আগের কিস্তিতে আমাদের সংবিধানের কিছু অগনতান্ত্রিকতার চিত্র তুলে ধরবার চেষ্ঠা করেছিলাম। কিন্তু আলোচনা শেষ হয়েছিল নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতির মাঠে বিবাদমান প্রতিপক্ষের কৌশল আর নীতি দিয়ে। এই কিস্তিতে রাজনীতির মাঠে আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নেবার চেষ্ঠা করব। কারন বাংলাদেশের রাজনীতি এখন আর কোন স্থানিক রাজনীতি নয়, এর সাথে জড়িত হয়ে পড়ে অনেক রাষ্ট্রে স্ট্যাট্রেজিক স্বার্থের বিষয়গুলো। তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নির্বাচিত হয়ে আসা রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে বর্হিবিশ্বের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার গুরুত্বকে বিচার বিশ্লেষন করা জরুরি।
কারন একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের এবং তার স্বাধীন বিকাশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে যে বাধা বিপত্তিগুলো আছে তার সুরাহা ছাড়া একটি জনপদ টিকে থাকতে পারে না।
ইদানিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র এবং আমাদের প্রতিবেশি চীন আর ভারতের ভূমিকাগুলোর বিচার ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক কার্যক্রমের অর্থ বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে কে কখন কিভাবে কার স্বার্থ উদ্ধারের ব্যবস্থা করছেন সেটা বোঝা জরুরি। তবে এটুকু মনে রাখা জরুরি যে, এই দেশগুলো একে অপরের প্রতিযোগী এবং প্রতিপক্ষ হিসেবেও কাজ করে। এদের স্বার্থে মিল অমিল দুই আছে।
সেই সাথে এদের নিজেদের মাঝে রয়েছে ইতিহাস। সেক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্তে পৌছানোর আগে এই পরাশক্তিগুলোর নিজেদের মাঝে সংকট এবং তা সমাধানের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়াগুলোতে আমাদের চোখ বোলাতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাই এদের পররাষ্ট্রনীতির ছাপকে অস্বীকার করার উপায় নেই আমাদের। বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হলে হয়ত ভিন্ন চিত্র দেখতাম আমরা।
চীন ভারতের সম্পর্ক এবং ১৯৬২ যুদ্ধের প্রেক্ষিতঃ দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন ভারতের স্বার্থ এবং তার সাথে চীনের সম্পর্ক বোঝা জরুরি বিষয়।
চীন ও ভারতের সাম্প্রতিক সম্পর্ক খুব ভাল যাচ্ছে না। অনেক দিক থেকে চীন তার সীমান্ত নিয়ে প্রতিবেশিদের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখতে পারছে না। চীনের সীমান্ত অধিগ্রহন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিন কোরিয়া আর জাপানের মাঝে সংকট প্রবল হয়েছে। চীনের সীমান্তে মার্কিন বিমান এবং জাপান ও দক্ষিন কোরিয়ার বিমান অনুপ্রবেশ করেছে বলে চীনা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে। এই লিখবার সময় পর্যন্ত যতটুকু আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলছে তাহল মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চাইনীজ প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং বৈঠক করছেন।
সীমান্ত নিয়ে এই সংকটের প্রভাব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত পৌছানো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের চীনা সাবমেরিন ক্রয়ের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। তারা এটাকে বঙ্গোপসাগরে চীনা অনুপ্রবেশের আশংকা হিসেবে অভিহিত করেছে।
যাই হোক ফিরে আসি ১৯৬২ সালের যুদ্ধের প্রেক্ষিতে। ভারতে তৎকালিন সময়ে নেতৃত্বে কাল্পনিক সাম্রাজ্যের চিন্তায় বিভোর ছিল।
