আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংসদ নির্বাচনের এই ভরা মৌসুমে!

গনা নামের ছেলেটি সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ভর্তি হয়েছে কলকাতার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজে। যদিও গনার একটি সুন্দর পোশাকী নাম রয়েছে; কিন্তু পাঠকদের সেই নামটি আপাতত না জানলেও চলবে। গনা প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র হলেও তার আধখানা মন ইতোমধ্যে চলে গেছে ইংল্যান্ডে। কারণ আর কিছুই নয়- প্রেসিডেন্সির পাঠ চুকালেই তাকে পাঠানো হবে ইংল্যান্ডে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য। ১৯৩৫ সালে গনা প্রেসিডেন্সি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়ে স্নাতক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করল।

গনার সান্ত্বনা এতটুকুই যে, ক্লাসের আর কেউ প্রথম শ্রেণী পায়নি। ১৯৩৫ সালে গনা ইংল্যান্ডে এসে ভর্তি হলেন আইন বিষয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজে। পাঠ নিতে শুরু করলেন হিউ গেইটস্কেলের কাছে। যদিও গনা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজের ছাত্র; কিন্তু অন্যান্য কলেজের আর পাঁচজন উৎসাহী ছাত্রের সঙ্গে আমাদের গনাও যান লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিঙ্,ে বিশ্ব বিখ্যাত দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হ্যারল্ড ল্যাস্কির উদ্দীপক ফ্যাসিবাদবিরোধী বক্তৃতা শুনতে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সে শুনে ল্যাস্কির ফ্যাসিবাদবিরোধী শাণিত যুক্তি, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের তীব্র নিন্দা।

গনার মনে হয়_ কে যেন তাকে জাগিয়ে দিচ্ছে খুব গভীর থেকে। নাড়া দিয়ে তাকে কে যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের অপমান, চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে দারিদ্র্যের যন্ত্রণা।

রাতভর গনা পড়তে শুরু করলেন মার্কস এঙ্গেলসের বই। 'দাস ক্যাপিটাল', 'কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো', 'জার্মান রেমিডিজ' ইত্যাদি লেখা। পড়তে পড়তে গনার মনের জানালাগুলো একে একে খুলে যেতে থাকে।

তার মনে হয়, এই তো সঠিক সমাধানের দিশা_ সমাজতান্ত্রিক সমাজের পথ। কেন শুধু কিছু লোকের হাতে থাকে সম্পদের পর্বততুল্য সম্ভার আর কেনই বা অগণ্য মানুষ হয়ে থাকে অভুক্ত ও নিঃসম্বল। তার সব প্রশ্নের উত্তর সহজেই মিলে যেত ওইসব লেখাতেই। তিনি দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণমুক্ত স্বাধীন মানুষের উন্নত এক সমাজের স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। গনার মানসপটের এই আমূল পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যায় অল্প সময়ের মধ্যেই।

শান্তি ও সাম্রাজ্যের ওপর এক সম্মেলনে ১৯৩৮ সালের ১৫ এবং ১৬ জুলাই পণ্ডিত নেহরু এক ভাষণ দেন। সম্মেলনটির আয়োজক ইন্ডিয়ালীগ এবং লন্ডন ফেডারেশন অব পিস কাউন্সিল। নেহরুর সঙ্গে গনার এই প্রথম দেখা। প্রথম সাক্ষাতেই গনা নেহরুকে তেজোদ্দীপ্ত কণ্ঠে বললেন- তারা ভারতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। নেহরু স্মিত হেসে গনার কাঁধে হাত রেখে বললেন- 'আগে ভারত ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীন হোক তারপর আমরা সমাজতন্ত্রের কথা ভাবব।

' সময়ের পরিক্রমায় গনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। না, সফল ব্যারিস্টারি তার জন্য নয়, তিনি রাজনীতিই করবেন। ততদিনে তিনি মনস্থির করে ফেলেছেন তিনি কমিউনিজমের পথ ছাড়া অন্য কোনো পথে চলবেন না। আইনে আর তার কোনো আগ্রহ নেই। এক সময় তিনি স্থির করে ফেললেন পরীক্ষাতেই আর বসবেন না তিনি।

গনার প্রিয় শিক্ষক বেনব্র্যাডলে অসামান্য স্নেহ করেন গনাকে। কাছে ডেকে আদর করে বললেন- 'এমন আত্দঘাতী কাজ করতে যেও না গনা, পরীক্ষা না দিয়ে ব্যারিস্টার না হতে পারলে সমাজ সেটা তোমার অসাফল্য হিসেবে ভেবে নেবে?'

