গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী বিশ্ব বিবেকের কাছে নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম একটি দিন আজ ৭ জানুয়ারি। দুই বছর আগে ২০১১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে কিশোরী ফেলানীকে নির্মমভাবে হত্যা করে ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) সদস্যরা। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ায় পাঁচ ঘণ্টা ফেলানীর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে বিএসএফ সদস্যরা ফেলানীর দুই হাত ও পায়ের ফাঁকে বাঁশ ঢুকিয়ে তাকে বহন করে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবাসী এই নির্মম ও করুণ দৃশ্য দেখে চোখের পানি ফেলেছে।
ফেলানীর সেই লাশ ছিল অরক্ষিত, বিপন্ন, রক্তাক্ত সীমান্তের জ্বলন্ত সাক্ষ্য।
ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, বিএসএফ সদস্যরা খুব কাছ থেকে তার চোখের সামনেই মেয়ে ফেলানীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। বিএসএফ তাদেরকে সতর্ক করা ছাড়াই গুলি করে। ওরা থামতে বললেই ফেলানী বেঁচে যেত। পাঁচ ঘণ্টা পর কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানীর মৃতদেহ নামানো হয়।
তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩০ ঘণ্টা পর ফেলানীর লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ। ফেলানীর বাবা বলেন, ওরা নিহত ফেলানীর অলঙ্কারগুলো পর্যন্ত রেখে দিয়েছে।
কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানীর লাশের ছবি মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ ও ভারতে বিএসএফের নিষ্ঠুরতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কেঁপে ওঠে বিশ্ব বিবেক। মতামত দেয়া শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
তারা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে ‘মৃত্যুর দেয়াল’ ও ‘দক্ষিণ এশিয়ার বার্লিন প্রাচীর’ আখ্যা দেয়। নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের বর্বরতার নিন্দা জানায়।
পরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম ঢাকা সফরে এসে ঘোষণা দেন, ‘বিএসএফ এখন থেকে নিরস্ত্র মানুষকে কোনো অবস্থায়ই হত্যা করবে না। ’ কিন্তু চিদাম্বরমের ঘোষণা বাস্তবায়ন হয়নি। ঘোষণা ঘোষণার পর্যায়েই রয়ে গেছে।
বর্বর বিএসএফ সদস্যরা গত দুই বছরে (২০১১ ও ২০১২ সাল) ৭৬ বাংলাদেশীকে হত্যা এবং ৪৭৪ জনকে নির্যাতন করেছে বলে সম্প্রতি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক পরিসংখ্যানে ওঠে এসেছে।
আমাদের ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ইউনুস আলী আনন্দ জানান, ফেলানী হত্যা ট্র্যাজেডির দুই বছর পার হতে চললেও সরকারের মন্ত্রী, এমপিদের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন আজও। কিছুই পায়নি ফেলানীর পরিবার ও এলাকাবাসী। ভারতের কাছে হত্যার বিচার, ক্ষতিপূরণ, ফেলানীর কবর এবং রাস্তা পাকা করা ও নামকরণের দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি ।
হত্যাকাণ্ডের পর ২০১১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামখানা কলোনিটারি গ্রামে ফেলানীর কবর দেখতে, তার পরিবারকে সান্ত্বনা ও আর্থিক সাহায্য দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তত্কালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, কুড়িগ্রাম-১ আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ আসনের এমপিমো. জাফর আলীসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছুটে যান।
সে সময় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামসহ এলাকার শত শত মানুষ তাদের কাছে এসব দাবি জানান। কিন্তু সেসব দাবি আজও আলোর মুখ দেখেনি।
এ ব্যাপারে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম জানান, ফেলানী নিহত হওয়ার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ বাদ জোহর পরিবারের পক্ষ থেকে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ফেলানী হত্যার বিচার, ভারতের কাছে ক্ষতিপূরণ আদায় করার সহ কিছু দাবি জানানো হয়েছে। আমাদের দাবিগুলো পূরণ হলে ফেলানী কবরে শান্তি পেত।
স্থানীয় রামখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহিদুর রহমান তালুকদার জানান, সরকারের মন্ত্রী-এমপির কাছে দাবির বাস্তবায়ন আমরা দুই বছরেও দেখছি না। ফেলানীর নামে করা রাস্তাটি দুই বছর ধরে পাঁচ-ছয়বার মাপা হলেও এটি পাকা করা ও নামকরণ নিশ্চিত করা হয়নি। কাজ হবে তিনি শুধু একথাই শুনেছেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।