দেশের বেশিরভাগ উল্লেখযোগ্য নদীর বুকে ভ্রমণের সুযোগও হবে এ পথে।
বাংলাদেশের নদী দেখানোর উদ্দেশে বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা বেঙ্গল ট্যুরস নতুন একটি ভ্রমণ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
সংস্থার পরিচালক রফিকুল ইসলাম নাসিম জানান, “সুন্দরবনে তাদের নিয়মিত ভ্রমণগুলো ছিল খুলনা-সুন্দরবন-খুলনা। এবার পর্যটকদের দেশের নদীগুলোকে দেখানোর কথা মাথায় রেখে নতুন ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। এ ভ্রমণে একজন পর্যটক দেশের বেশিরভাগ নদী দেখার সুযোগ পাবেন।
”
নারায়ণগঞ্জের ডেমরার শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বিকেল ৫টায় এ ভ্রমণের শুরু। বিকেলের রোদে নদীর বুক চিড়ে চাঁদপুরের পথে চলবে লঞ্চ। মেঘনায় সন্ধ্যা নামা দেখতে দেখতে এগিয়ে যাবেন। রাতে চাঁদপুরের ডাকাতিয়ায় এসে নোঙ্গর করবে। শুরু হবে রাতের খাওয়ার আয়োজন।
খুব সকালে জেলেদের মাছ ধরা দেখতে দেখতে লঞ্চ চলবে আড়িয়ালখাঁ, বরিশালের কীর্তনখোলা, ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীর বুকে। সেখান থেকে গাবখান চ্যানেল পার হয়ে দুপুর নাগাদ লঞ্চ এসে পৌঁছবে পিরোজপুরের কচা নদীতে। সেখান থেকে বলেশ্বর পেরিয়ে শরণখোলার পাশ দিয়ে প্রবেশ করা হবে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে।
সন্ধ্যা নাগাদ পৌঁছে যাবে কচিখালী অভয়ারণ্যে। এখানে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রাতে নোঙর করবে লঞ্চ।
সঙ্গে উপভোগের বিষয় হয়ে থাকবে সুন্দরবনের নিরবতা।
পরদিন সকালে কচিখালীর ছোট ছোট খালে নৌকায় ঘুরে বন্যপ্রাণী দেখা, জঙ্গলে হাঁটা, সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ শেষে আবারও লঞ্চ নোঙ্গর তুলবে কটকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের উদ্দেশে। বিকেলে কটকা ভ্রমণ, রাতে সেখানকার জঙ্গলের নিরবতা উপভোগ।
পরের দিন সকালে কটকার বনভ্রমণ। এরপরে আবারও সুন্দরবনের ছোট-বড় নদীখাল ধরে ফেরা শুরু।
চলতি পথে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে বরিশালের দিকে যাত্রা।
চাঁদপুরে মেঘনা নদী কীর্তণখোলায় জেলেদের পাল তোলা নৌকা
চাঁদপুরে মেঘনা নদী
কীর্তণখোলায় জেলেদের পাল তোলা নৌকা
কীর্তনখোলায় নোঙ্গর করে রাতযাপন। পরদিন খুব সকালে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা। এ পথে আবারও আড়িয়ালখাঁ, মেঘনা, পদ্মার পাশ দিয়ে শীতলক্ষ্যার ডেমরায় এসে পৌঁছানো।
চাররাত ও পাঁচদিনের এ ভ্রমণে জনপ্রতি খরচ হবে ১৪ হাজার ৫শ’ টাকা।
বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১৮ হাজার ৫শ’।
২ থেকে ১২ বছরের শিশুদের জন্য ৩০ ভাগ ছাড়। প্যাকেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ভ্রমণকালীন খাবার, লঞ্চে থাকা, সুন্দরবনে প্রবেশ, গাইড সেবা, আর্মস গার্ড, ঢাকা-ঢাকা যাতায়াত ইত্যাদি। যোগাযোগ : ০১৭৭৫১০৫৩৫১, ০১৭২০৫৬২৪১৩।
সুন্দরবনে ভ্রমণে প্রয়োজনীয় তথ্য
সুন্দরবন ভ্রমণে বন্যপ্রাণী দেখা কঠিন নয়।
ভ্রমণের সময় কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এ বনে অনেক প্রাণী দেখা সম্ভব। অবশ্যই জঙ্গলবান্ধব বা কেমোফ্লাজ পোশাক পরিধান করতে হবে। জঙ্গলে চলাচলের সময় সর্বোচ্চ নিরবতা পালন করতে হবে। কেউ কোনো বন্যপ্রাণী দেখলে শব্দ না করে অন্যকে ইশারায় জানাতে হবে। ভ্রমণে গাইডের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে অক্ষরে অক্ষরে।
জঙ্গলে হাঁটার সময় পানির বোতল সঙ্গে নিন। রাতে যথাসম্ভব নিরবতা অবলম্বন করুন।
এছাড়া সুন্দরবনে ভ্রমণের সময় কিছু বিষয় বর্জন করা জরুরি। বনে কিংবা পানিতে অপচনশীল কোনো কিছু ফেলবেন না। সব ধরনের প্লাস্টিক, পলিথিনজাতীয় প্যাকেট সঙ্গে নিয়ে আসুন।
দলছুট হয়ে একাকী কোথাও যাবেন না।
কচিখালী সৈকতে পর্যটক কটকার জঙ্গলে শিকরা
কচিখালী সৈকতে পর্যটক
কটকার জঙ্গলে শিকরা
বন্য প্রাণীকে কোনো রকম উত্যক্ত কিংবা বিরক্ত করবেন না। বনের কোনো গাছের পাতা ছিঁড়বেন না, ডাল ভাঙবেন না। জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ— এ কথা সবসময় মনে রাখুন। সুন্দরবনের খালে নামা বিপজ্জনক।
কটকটে লাল, হলুদ, নীল ও সুগন্ধি ব্যবহার করবেন না। জঙ্গলে ধূমপান করবেন না। বনে হৈ-হুল্লোড় থেকে বিরত থাকুন। উচ্চশব্দে মাইকে গান-বাজনা করবেন না।
সুন্দরবনে ভ্রমণে কিছু জিনিসপত্র সঙ্গে নিলে ভ্রমণটি বেশি উপভোগ্য হবে।
দুরবিন, ক্যামেরা, পর্যাপ্ত মেমোরি কার্ড, জঙ্গলবুট, হাতমোজা, পা-মোজা, রোদটুপি বা হ্যাট, হেড-ল্যাম্প কিংবা টর্চ, পতঙ্গ নিরোধক ক্রিম, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, মানচিত্র, জিপিএস ইত্যাদি।
আলোকচিত্র : মুস্তাফিজ মামুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।