প্রিয় শিক্ষক বলে কথা- গনা তার উপদেশ শুনলেন এবং পরীক্ষাতেও বসলেন- তবে ফল বেরোনোর জন্য অপেক্ষা না করেই দেশের উদ্দেশে পাড়ি দিলেন। ১৯৪০ সালের প্রথম দিন। ঠিক চার বছর ইংল্যান্ডে কাটানোর পর গনা দেশের মাটিতে পা রাখলেন। গিয়েছিলেন ব্যারিস্টার হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে।

যদিও ব্যারিস্টার হলেন বটে কিন্তু ফিরলেন দুই চোখে সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। গাড়িতে বসে বাবার সঙ্গে অনর্গল কথা বলতে বলতে বাড়ি পেঁৗছলেন গনা। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর বাবাকে চমকটা দিলেন। একটা স্তব্ধতার ঘোমটায় ঢাকল চারপাশ। গনার বাবা ডা. নিশিকান্ত বসু ঘরে বজ্রপাত হলেও বোধকরি এতখানি আঘাত পেতেন না।

মা হেমলতা দেবীও যারপরনাই দুঃখিত হলেন। তাদের আদর্শের গনা তাদের এতদিনের স্বপ্ন ভেঙে দিল! সম্ভ্রান্ত, সম্পন্ন জমিদার বংশের ছেলে কমিউনিস্ট হবে? কিন্তু গনা তার সিদ্ধান্তে অটল। বিস্ময়ের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর বাবা বোঝাতে শুরু করেন, 'দেখো, রাজনীতি কর ঠিক আছে, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসও রাজনীতি করেছেন_ আবার একই সঙ্গে ব্যারিস্টারিও করেছেন। তুমিও না হয় তাই কর। ' কিন্তু গনা কিছুতেই দুই নৌকায় পা দিতে রাজি নন।

তিনি রাজনীতিকেই জীবনের ব্রত হিসেবে একেবারে মনস্থির করে ফেলেছেন।

এবার পাঠকদের সঙ্গে এই গনা নামের মানুষটির একটু পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। এই মানুষটি আর কেউ নন_ পশ্চিমবঙ্গের অবিসংবাদিত নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বসু- সংক্ষেপে জ্যোতি বসু। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন ও ব্যারিস্টারি পাস করে ১৯৪০ সালে জ্যোতি বসু বেঙ্গল আসাম রেলওয়ে ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন নামে একটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করেন নিজেকে। রাজনীতি করতে গিয়ে তাকে প্রায়ই পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে বন-জঙ্গলে।

হরহামেশাই রাত কাটাতে হয়েছে রেলের কয়লার বগিতে। অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথমবারের মতো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ২০০০ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘকাল এ দায়িত্ব পালন করেন। এখানে আমি ভারতের একজন মাত্র রাজনীতিকের সংসদ সদস্য হওয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছি। এখানে উল্লেখ্য, এটি ভারতের কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাঠখড় পুড়িয়ে এভাবে নিজেকে তৈরি করে নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে হয়। পশ্চিমা বিশ্বের উদাহরণ এখানে না-ই বা টানলাম। কিন্তু অন্যদিকে বাংলাদেশের চিত্রটি একেবারেই উল্টো। এখানে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারীদের স্বরূপ একেবারে আলাদা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাধারণত দুর্বৃত্ত, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ব্যবসায়ীদের আধিক্য ও প্রাবল্যই বেশি ।

বেশ কয়েক দিন আগে গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসন্ন সংসদ সদস্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। বেশ কয়েকটি পত্রিকা বেশ গুরুত্ব দিয়ে একটি নিউজ ছেপেছে যে, বিপুলসংখ্যক প্রার্থী গণভবনের সামনে বিলাসবহুল পাজেরো ও অন্যান্য দামি গাড়িসহযোগে আগমনের মধ্য দিয়ে তাদের বিত্তবৈভব প্রদর্শনের নির্লজ্জ প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। বাংলাদেশে দুর্বৃত্ত, সন্ত্রাসী ও ব্যবসায়ীরা কেন সংসদ সদস্য হতে চান? আমি অনেক ভেবেচিন্তে এর দুটি মনস্তাত্তি্বক কারণ উদ্ভাবন করেছি- প্রথমত, যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীটি সাধু কিংবা অসাধু যে কোনো উপায়েই হোক না কেন, এক সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান। তখন সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্মান আশা করেন। কিন্তু যখন তিনি মনে করেন, সেই সম্মানটুকু থেকে তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন তখন তিনি এমপি মন্ত্রী হয়ে সেই সম্মান অর্জনে উদ্যোগী হন।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে, অনেকেই (বেশির ভাগ মানুষই) রাজনীতিটাকে একটি ব্যবসা হিসেবে অবলম্বন করে সেখানে বিনিয়োগে উৎসাহিত হন। তিনি নিশ্চিতভাবে জানেন যে, এমপি-মন্ত্রী হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে দুর্নীতি করে তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা পয়সা অর্জনে সক্ষম হবেন। আর সেই জন্যই হঠাৎ তার নিজস্ব এলাকায় ঈদ কিংবা বিভিন্ন পূজা পার্বণে ঢাকঢোল পিটিয়ে জাকাত, ফিতরা দেওয়ার মতো মৌসুমী উৎসবে মেতে ওঠেন- কিংবা কোরবানিতে হাটের সবচেয়ে বড় গরু কিনে এলাকাবাসীর জন্য ভূরিভোজের ব্যবস্থা করেন।

পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি বৃহৎ দলেই যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন সংসদ সদস্যরা সচরাচর উপেক্ষিত ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিগৃহীত। উদাহরণ হিসেবে অনেক উদাহরণই হয়তো এখানে উল্লেখ করার যোগ্য; কিন্তু স্থানসঙ্কুলানের কথা ভেবে শুধু এ সময়ের আলোচিত গোলাম মাওলা রনির উদাহরণটিই তুলে ধরছি।

গোলাম মাওলা রনির সঙ্গে আমার পরিচয় ও সখ্য আছে বলেই শুধু বলছি না। আমি যেদিন প্রথম তার কথা শুনি সেদিনই আমার মধ্যে এই উপলব্ধি হয়েছে যে, হাতেগোনা যে ক'জন রাজনীতিক লেখাপড়া করেন তাদের মধ্যে রনি একজন। সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতার গঠনমূলক সমালোচনা করে সারা দেশে একদিকে তিনি হয়েছেন অসম্ভব জনপ্রিয়; অন্যদিকে তার দলের কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ও কারাভোগ। গোলাম মাওলা রনিকে যেদিন রুদ্ধ করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল টিভি পর্দায় পুরো ঘটনাটি দেখে বার বার শুধু আমার ব্রিটিশ এমপি চার্লস ব্র্যাডলাফের কথা মনে হচ্ছিল। কে এই ব্র্যাডলাফ? চার্লস ব্র্যাডলাফ (১৮৩৩-৯১) ছিলেন প্রগতিশীল ও মুক্তচিন্তার অধিকারী একজন রাজনীতিবিদ।

পেশায় তিনি ছিলেন সাংবাদিক। অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন মূর্তিমান সরব। দুর্দান্ত জনপ্রিয় এ মানুষটি ১৮৮০ সাল থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে সময়টায় নারীদের অধিকার ছিল অতি সামান্য_ তাই তিনি নারী অধিকার নিয়েও সোচ্চার ছিলেন। তার এ আন্দোলনে তিনি তার সহযোগী হিসেবে পেয়েছিলেন আরেক খ্যাতিমান নারীকে।

যার নাম অ্যানি বেশান্ত। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয় এলেনর মর্টন প্রণীত 'গান্ধীর জীবনে নারী' বইটিতে লেখক লিখেছেন, ১৮৮৭ সালে মোহনদাস গান্ধী অ্যানি বেশান্তকে প্রথম দেখেই তার প্রতি অনুরাগী হয়ে উঠেছিলেন। লেখকের মতে, বিলেতে সেটিই ছিল গান্ধীর কোনো নারীর প্রতি একতরফা প্রেম। সেই সময় বিলেতে অবস্থানরত ভারতীয় অভিবাসীরা ব্র্যাডলফকে অসম্ভব পছন্দ করতেন। কারণ ব্র্যাডলফ ছিলেন প্রচণ্ড সাম্রাজ্যবাদবিরোধী।

তিনি ভারতের ওপর আরোপিত ব্রিটিশ শাসনকে অন্যায় বলে মনে করতেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ঘোর বিরোধী। আর এ জন্য সব সময় তিনি পার্লামেন্টে ও বাইরের বিভিন্ন সভা-সমিতিতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতেন। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ব্র্যাডলফের প্রতি ছিলেন অসম্ভব রুষ্ট, ব্রিটিশ সরকারের মতে- এ যেন ঘরের শত্রু বিভীষণ। আর তাই ব্রিটিশ সরকারও তক্কে তক্কে ছিলেন তাকে কিভাবে শায়েস্তা ও নাজেহাল করা যায়।

