণ করা শেষ। এখন আগামী ৫ জানুয়ারি ২০১৪ দশম সাধারণ নির্বাচন হবে!!! ইতোমধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সহিংস আন্দোলনে মাঠ গরম করছে।

সঙ্গে আছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী-শিবির। সাধারণ জনগণের এই রাজনৈতিক খেলা দেখতে গিয়ে এখন নাভিশ্বাস চরমে। এতোক্ষণ ধান ভানতে কি শিবের গীত গাইলাম? তাহলে চলুন, আমাদের এমপিওভুক্ত সুশীল সমাজ নিয়ে একটু গুরুগম্ভীর কিছু আলোচনা করা যাক। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই হঠাৎ করেই এদেশে একটি উচ্চমার্গের সুশীল সমাজের উৎপত্তি ঘটে। এই শ্রেণীর কেউ কিন্তু ময়দানে যুদ্ধ করেনি।

যুদ্ধের বিভিন্ন বিভৎস ছবি দেখিয়ে সভা সেমিনার করা শুরু করলো্। অর্থ্যাৎ দেশের সাধারণ মানুষের অর্জিত স্বাধীনতাকে তারা বিক্রি করে রুটি রোজগারের একটা উপায় খুঁজে পেলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই তথাকথিত সুশীল সমাজ একজন একজন করে নাম এমপিওভুক্ত করতে শুরু করলেন। এই শ্রেণীর অন্তর্ভুত্ত কারা? কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যারা যুদ্ধের সময় স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে নিরাপদ আশ্রয়ে ছিল। কিছু বেসামরিক আমলা, যারা যুদ্ধের সময় পরিবারসহ প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে গিয়ে কখন যুদ্ধ থামবে সেই আশায় দিন পার করেছিল।

যুদ্ধ শেষে মুক্ত দেশে তারা এসেই কিছু পদ পদবি'র দাবিদার বনে গেল। কেউ কিছু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান চালু করলো। ভবিষ্যতে যাতে সেই প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রকল্পের নামে নিরাপদে কিছু টাকা বানানো যায়। যা দিয়ে আরাম আয়াশে জীবন কাটানোই লক্ষ্য। সামরিক বাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাগণ, যারা পরবর্তী বিভিন্ন সামরিক সরকারে বড় বড় মন্ত্রী উপদেষ্টার দায়িত্ব পেলেন।

যারা একটু নিম্নবর্গের তারা কি আর বসে থাকবে? তারা কেউ শ্রমিক নেতা সেজে বসে গেলেন। কারখানায় কাজ না করলেও নেতার গুনে তিনি অঢেল টাকা সম্পদের মালিক বনে গেলেন। বাদ থাকলো কারা? পেশাজীবীরা? তারা বসে থাকে কিভাবে? দেশের গতিপথ অনুমান করে তারা দুই শিবিরে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। আওয়ামী লীগ পেশাজীবী শ্রেণী ও জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী শ্রেণী। এই দলে আছে ডাক্তার, প্রকৌশলী, অ্যাডভোকেট, শিক্ষক, পলিটেকনিক, কৃষিবিদ, কে নেই? তারপরেও কেউ কেউ বাদ পড়লো!! তারা কি বসে থাকবে? মোটেও না।

তারা শুরু করলো নানান বাহারি নামে এনজিও চালু প্রকল্প। কেউ আইন নিয়ে, কেউ মানবাধিকার নিয়ে, কেউ স্বাস্থ্য নিয়ে, কেউ শিক্ষা নিয়ে, কেউ ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে, কেউ বাসস্থান নিয়ে, কেউ ইমিগ্রেশান নিয়ে, কেউ পঙ্গুত্ব নিয়ে, কেউ বোবা কানা খোড়া নিয়ে, কেউ নারীদের অধিকার নিয়ে, কেউ শিশুদের অধিকার নিয়ে, কেউ মিডিয়া নিয়ে যে যেভাবে পারলো এনজিও গঠন করে দেশ সেবার নামে ঝাঁপিয়ে পরলো। সত্যি সত্যি কি এরা দেশ সেবার নামে ঝাঁপিয়ে পরলো? মোটেও না। হান্ড্রেট পারসেন্ট নো। তারা নিজেদের আখের গোছানোর একটা ধান্দা বের করলো।

নতুন দেশ যে ধরনের উন্নয়ন মূলক কাজ পাক না কেন, এই নব্যগোষ্ঠীদের তাতে ভাগ দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হল। নানান বাহারি নামে সেই সব প্রকল্প চালু হল। বস্তুত এরা সবাই এমপিওভুক্ত সুশীল সমাজের নাগরিক। এরা সরকার ও বিরোধীদল রাষ্ট্রের যেটুকু লুটপাট করে অবশিষ্ট থাকে, সেই অবশিষ্ট অংশের পুরোটাই খেয়ে ফেলা এদের কাজ। আপনারা বলুন তো আইন ও শালিশ কেন্দ্র কি? একটি এনজিও।