যার কারনে বাস্তবতার সাথে তাদের ছিল না দূরতম সম্পর্ক। যার মূলে ছিল নেহেরুর ফরওয়ার্ড পলিসি এর মর্মার্থ আধিপত্যবাদ। ম্যাকমোহন লাইনে আকসাই চিন এলাকা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয় প্রাথমিকভাবে। নেহেরু ম্যাকমোহন লাইনের এমন কোন অস্তিত্ব মেনে নিতে চান নি যেটা তার আধিপত্যবাদের সাথে সংগতিপূর্ন নয়। সামরিকভাবে সমাধানের চিন্তা করেছেন তিনি, যদিও এর আগে চীনাদের সাথে পঞ্চশীল চুক্তি করেছেন।
যা শান্তিপূর্ন অবস্থানের পাঁচ নীতি হিসেবে পরিচিত। এরপরও তিব্বতকে নিয়ে নেহেরু রাজনৈতিক খেলায় মেতে উঠেন। দালাই লামাকে দিয়ে তিব্বতের রাজনৈতিক মুভমেন্ট করানোর চেষ্ঠা করেন। মার্কিন সহায়তায় তিব্বতের বিদ্রোহী গ্রুপের কাছে অস্ত্র বিক্রয় সহ দালাই লামাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হয় চীন বিরোধী প্রচারনার জন্য। সেক্ষেত্রে চীনা কূটনৈতিক মহল থেকে বারংবার বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারত একাজ একতরফাভাবে চালিয়ে যেতে থাকে।
চৌ এন লাই বহুবার দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা বললেও ভারত সরকার তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছে এবং সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দাবীকৃত অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। এ ব্যাপারে নেহেরুর ১৯৪৫ সালের উদ্ধৃতি থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চায় নি ভারত কখনো। অনেক ছোট রাষ্ট্রকে নিজের করায়ত্ত করতে তার প্রচেষ্ঠাকে এখনো সাউথ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিমন্ডলে টিকিয়ে রেখেছে ভারত।
In 1945 Nehru wrote:
“The Pacific is likely to take the place of the Atlantic in the future as a nerve centre of the world Though not directly a Pacific state, India will inevitably exercise an important influence there. India will also develop as the centre of economic and political activity in the Indian Ocean area, in south-east Asia and right up to the Middle East.... For the small national state is doomed. It may survive as a cultural, autonomous area but not as an independent political unit.”
তার কথার সূত্র ধরেই সিকিমের পরিনতির দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে স্পষ্ঠ হতে থাকে ভারতের আধিপত্যবাদের চেহারাটা। এছাড়াও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সুবীর ভৌমিকে লেখাপত্রের মাঝেও সে ধরনের ব্যবস্থা নেবার ইঙ্গিত আমরা পাই।
আকসাই চিনকে নিজের অঞ্চল দাবী করে মিলিটারি অপারেশন চালানো হয়। যে মিশনের গোপন নাম ছিল “লেগহর্ন”। কিন্তু এই মিলিটারি মিশনের ভাগ্য তাই হয়েছিল যা সহজেই অনুমেয়। চীন মত পরাশক্তির কাছে বিপর্যস্ত হতে হয়েছিল।
দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় চীন ভারতে সম্পর্ক দিয়ে অনেক কিছুই নির্ধারিত হচ্ছে এবং হবে।
যাকে খোদ নেহেরু মনে প্রানে বিশ্বাস করতেন এবং এটাই দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে তিনি দেখতেন। তবে নেহেরু এ্যাংলো-আমেরিকার ছাতার নিচে বসে চীনকে মোকাবেলা সম্ভব বলেই ভাবতেন। তিনি নিজেই এ ব্যাপারে বলেছেন, “Never forget that the basic challenge in South-East Asia is between India and China. That challenge runs along the spine of Asia.” ভারতের আধিপত্যবাদের বিপরীতে একমাত্র আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ হল চীন।
