আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাড়ীর টান ও বিনি সূতার বাঁধনে পি.এইচ.ডি পোলা [এক বিরাট গপ্প]-পর্ব ৪

গুরু সিরাজ সাঁই

তখন পড়ন্ত বিকেল, ফেবুতে অফলাইনে বন্ধু গোলাপের সাথে চ্যাট করছে বকুল.নানান কথার মাঝে বন্ধু জিগায়- আচ্ছা দোস্ত, বৈদেশ জীবনে এ পর্যন্ত কয়টা মাইয়্যার লগে ঠাকুর ডুবাইলি! এই প্রশ্নের শিকার হননি এরকম প্রবাসী পোলার সংখ্যা খুবই কম.রিপ্লাইয়ে বকুল জাস্ট একটা হাসির ইমো পাঠাল. কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলোর ব্যাপারে সত্যি কথা বললেও মানুষ মনে করে সাধু সাজতেছে.তাই চুপ থেকে মনের কথা মনেই পুষে রাখা ভাল, তবে সব বিষয়ই চেপে রাখতে গেলে মাঝে মাঝে ভাল রকমের সমস্যা তৈরী হয়. মনটা হালকা করার জন্য কিছু দুঃখের কথাগুলো কাউকে বলা গেলেও কিছু কঠিন সত্য কথা আছে যা প্রকাশ করতে নেই, পরিবার-পরিজন আত্নীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের সাথে সমাজে মিলেমিশে চলতে হয় বলে সবার মঙ্গলের জন্য অনেক সত্যি কথা তো বলতে নেই ই উপরন্তু প্রয়োজনে মিথ্যা বলতে হয়. বন্ধু গোলাপের সাথে তার একটা স্মৃতি আছে,একবার শিক্ষা সফরে জাফলংয়ে গিয়ে দেখে নদীটাতে কোমড় পানি, ৮ বন্ধু চিন্তা করলো ওখানকার স্বচ্ছ টলমল পানিতে গোসল করতে করতে হেঁটে পার হবে. হঠাৎ একজন ভাসা শুরু করল কারন বড় বড় পাথরগুলো তোলার পর নদীর ঐঅংশে গর্ত তৈরী হয় এবং জায়গাটার গভীরতা বেড়ে যায়. ও যে সাঁতার জানে না, এটা তারা জানতো না; আর নদীটা এত খরস্রোতা যে ও স্রোতের সাথে চলে যাচ্ছিল, এমন সময় ওর পাশে থাকা দুজন সাতার দেওয়া অবস্হায়ই পা দিয়ে ঠেলে ওকে জাগিয়ে রাখছিল. বকুল সাঁতরিয়ে ওর কাছে গেলো, সে এতটাই ভয় পেয়েছে যে কোমড় না ধরে বরং গলা জাপটে ধরলো. বকুলের শাষনালী বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, সাঁতরাতে পারছিলো না বিধায় দুজনেই ডুবে যাওয়ার উপক্রম তখন বকুল নিষ্ঠুরের মত এক লাথ্থি মেরে ওর কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায়, আসলে ঐ সময় তার মধ্যে ইয়া নাফসী ইয়া নাফসী কাজ করা শুরু করে, আগে তো নিজে বাঁচি বাকি সব গোল্লায় যাক. এসময় অন্য একজনের ডাকাডাকিতে একটা পাথর বহনের নৌকা এগিয়ে এসে প্রথমে গোলাপকে তোলে এরপর সে ওটার উপর উঠে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে. এখনও মাঝে মাঝে মনে হয় ঐ বন্ধুটি যদি সেদিন মারা যেত তাহলে বোধ হয় কোনদিনই নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না. আবেগের বসে সাহসী হয়ে অনেক মানুষই অন্যের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে যায় কিন্তু যখন দেখে সে নিজেই মরতেছে তখন অধিকাংশ মানুষেরই এই আবেগের মোহ কেটে যায়, অন্যের কথা ভুলে গিয়ে নিজে বাঁচতে চায়. পৃথিবীতে এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম পাওয়া যায় যারা দেখতেছে নিজে নিশ্চিত মৃত্যুবরণ করবে তারপরও অপরের জীবন বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টারত থাকে, এদের মত বড় মনের আর কেউ হতে পারে না.