আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোটযুদ্ধে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী সেই শহীদ কমিশনার

নির্বাচনের মাঠে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী নিয়ে সক্রিয় রয়েছেন পুরান ঢাকার ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী সাইদুর রহমান। হত্যাসহ বহু মামলার আসামি এই সাইদুর রহমান র্যাব ও পুলিশের খাতায় শহীদ কমিশনার হিসেবে পরিচিত। ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে মুক্তির পর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৬ (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন আত্দগোপনে থাকার পর বিরোধী দলের ডাকা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি শুরু হলে প্রকাশ্যে আসেন তিনি। শহীদ নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-৬ সংসদীয় আসনে নির্বাচন করছেন।

এ জন্য তার পক্ষে বিশাল ক্যাডার বাহিনী এলাকাবাসীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের অজুহাতে শহীদ কমিশনার পুরান ঢাকায় নতুন করে শুরু করছেন চাঁদাবাজি। ফলে আতঙ্কে আছেন ওই এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীরা। ঠাণ্ডা মাথার কিলার ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত শহীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে এলাকাবাসীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদনও করা হয়। জানা গেছে, ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন মিজানুর রহমান খান দিপু।

আর জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ। আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তে মিজানুর রহমান খান দিপু তার মনোনয়নপত্র ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। শহীদ কমিশনার তার পক্ষে কাজ করার জন্য সূত্রাপুর ও কোতোয়ালি থানা এলাকার সব স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ভোজসভায় দাওয়াত করেছেন। আজ তার বাড়িতে কয়েকশ শিক্ষককে দাওয়াত করা হয়েছে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এ এলাকার শিক্ষক সমাজ এখন খুবই বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে।

কারণ শহীদ কমিশনার বার বার লোক পাঠিয়ে তার দাওয়াত কবুল করতে বলেছেন। তারা জানান, সেখানে উপস্থিত না হলে ক্ষিপ্ত হয়ে শহীদ কমিশনার যে কোনো ধরনের ক্ষতিও করতে পারেন। শিক্ষকরা এও আশঙ্কা করেছেন, শহীদের কথা রক্ষা না করলে তিনি নির্বাচিত হলেও তখন সবাইকে খেসারত দিতে হবে। জানা গেছে, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান মণ্ডল হত্যায় নিম্ন আদালতে শহীদের বিরুদ্ধে ফাঁসির দণ্ডাদেশও হয়। ১০ বছর জেল খাটার পর উচ্চ আদালত থেকে তিনি খালাস পান।

তার বিরুদ্ধে সেন্টু ও শাহাদাত হত্যা মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতে থেমে আছে। ঢালকানগরের সেলিম, ভাট্টিখানার মাহবুব, সূত্রাপুরের নাসির, মিল ব্যারাকের বুংগা বাবু, ফরিদাবাদের আনু, পিন্টু, পিন্টুর ভাই সেন্টু, পোস্তগোলার শাহাদাৎ কমিশনার, সুমন, মিল ব্যারাকের মাইকেল, ফরিদাবাদ আলমগঞ্জের বাদল এবং কেবি রোডের সেলিম হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আলোচিত শহীদ কমিশনার। এসব হত্যা মামলার বেশ কয়েকটিতে তিনি জেল খেটেছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, শহীদ লোকজনকে ডেকে আনেন আলোচনার কথা বলে। আর ওইসব লোক ফিরে যায় লাশ হয়ে।

সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া ও শ্যামপুর এলাকার অপরাধ জগতের এক সময়ের সম্রাট ছিলেন তিনি। অভিযোগ আছে, বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে তিনি ব্যবহার করেছেন কালা জাহাঙ্গীর আর ডাকাত শহীদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে। অনেক ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও ভয়ে কেউ সাক্ষী দিতে পারেননি। তিনি এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। গেণ্ডারিয়ায় কবরস্থানের জায়গা দখল করে প্লট বানিয়ে নাম দিয়েছেন শহীদনগর।

অভিযোগ রয়েছে, গেণ্ডারিয়া রেলস্টেশনের বিপরীতে অন্যের জমি আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দখল করেন শহীদ কমিশনার। সেখানে প্লট বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন মার্কেটও। ডিআইটি প্লট বাসিন্দারা জানান, ডিআইটি প্লটের সৌন্দর্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা পুকুরটি তিনি দখলের জন্য নিজের নামে সাইনবোর্ড টানিয়েছেন। এসব ব্যাপারে শহীদ কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।