এই আঞ্চলিক পরিস্থিতিকে মেনে নিতে গিয়ে আমাদেরকেও অনেক চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হয়েছে। গভীর সমুদ্রে বন্দর নির্মানে আমাদেরকে চীনা স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, এনার্জির ক্ষেত্রে মার্কিন স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
সামরিক অস্ত্র ক্রয়ে রাশিয়া এবং চীন। এছাড়া ভারত পানি চুক্তি, বন্দি বিনিময় চুক্তি ছাড়াও সন্ত্রাসবাদকে রুখতে নিরাপত্তা চুক্তি যার মাধ্যমে ভারত বিরোধীতার নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এছাড়াও অনেক চুক্তি আছে যা ভারত একতরফাভাবে সেগুলোকে অকার্যকর করে রেখেছে। যেমন ছিটমহল নিয়ে ইন্দিরা মুজিব চুক্তি, আমাদের পানি ন্যায্য পাওনার ক্ষেত্রে চুক্তিগুলো। সব সময় এই চুক্তিগুলোর বিনিময়ে ভারত আমাদের কাছ থেকে আশা করে আসছে তার সেভেন সিস্টারসের যে বিদ্রোহী গ্রুপগুলো আছে তাদেরকে শায়েস্থা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূ খন্ড সর্বোচ্চ ব্যবহার কিভাবে করা যায়।
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে পন্য পরিবহন সুবিধাসহ, রেল লাইন স্থাপন করা জরুরি হিসেবে দেখেছে ভারত। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভারতের এক বিশাল বাজার। এই বাজারকে আরো শক্তিশালী করবার প্রয়াস থেকে ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে হস্তক্ষেপের ব্যাপারেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামনের নির্বাচনকে তাই শুধু নির্বাচনই বলা যায় না এর সাথে জড়িয়ে আছে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নানা যোগসূত্র।
দিল্লীর এ্যাম্বেসীর প্রধান কর্মকর্তার পঙ্কজ সরন নিজেকে খুবই নগ্নভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি দলের বা জোটের পক্ষে উপস্থাপন করেছেন।
মনে রাখতে হবে এটা ভারত রাষ্ট্রের ইচ্ছার প্রতিফলন। আরো নির্দিষ্ঠ করে বললে দিল্লীর শাসক শ্রেনীর। বাংলাদেশে কিছুদিন আগে ঘুরে গেছেন এক সচিব সুজাতা, তিনি অবশ্য এরশাদকে নির্বাচনে আসার জন্য জোর তাগিদ জানিয়েছেন এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে উগ্র মৌলবাদ বিরোধী শক্তির উত্থান হোক এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কারা এই উগ্র মৌলবাদী শক্তি? মহাজোটের বিপরীতে ১৮ দলের রাজনৈতিক উত্থানকেই তিনি ইঙ্গিত করেছেন। এর সাথে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইসলামী দলগুলোর উত্থান ভারত খুব ভালভাবে দেখছে না।
তার প্রমানই আমরা পাই মনমোহনের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বৈঠকের খবর থেকে। মনমোহন সিং বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদ নিয়ে চিন্তিত। আগামীতে বাংলাদেশ একটি উগ্র মৌলবাদি রাষ্ট্রে রুপ নিতে পারে বলে তিনি তার মার্কিন বন্ধুদেরকে বোঝাতে চেয়েছেন। ওবামা এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ব্যাপারে তার ইন্ডিয়ান বন্ধুদের সাথে জোর আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। সুজাতা আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন সামরিক কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে গেছেন।