হ্যাঁ বাবা-মা হলো সেই ধরনের বড় মনের মানুষ. ছুডুবেলা নানী বাড়ী যাওয়ার পথে বকুল বাঁশের সাঁকো পাড় হচ্ছিলো খালে শিপ জাল দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে দেখতে,ফলে যা হওয়ার তাই হলো...পিছলে পড়ে গেল পানিতে. খালের মোড় হওয়ায় স্রোত খুবই বেশী. তার মা তখনও সাঁকোতে উঠে নি,এই দৃশ্য দেখামাত্রই শাড়ি বোরকা পড়া অবস্হায়ই তৎক্ষণাৎ ঝাপ দিল.খানিকটা সময় ডুব পারতে পারতে এক প্যাক পানি খাওয়া সন্তানরে উপরে তুলে আনলো. এক লোক এসে বলল এই ন্যান আপনার বাচ্চার জুতা জোড়া,আমার শিপ জালে আটকা পড়ছে. বকুলের মনে মনে কয় আমার হালাল পয়সার জিনিস কখনও হারাইতে পারে না,মাটিতেও পঁচবে না..পানিতেও নাহ. বাবা-মা ছাড়াও আরও এক জায়গায় এরকম বড় মন কাজ করে, সেটা হইলো বংশের বাত্তি. দাদার কাঁধে বসে পানিতে ডোবা রাস্তার ভাঙ্গা অংশ পার হচ্ছিল, এই জায়গাটা এমন যে শুকনা মৌসুমে কোন সমস্যা নাই কিন্তু বানের দিনে লুঙ্গি কাছার দিয়ে ক্ষেতের আইল ধরে পা টিপে টিপে পাড় হতে হয়.বকুলের দাদা আইল ঠিকমত ধরতে না পেরে ভুলদিকে হাঁটা শুরু করে,ফলে যা হওয়ার তাই হলো...গর্তে গিয়ে পড়ল, একে তো বুড়ো মানুষ তার উপর কাঁধে বসা নাতি তাই সাঁতরাতে না পেরে নিজে ডুবে গেলেও দু'হাত দিয়ে নাতিকে জাগিয়ে রাখলো. অন্য পথচারীরা উদ্ধার করে পাশেই মামাত শ্যালকের বাড়িতে নিয়ে গেল, এসময় সঙ্গে থাকা কাঠের হাতলের কালা রঙের ছাতা থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছিল. বন্ধু গোলাপ কয়, দোস্ত চীন নিয়ে একটা মজার ঘটনা ক.. এক লোকের লাগেজ কুনমিং ও বেইজিং বিমান বন্দরে স্ক্যানিংয়ের সময় চৈনিকরা মনে মনে কয় ইতা কি জিনিস! কেতলির মতন দেখতে তয় প্লাস্টিকের! আবার কোন ঢাকনাও নাই... এই আচানক জিনিস হেতারা না বুঝতারলেও ঢাকা বিমানবন্দরের স্ক্যানার সাহেব দেখে খুব মজা পাইছে, মুচকি হাসি ধরে রাখতে পারে নি. বকুল শুধাইলো এবছর বেইজিংয়ে আসা একজন লাগেজের ভিতরে 'বদনা' নিয়ে এসেছে বদনা !!! বড়ই উপকারী জিনিস, যে বিপদে পড়ছে শুধু সেই জানে....এখানে যখন প্রথম আসে ঐসময় বাইরে কোথাও গেলে টয়লেট চেপে রাখতো কেননা পানি দিয়ে না ধুতে পারলে গা কেমন ঘিনঘিন করত, এখন অবশ্য বকুল অভ্যস্ত হয়ে গেলেও টিস্যুর পয়সা বাঁচাতে চেপে রাখে ২ ইউয়ানের মিনি টিস্যুর প্যাকেট শেষ হয়ে যায় অথচ মনে হয় হলুদ প্রলেপ বুঝি থেকেই গেল. চিন্তা করেন একবার পায়খানা করতে ২৬ টাকার টিস্যু খরচ! তার ডরমের ওয়াশরুমে নো প্রোব, শাওয়ারের লেড পাইপ আছে কিন্তু বাইরে কোথাও গেলে নো ওয়ে..... পানির ট্যাপও নাই, হোস পাইপও নাই. তয় সব সময় তো চেপে রাখা যায় নাহ! একবার ছোট্ট এক শহরে বেড়াতে গিয়ে বাসস্ট্যান্ডের পাবলিক টয়লেটে ঢুকে বকুল বিষম খেলেও তার কিছুই করার ছিল না. জায়গাটা এমন যে শ্রেফ ভাল করে বোঝানোর জন্য বলা