আর এর প্রধানগণ হলেন সুশীল সমাজের হত্যা কত্তা। বলুন তো গ্রামীণ ব্যাং কি? একটি এনজিও। এর প্রধান একজন নোবেল জয়ী বুদ্ধিজীবী। গরিবের টাকায় যার যতো পোদ্দারি। বলুন তো সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ বা সিপিডি কি? একটি এনজিও।

যার প্রধানগণ দেশে থিংক ট্যাংক হিসেবে সকল সমস্যার সমাধান বাতলে দেন বিনা পয়সায়! বলুন তো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি কি? একটি এনজিও। যার প্রধানগণ দেশে কি পরিমাণ দুর্নীতি কে করেন, তা বিনা পয়সায় পরিমাপ করার দায়িত্বে রয়েছেন। বলুন তো উন্নয়নের জন্য সুশাসন বা সুজন কি? একটি এনজিও। যার প্রধান দেশে সুশাসন কিভাবে নিশ্চিত হবে বিনা পয়সায় সেই সব উপদেশ বিলি বণ্টন করেন। এমন হাজারো সুশীলদের নিয়ে হাজার হাজার ভাগে বাংলাদেশের প্রকৃত সম্পদ লুটপাট হচ্ছে।

লুটপাট হচ্ছে সম্মিলিত ভাবে। এমপিওভুক্ত সুশীলরা আবার ভাগে একটু কম পড়লেই ভোল্ট পাল্টে উল্টো বিবৃতি বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। ভাগ ঠিক আছে তো জি হুজুর জি আচ্ছা জি জাহাপনা! আমাদের এই এমপিওভুক্ত সুশীলরাই দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নানান ধরনের কুটকথা ধার দেন। কুপরামর্শ দেন। ওয়াজ নছিয়ত করেন।

তাদের বুদ্ধি-পরামর্শে যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, সেই দলের পকেট কাটার জন্য তারা নানান ফন্দি ফিকির করেন। রাতের ঘুম হারাম করে প্রাইভেট টেলিভিশনের টকশোতে মাতলামি করেন। কথা গুছিয়ে বলতে পারেন না, কিন্তু তিনি কত্তো বড় বুদ্ধিজীবী সুশীল। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর তবু সরাসরি জনগণের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করতে হয়। লোক দেখানো ভোটের নির্বাচন করতে হয়।

এলাকার কালভার্ট ব্রিজ রাস্তা উন্নয়ন করতে হয়। চুরি চামারি দুর্নীতি'র কথা নাইবা কইলাম। কিন্তু এই যে এমপিওভুক্ত সুশীলরা, এদের চুরি-চামারি, দুর্নীতি কেউ কি কোনোদিন ধরেছে? জনগণের সঙ্গে সেই চুরি'র কোনো সম্পর্ক নেই। সেটা স্রেফ হিজ হিজ হুজহুজ ব্যাপার। এক ইউনুস কাহিনী ঘাটতে গিয়েই থলের বিড়াল বের হয়ে গেল! বাংলাদেশে যতো এনজিও আছে, সবগুলোতে খোঁজ লাগান, একই চিত্র পাবেন।

মিডিয়ার সামনে বড় বড় বুলি ছাড়েন, আর প্রকল্পের গাড়িতে করে বাজারে যান। তেলের হিসাব পর্যন্ত ঠিক মতো লেখেন না। আর সরকারকে ট্যাক্সের বেলায় চোরা খাতা বের করে আয় ব্যয়ের একটা কাল্পনিক চেহারা হাজির করেন আমাদের এই তথাকথিত এমপিওভুক্ত সুশীলগণ। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে এই এমপিওভুক্ত সুশীল সমাজ। এদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নাই।

এরা ঘূর্ণিঝড়ের ছবি দেখিয়ে বিদেশ থেকে বড় বড় দান মারেন। এরা মানববন্ধনের ছবি দেখিয়ে বড় বড় আন্তর্জাতিক এইড পান। এরা এসিরুমে বসে দেশের সকল সমস্যা নিয়ে সেমিনার করে কোটি টাকার বাজেট দেখান। এরা হল আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজ। এরা আবার এমপিওভুক্ত।

সো, সরকার একটু খোঁজখবর নিলেই এরা বিরোধী পক্ষে সুর তোলেন। আবার গোপন বৈঠকে সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে দিনের বেলায় এরা কথিত সমাজ সেবায় ব্যস্ত দিন কাটান। এমনিতে তথাকথিত এমপিওভুক্ত সুশীল সমাজ থেকে সাধারণ জনগণ সব সময় দূরেই থাকে। আর এরা সাধারণ জনগণের নানান অসহায়ত্বের ছবি দেখিয়ে কোটি টাকার দান মারেন। এরা এতোই মুখোশধারী যে সাধারণ খালি চোখে এদের চেনার উপায় নেই।

এদের সঙ্গে যদি আপনি কাজ করেন, তাহলেও বোঝার উপায় নেই। যদি এদের সঙ্গে আপনার কোনো কাজে বনিবনা না হয়, তাহলেই এদের চরিত্র হুট করেই ধরতে পারবেন। সো, সাধু এমপিওভুক্ত সো কলড সুশীল সমাজ থেকে সাবধান!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।