ব্র্যাডলফ ছিলেন সময়ের চেয়েও আধুনিক। তিনি সে সময় জন্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে জোরালো প্রচারণায় লিপ্ত ছিলেন। ব্রিটেনের জনগণকে এ বিষয়ে সচেতনে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। ব্র্যাডলফ এ বিষয়ে একটি গ্রন্থও রচনা করেন। তার এই মামুলি কাজটিকেই আইনবিরোধী দেখিয়ে ব্রিটিশ সরকার তাকে আটক করে নিক্ষেপ করে কারাগারে।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এর বহুকাল পরে বিংশশতাব্দীর শুরুর দিকে চার্লস ব্র্যাডলফের জীবন ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পরবর্তীতে অজস্র রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী তাকে কারাগারে পাঠানোকে দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেছেন। আমিও অপেক্ষায় আছি। কোনো একদিন হয়তো গোলাম মাওলা রনিকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টির জন্যও কেউ হয়তো দুঃখ প্রকাশ করবে এবং আমার ধারণা বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতার গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনাগুলো চার্লস ব্র্যাডলফের মতো দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এবং ইতিহাসে খুব গুরুত্বসহকারে জাগয়া করে নেবে।

আমি আশা করি, আগামীতে যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন মেধাবী ও আলোকিত সংসদ সদস্যরা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পিছ-পা হবেন না। বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রায় অর্ধশতাধিক তরুণ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এটি ছিল একটি আশাজাগানিয়া ঘটনা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, যথাযথ হুইপিংয়ের কারণে তারা সংসদে সেরকম কর্মদক্ষতার পরিচয় দিতে পারেননি। এখন পাঠকদের মনে হয়তো এ প্রশ্নটি জাগতে পারে_ হুইপিং বলতে আসলে কি বোঝায়? পার্লামেন্টের ভাষায় এর অর্থ হলো পার্লামেন্টে দলীয় সদস্যদের গাইড করা, বৈঠকে তাদের উপস্থিতি ও তাদের ভোটদানে নিশ্চিত করেন। পার্লামেন্টে হুইপদের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজ নিজ দলের সদস্যদের বৈঠকে উপস্থিতি নিশ্চিত করা, দলের পক্ষে ভোট দিতে সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করা, দলীয় সদস্যদের প্রয়োজনীয় সব দলিল, কাগজ ও তথ্য সরবরাহ করা, পার্লামেন্টে সংঘটিত ঘটনাবলী সম্পর্কে দলীয় নেতাদের অবহিত করা, দলনেতার কাজে সহায়তা করা হুইপের দায়িত্ব।

লেখাটি শেষ করতে গিয়ে বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে এ কথা বলতেই হয়, আমাদের রাজনীতি যে শুধু পদ্ধতিগতভাবেই ত্রুটিপূর্ণ কিংবা দুই দলের কর্তাব্যক্তিদের অপরিসীম স্বেচ্ছাচারিতায় পরিপূর্ণ তা নয়। এসবের পাশাপাশি আমরা যারা সাধারণ ভোটার সেই আমরাও আমাদের দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারছি না। আমাদের ভোটারদের মন-মানসিকতাও পরস্পরবিরোধী ও বৈপরীত্যে ভরা। যেমন- ধরুন, আপনার এলাকার যে মানুষটি হঠাৎ পাজেরো হাঁকিয়ে, টাকার বস্তা উড়িয়ে এলাকা চষে বেড়ান, সে তো আপনার-আমার অতি পরিচিত কিংবা প্রতিবেশী। তাকে হয়তো আপনি-আমি বহুকাল ধরেই ভালোভাবে চিনি ও জানি।

নিজেকে কি কখনো এ প্রশ্নটি করেছেন? এতগুলো বছর কাটল, অথচ তাকে কোনো দিন একটি কড়িও খরচ করতে দেখলেন না। আচানক কেন সে এই মর্ত্যলোকে দাতা হাতেমতাই কিংবা দানবীর মুহসীন হিসেবে আপনার সামনে আবিভর্ূত হলেন। আমার মনে হয়, নিজেকে এখন এ প্রশ্নটি করার সময় এসে গেছে। কেন সে হঠাৎ আপনার কিংবা আমাদের পেছনে টাকা ঢালার জন্য এরকম ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। একটু বিবেকের দৃষ্টিতে ভেবে দেখুন_ শত কিংবা হাজার টাকার বিনিময়ে কি নিজের এলাকাটি তার কাছে বিক্রি করে দেবেন- নাকি আপনার এলাকাটি কোনো সৎ ও যোগ্য লোকের হাতে তুলে দেবেন? নিজেকে এই প্রশ্ন করুন।

একবার নয়, শতবার কিংবা হাজার বার, দেখবেন এর উত্তর একেবারে আপনার চোখের সামনেই।

লেখক : গল্পকার ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী।

ই-মেইল : barristershaifur@yahoo.com  

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।