যায় আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে যেমন একপাশে অজু করার জন্য একটা ড্রেনের মত থাকে এখানে ওরকম ব্যবস্হা প্রস্রাব করার জন্য পক্ষান্তরে আমাদের প্রস্রাবখানাতে যেমন কোন দরজা থাকে না শুধু দুইপাশে দেয়াল থাকে তেমনি ব্যাবস্হা এখানে পায়খানার জন্য. বকুল দু'হাত সামনে এমনভাবে রাখলো যেন তার কোটি টাকার জিনিস কেউ না দেখতারে, পেছনে দেয়াল থাকায় সজেস বের হওয়া অংশ নিয়ে টেনশন নাইক্ক্যা দেশে বাসায় থাকাকালীন সময় সকালবেলা বাজারে যেত লেকের পাঁড় ষেঁষে, ঝোপেড় ভেতর থেকে এমন শব্দ শুনতে পেত যেন লুঙ্গি ফাটতেছে ওখানে মানুষটির চেহারা দেখা না গেলেও এখানে কে কেমন করে সাইরেন বাজাচ্ছে সেটা স্পষ্ট. আসলে একেক দেশের ঐতিহ্য একেক রকম, আমরা টয়লেট শেষে পানি ঢালার সময় হাত দিয়ে ডলে ডলে ধুঁই এবং ভাত খাওয়ার সময় হস্ত ব্যবহারের কথা শুনে ওরা অবাক হয়. বিকেল ৫ টা বাজার আগেই ফোন বেজে উঠল, বকুল উত্তরে জানালো ফং-ইয় আমি এইতো রাস্তায়... আসছি ডিনার পার্টিতে. চৈনিকরা কোন ব্যাপারে যে টাইম দিবে সেটা হল এক্কারে লাস্ট সময়, পারলে ওর আগেই শুরু করবে. চৈনিকদের খাবার সময়সূচী: সকালের নাস্তা খুব ভোরে খাওয়া, যথাসম্ভব ঘুম থেকে ওঠার পরপরই খেয়ে কাজ শুরু করা,পাড়া-মহল্লায় খাবারের দোকানে ভোর সাড়ে ৫টায় পিক আওয়ার শুরু হয়ে যায়, হকাররাও রকমারি নাস্তা নিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে.বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিং হলগুলোতে সকাল ৮টার পর তেমন বেশি কিছু পাওয়া যায় না, আর সাড়ে ৮টায় বন্ধ হয়ে যায়. দুপুরের খাওয়ার জন্য ১১টায় খুলে দেয়, ১২ টার পরে গেলে প্রায় সময়ই খাবার পাওয়া যায় না. অনেক সময় ২/১টা তরকারি থাকলেও ভাত শেষ হয়ে যায় কিংবা ভাত থাকলেও তরকারি থাকে না.অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিং হলে মুসলিম ছাত্রদের জন্য পৃথক ব্যবস্হা আছে, যেখানে তারা ক্লাস শেষ করে যেতে একটু দেরি হলেও যেন খাবার পায় [এখানে দেরি বলতে অবশ্যই সেটা ১২ টার আগে]কেননা অন্যরা প্রায় সব ধরনের খাবার খেতে পারে কিন্তু মুসলিমরা শুধু ‘হালাল’ খাবার খায় তাই তাদের জন্য হালাল খাবারের বিশেষ এই ব্যবস্হা. রাতের খাবারের জন্য বিকেল ৫টায় খোলে আর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বন্ধ হয় এব্যাপারে চাইনিজরা মনে করে তাড়াতাড়ি খাওয়া উচিত যাতে ঘুমানোর আগেই খাবার হজম হয়ে যায়. রেস্টুরেন্টে উপস্হিত হয়ে থিছিছ সুপারভাইজরের সাথে হ্যান্ডশেক করল.আজকের পার্টি দিয়েছে এমএসসি ও পিএইচডি শেষ হওয়া তারা ৯ জন, চৈনিক নিয়ম হল যারা পাশ করে চলে যাবে তারা শিক্ষক ও জুনিয়রদের সম্মানে পার্টি দিবে, এটা ব্যাচেলরদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য. বকুল তার সহপাঠী ও শিক্ষককে ধন্যবাদ জানাল থিছিছের কাজে হেল্প করার জন্য. থিছিছ টপিকস্ সিলেক্ট করার সময় এডভাইজররা খুব ঘুড়ায়, একটা লিখে নিয়ে যাওয়ার পর বলবে...