বাংলাদেশে আগামী দিনের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর কি ভূমিকা হওয়া প্রয়োজন সে ব্যাপারে ওয়াজ নসিহত দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের আগামী দিনের যে কোন কর্মকান্ডের ব্যাপারে পূর্ন সহযোগিতার বাইরে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী যাতে অন্যকোন ভূমিকা না নেয় সে ব্যাপারটাই মুখ্য ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্ঠা সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মাঝে আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য কারো কথা শুনবার প্রচেষ্ঠা করবার সাহস যে নেই সে ব্যাপারে কিছুদিন আগে জনসম্মুখে কথাবার্তা বলেছেন। তার কথায় যে ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়েছে যে আগামী দিনে বাংলাদেশে সামরিক ফরমান জারি করা হলেও তা আওয়ামী লীগ এবং তার আঞ্চলিক মিত্র শক্তির বাইরে যাওয়ার উপায় নেই।
কিছুদিন আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ভারত সফর থেকে মার্কিন এবং দক্ষিন এশিয়ায় তার স্ট্যাট্রেজিক পার্টনার ভারতের মাঝে কিছুটা দূরত্বের আভাস মিলেছিল।
কিন্তু ভারতের সাথে মার্কিন সম্পর্কের ইতিহাস যদি দেখি বিশেষ করে আরেক আঞ্চলিক শক্তি চীনের বিরুদ্ধে তাদের কর্মকান্ডগুলো তাহলে এটা খুব সহজেই অনুমেয় যে এই সাময়িক দূরত্ব থেকে আশাবাদী হওয়ার কোন কারন নেই। বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের মাঝে যে জোরাল আলোচনা চলছে তার ফলাফল অতি শীঘ্রই আমরা পাব। বিশেষ করে এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে সংঘাত পর্ব চলছে তার মিমাংসার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত খুবই তাড়াতাড়ি একটি কমন জায়গায় চলে আসবে।
এই নির্বাচনকে ঘিরে প্রথম থেকেই অনিশ্চয়তার ব্যাপার ছিল। একটি একতরফা নির্বাচন সফল করে আনতে আঞ্চলিক শক্তির সমাবেশ আমাদের জনগনের দিক থেকে ভাবনার কারন।
এই প্রথম শুধু নয় এর আগেই বাংলাদেশের আভ্যন্তরিন বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের যৌথ কর্তৃত্ব এবং তাদের স্বার্থ উদ্ধারের ব্যাপারটা প্রকাশিত হয়ে গেছে। গেলো ২০০৮ সালের নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলারী ক্লিনটন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে পত্র সে ব্যাপারে মুখ খুলেছেন তিনি। তাতে এই বিষয়টাই প্রকাশিত হয়েছে যে আমাদের জনগনের ইচ্ছা নিরপেক্ষ কিছু আন্তর্জাতিক বিষয়ের গুরুত্ব পেয়েছে যা অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শক্তির কাঙ্খিত ফলাফল পেতে সাহায্য করেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের ব্যাপারে শেখ হাসিনা নিজেই তার বক্তব্যে বলেছেন যে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাছে গ্যাস ব্লক দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারনে তার দল নির্বাচনে হেরেছে। কিন্তু এইবার সে ভুল করেন নি শেখ হাসিনা।
শুধু তাই নয় সকল আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিকে খুশি করতে তিনি সচেষ্ঠ। তবে এই কাজের বিনিময়ে তিনি চান একটি লাইসেন্স। তাহল তার দলের সকল অপকর্ম সত্ত্বেও তার অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে তাকে বিজয়ী করে আনতে তিনি যে উদ্যোগ গ্রহন করেছেন সে ব্যাপারে সকল আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তির সমর্থন।
কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কোন সরলরৈখিক ব্যাপার না। শেখ হাসিনা সবাইকে খুশি করতে গিয়েছেন ঠিকই কিন্তু এই খুশি করার ক্ষেত্রে যে ব্যাপারটা ঘটে গেছে তাহল সবাইকে খুশি করতে গিয়ে আসলে সবাইকে খুশি করতে পারেন নি।
কারন এই সবাই এক না, খুশি করার ক্ষেত্রেও ভাবতে হবে এর খুশি মানেই ওকে অখুশি করা।
জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিত্বরা বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেক আগে থেকে সরব ছিলেন। বান কি মুনের ফোনের পরে এবার বাংলাদেশে এসেছেন ফার্নান্দো তারানকো। তিনি ইতিমধ্যেই জার্মান, কানাডা, চীনা রাষ্ট্রদূতের আলোচনা করেছেন। কিন্তু পরাশক্তির প্রতিনিধিরা ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে আলোচনার এই ছোট তালিকায় না দেখে একটু আশ্চর্য বোধ করছি।