নাহ হবে না, আরো journal paper পড়ে নূতন টপিকস্ লিখ. কম করে হলেও ৩/৪ টপিকস্ চেঞ্চ করাটা তাদের অভ্যাস. ছাত্রদের ব্যাপক টেনসে রাখে. খাওয়া শেষে তারা ৯ জন গেল KTV তে, সবগুলাই পোলা কোন মাইয়া নাই.বকুলের ইউনি ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনি, ছেলেমেয়ের অনুপাত ৭:১ ; ল্যাবে MSc, Phd মিলিয়ে ২৫ জন, মাত্র তিনডা মাইয়্যা. চৈনিক পোলারা টেকনিক্যাল বিষয়ে পড়তে পছন্দ করে, এরা ম্যাথে খুব্বি ভাল. পক্ষান্তরে শি-ফান বা Normal varsity তথা কলা ও বাণিজ্য রিলেটেড বিষয়ে ছেলেদের সংখ্যা খুবই কম. এমনকি ইংরেজী ভাষা বিষয়েও একই যেমন ক্লাসে হয়ত ৪০ জনের মধ্যে মাত্র ৩ জন ছেলে. বকুলদের ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের পোলারা উইকেন্ডে normal uni গুলোতে যায় মেয়েদের চান মুখ দেখতে ঠিক যেমনটি রুয়েটের পোলাপান যায় রাবি চত্বরে. অনলাইনে কেনা টিকেট নম্বর দেখাতেই KTV ক্যাশের লোকজন রুম নম্বর বলে দিল. ktv কোন টিভি চ্যানেলের নাম নয় এটা গান গাওয়ার জায়গা.রুমের ভেতরে টেলিভিশন, ক্যাসেট প্ল্যেয়ার, সাউন্ডবক্স অর্থাৎ সঙ্গীত উপভোগের জন্য যা যা প্রয়োজন সবই আছে, ক্যারাওকি সিস্টেমে মূল গানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গান গায়, মিউজিক ভিডিওতে টিভি পর্দায় লিরিক (গানের কথা) দেখা যায়, ওটার সাথে সুর মেলানো এখানে চৈনিক গান ছাড়াও English, korean, russian গানও আছে; বকুল ktv তে একটা ইন্ডিয়ান গানও খুঁজে পেয়েছে, এই একমাত্র গানটি আর অন্য কারও নয় বিগ বস্ শাহরুখ খানের মুহাব্বাতেন সিনেমার "আখে খুলিহো ইয়াহো বান, দিদার উনকা হোতাহে..... তু রুরু রু .... পিয়ার ক্যাছে হোতাহে" শুনতে অবাক লাগলেও বকুল আসলে হিন্দী ভাষা পারে না, মাঝে মাঝে সুমধুর গান শুনে,মিউজিক ভিডিও দেখে কিন্তু মুভি দেখে না বললেই চলে.শুধুমাত্র 'রাজনীতি'র মত নকলবিহীন ভাল কোন মুভি হলে ইংরেজী সাব-টাইটেল দিয়ে দেখে. চাইনিজ জোয়ান-বুড়া সবাই KTV নামে পাগল;এতটাই পছন্দ করে যে আগে থেকে বুকিং না দিলে ছুটির দিনগুলোতে টিকেট পাওয়া যায় না, অনেকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানও এখানে গিয়ে করে, গান গাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে খায়. ওরা ৯ জন সারা রাতের জন্য বুক করেছে, অফপিক আওয়ার হওয়ায় রেট কম. ওয়েটার কাম এডেনড্যান্ট মেয়েটি টিভিসহ সবকিছু অন করে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় ওদের সাথে কোন মেয়ে না দেখে একটা মুচকি হাসি দিল. সারা রাতের জন্য যারা বুকিং দেয় তারা সাধারনত সিঙ্গেল যায় না, ভিতরে গানের সুরে সুরে মজ-মাস্তি করে. যাহোক ওদের গান গাওয়া ছাড়া আর কিছু হল না, চৈনিক পোলাপান রাত জাগায় অভ্যস্ত নয় বলে ১২ টার পরেই একে একে ঝিমানো শুরু হয়ে গেল শুধু ১ জন ছাড়া,ঐ পোলার শখ হল গান গাওয়া,নিজের গিটার আছে. আর বকুলের জন্য রাত জাগা ব্যাপারটা পানি ভাত, ইন্টারমিডিয়েটে থাকাকালীন সময়ে জানালা খুলে পশ্চিমের আকাশে চাঁদ-তারা দেখতে দেখতে একজনের কথা ভাবত এবং কোন ধরনের চেষ্টা না করেই নিয়তিকে মেনে নিয়েছিল. তার স্মৃতি মনে করে স্লো মিউজিকের সাথে একটা গান গাইলো- ঐ চাঁদমুধে যেন লাগে না গ্রহণ জোছনায় ভরে থাক সারাটি জীবন সকাল বেলা ডরমে ফিরতে ফিরতে ভাবছে আর মাত্র দু'দিন পরেই কনভোকেশন.এসময় QQ এর qzone যে চৈনিকগোর স্ট্যাটাস দেখতে গিয়ে একজনের টা তে আটকে গেল. এই মেয়ের সাথে বহুতদিন আগে যেসময় gym এ পরিচয় হয়েছিল তখনও তার জীবনে চাং-সিন আসে নি. আরো দুই ফ্রেন্ডের লগে বকুল জিম করছে এমন সময় এক সুন্দরী রমণী এসে একজনের নাম ধরে ডাকাডাকি করছে, তার লগে এক পুরুষও আছে. জিমের গোসলখানায় গোসল করার সময় এ্যাপলের আইফোন হারানো এক কান্নারত মেয়ে তার দিকে এগিয়ে গেল,সুন্দরী রমণী খুব আচ্ছামত বকাঝকা করলো আইফোন চুরি হওয়ায়. অন্যমনস্ক থাকায় ঠিক মনে করতে পারছে না গোসলে ঢুকার আগে আইফোনটি কোথায় রেখেছিল.গোসল শেষে আর খুঁজে না পেয়ে মেয়েটি বকুলের মোবাইল থেকে ঐ নম্বরে ফোন করে, প্রথমবার রিং হলেও দ্বিতীয়বার রিং করার সময় দেখে নম্বর বন্ধ.সুন্দরী রমণীর সঙ্গে থাকা পুরুষটি মেয়েটিকে সান্তনা দিচ্ছিল এবং তারা দুজন চলে যাওয়ার সময় পুরুষটি তার নিজের আইফোনটি পকেট থেকে বের করে দিয়ে তাকে দিয়ে গেল. এরপর মেয়েটি ট্রেডমিলে দৌড়ানো এক পুরুষের সাথে কথা বলা শুরু করলো. বকুলকে সে তার ফ্যামিলির ব্যাপারে বলেছে,ছোটোবেলা থেকেই সে কখনও মায়ের সাথে থেকেছে আবার কখনো বাপের সাথে, কখনওবা দাদার আদরে বড় হয়েছে. বাবা-মায়ের মধ্যে বণিবনা হত না, তবে তারা কখনও সন্তানের সামনে ঝগড়া করতো নাহ. সিং-খোং/ তারায় ভরা আকাশ নামের এক মুভিতে এরকম দেখানো হয়েছে, বাবা-মা ক্যাসেট প্লেয়ার ছেড়ে দিয়ে ঝগড়া করে যাতে বাচ্চা রুম থেকে কিছু শুনতে না পায় যা সন্তানের মানসিক বিকাশে বড় রকমের প্রভাব ফেলে.আরো দেখানো হয়েছে divorce হওয়ার সময় বাবা-মা একলগে ক্ষমা চায় সন্তানের সাথে সুন্দর করে কাউন্সেলিং করার সময়. সুন্দরী রমণীর লগে আসা পুরুষটি তার বয়ফ্রেন্ড এবং ট্রেডমিলে দৌড়ানো লোকটি মেয়েটির বাবা, সে একমনে ব্যায়াম করেই যাচ্ছিল, একবারের জন্যও তাদের দিকে তাকায় নি. মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হল অনেকদিন ঘর করার পরেও হঠাৎ করেই যেন স্বামী-স্ত্রীর একজনের প্রতি আর একজনের টান কমে যায়, যেন ভিন্ন কিছু পেতে মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠে যাকে বলা যায় variety of spices. অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ঘোরটা সাময়িকের জন্য কাজ করে, পরে ঠিক হয়ে যায়, আগের মানুষের কাছেই ফিরে আসে. রক্ষণশীল সমাজে এই সময়টাতে যেটা হয় ভাল না লাগা সত্বেও জোড়াতালি দিয়ে সংসার কন্টিনিউ করে, অনেকে অবশ্য গোপনে পরকীয়া করে. ফাঁস না হলে কপাল ভাল কিন্তু যদি হয় তাহলে সংসার ছারখার হয়ে যায়. সংসার জীবনের এই সিচুয়েশনে ওপেন সমাজের লোক তালাকের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যায়, জোড়াতালির সংসারের ধার ধারে না যা কিনা আবার ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলে. একদিন রাতে মেয়েটি ফোন করে তার মন খুব খারাপ,আগামীকাল বকুলের সাথে কাটাতে চায়.