এই ঘটনাটা কারন হিসেবে ভারতের আভ্যন্তরিন রাজনৈতিক পরিবর্তনের আভাসই মিলছে। ভারতে কংগ্রেসের ভরাডুবি বাংলাদেশের ব্যাপারে পরিবর্তনের ইঙ্গিত কিনা তা কিছুদিনের মধ্যেই বোঝা যাবে। তবে পরাশক্তির আলোচনার মাঝে আঞ্চলিক মহাশক্তি ভারতের গুরুত্ব না পাওয়াটা খুব তাৎপর্যপূর্ন। একটি নির্দিষ্ট দলের পক্ষে দূতয়ালী করায় আন্তর্জাতিক মহলে তাদের গুরুত্ব কমে যাওয়া একটি কারন হতে পারে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্বকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই।
কারন ভারত ২০০৮ সালের নির্বাচনে মার্কিনীদেরকে ভারত বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে আওয়ামী লীগ এবং তার মিত্র শক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্যদিয়ে দক্ষিন এশিয়ায় ভারত এবং মার্কিন স্বার্থের সহায়ক হবে।
তারানকোর বৈঠক বাংলাদেশের রাজনীতিতে শুধুমাত্র বিবাদমান রাজনৈতিক দলের ঝগড়া মিমাংসার জন্য নয়, এখানে বিদ্যমান আঞ্চলিক শক্তির মাঝেও এক ধরনের সমঝোতা প্রয়োজন মিটাবে।
পঞ্চোদশ সংশোধনী এবং ফার্নান্দেজ তারানকোঃ জাতিসংঘ বিদ্যমান সংবিধানকে পর্যালোচনা করে এর মধ্য থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করতে চান। এরই মধ্যে তিনি প্রশ্ন করেছেন যে সংবিধানের পুনঃস্থাপন করা যায় কিনা? সরকারের তরফ থেকে প্রথমেই বলা হয়েছে যে কেয়ারটেকার সরকার তারানকোর আলোচনার মূল বিষয় নয়। তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরীর ব্যাপারে তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন বলেই আমরা জানতে পেরেছি।
তাহলে আমাদের সংবিধানের পঞ্চোদশ সংশোধনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরীতে ব্যর্থ হয়েছে। এটা এখন স্বীকৃতি পেল জাতিসংঘের দ্বারা। জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনা হয়েছে তারানকোর তিনি নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে সরকারের অনুগতদের কাছে যে পরিবেশের খবর পেয়েছেন তা অনেকটাই উল্টে গেছে এতক্ষনে।
এই মূহুর্তে তারানকো কাছে যে জিনিসটি স্পষ্ট হতে শুরু করেছে যে কোন দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহন সম্ভব নয়। তাই সামনে কি হতে যাচ্ছে সেটাই দেখার ব্যাপার, কিভাবে বিদ্যমান সংবিধানকে টিকিয়ে রাখতে পারে এবং এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়!
যদি কোন ফর্মূলা বের হয়েও যায় বিদ্যমান সংবিধানকে বহাল রেখে, সেটার সর্বোচ্চ চেষ্ঠাই করা হচ্ছে বলে আমার ধারনা, তাহলে বাংলাদেশে গনবিরোধী সংবিধানের পূনঃজন্ম হবে।
এই সংবিধানের গনবিরোধী চরিত্রের প্রথম ভিকটিম হবে এই দেশের জনগন। কারন এই সংবিধানকে পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয় নি। কেড়ে নেয়া হয়েছে গনভোটের অধিকারটুকু। তাই আগামী দিনের রাজনীতি নির্ধারনের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে এই সংবিধান। তাই যদি নির্বাচনের ফলাফল কি হবে সেদিক মনোযোগের চেয়ে আমাদের জনগনের দিক থেকে প্রয়োজন সংবিধান পরিবর্তনের থেকে কেন সেকেলে মানসিকতার পরিচয় দিল দেশের শাসক শ্রেনী।
সংবিধানের বিধান বেগম খালেদা জিয়ার হাতে যা শেখ হাসিনার হাতে গেলেও তা। গনবিরোধী চরিত্র বহাল তবিয়তে রাখবে শাসক শ্রেনীর দুই অংশের প্রতিনিধিরা। (দ্বিতীয় কিস্তি)
প্রথম কিস্তি Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।