কাহিনী হলো তার মা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালাক দিয়ে ঐদিন লগে আসা পুরুষটিকে বিয়ে করবে.স্বামীর পরকীয়া সমস্যায় আক্রান্ত এক মেয়েকে বকুল সাহায্য করতে চেয়েছিল প্রেমের অভিনয়ের মাধ্যমে,স্বামীটি যে মেয়ের সাথে পরকীয়া করতো তাকে নকল ভালবাসার মাধ্যমে ঐ পুরুষ থেকে বিমুখ করে নিজের দিকে টানতে.একবার মনে হয়েছে সফল হয়েছে কিন্তু না শেষ রক্ষা হয় নি.এই দুনিয়া বহুত জটিল জায়গা, বহুতদিন প্রেম করা মনের মানুষকে ছেড়ে পরকীয়া করা নূতনজনের হাত ধরে চলে যেতে চায়.মেয়েটি বলেছিল দেখো...বাঙালি ললনা স্বামীর পরকীয়ার খবর জানলেও ছেড়ে যেতে পারে না,ঠিক যেমনটি মাথায় চুইনগাম লাগলে চুল থেকে আলাদা করা যায় না, আঠার মত স্বামী সাথে লেগে থাকতে চায়.একমাত্র উপায় চুল কেটে ফেলা,মানে হইলো গিয়া মনে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া.অবাক ব্যাপার হল কাটা চুল যেমন পুনরায় বড় হয় তেমনি পরকীয়ার মোহ থেকে ফিরে আসলে ক্ষত মন আরোগ্য লাভ করে. পরের দিন সকাল ১০ টায় মেয়েটির সাথে দেখা হল, একসাথে ঘুরলো, খাওয়া দাওয়া করলো. রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে এমন সময় তার মা বারবার ফোন দিচ্ছে, একবার রিসিভ করে বকুলের হাতে দিয়ে বলে তুমি এই মহিলাকে ইচ্ছামতো গালি দেও,যা মনে আসে তাই বলো. রাতের বেলা দুজন ফাঁকা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ডরমে আসলো, সারাদিন অনেক হাসি-তামাশা হওয়ায় মেয়েটির মন এখন বেশ ফুরফুরে. বকুল বললো তুমি ফ্রেশ হও আমিও দ্রুত সাওয়ার নিচ্ছি. ওয়াশরুম থেকে বের হতেই মেয়েটি বললো,জরুরী কাজ আছে এখনি চলে যাব. বকুল কাউকে জোর করতে পারে না, মেয়েদের দৃষ্টিতে এটা কি একটা ছেলের ভাল দিক নাকি খারাপ দিক তা সে জানে না??? বকুল বিষম খেয়ে মেয়েটিকে ট্যাক্সিতে উঠিয়ে দিয়ে আসল, বাহিরে কনকনে ঠান্ডা বাতাস বইছে অথচ গরম কাপড় না পড়েই চলে এসেছে. একচুয়ালী বকুল মনের মধ্যে এতটাই আঘাত পেয়েছে যা শুধুমাত্র সেই বুঝতে পারবে যে জীবনে প্রথমবারের মত কোন নারীর পাণি গ্রহণ করতে গিয়ে আশাভঙ্গ হয়েছে. এই মেয়ে ওপেন মাইন্ডেড, যারা অলরেডি ঠাকুর ভোগ করেছে তারা ঠাকুর না ডুবানো যুবকের দেহে ঝড় তুলে অবশেষে ফিরিয়ে দিলে তার যে মনো-কষ্ট টা হয় সেটা কোনদিন বুঝতে পারবে না. বকুল একটা গান মনে করে ভাবতে লাগলো,রাতের আঁধারে বাঁশ বাগানে এসে শোয়া জিনিস খাঁড়া করে দিয়ে চলে গেলো- আমার লাইন হইয়া যায় আঁকাবাঁকা ভাল না হাতের লেখা আসো যদি বাঁশ বাগানে আবার হবে দেখা সখি...আবার হবে দেখা পর্ব ১

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.