আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জঙ্গল আমাজান



পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা বিশ্বাস করত, বিশাল এ বনের মধ্যেই কোথাও লুকিয়ে আছে ‘এলডোরাডো’ নামক এক গুপ্ত শহর, যা পুরোপুরি সোনার তৈরি। এই ভ্রান্ত ধারণাটি এসেছে গ্রিক পৌরাণিক গল্প থেকে যেখানে বলা হয়েছে যে ‘এলডোরাডো’ নামক সোনায় মোড়ানো শহরটি পাহারা দেয় এক শ্রেণীর বিশেষ নারী যোদ্ধারা, যাদেরকে গল্পে ‘আমাজন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। পর্তুগিজ, স্প্যানিশ এবং ফ্রেঞ্চ অভিযাত্রীরা প্রতিযোগিতায় নামে এই ‘এলডোরাডো’ শহর আবিষ্কারের জন্য। কিন্তু কেউ এই কাল্পনিক শহরের খোঁজ পায়নি। শহরের সন্ধান না পেলেও স্থায়ী হয়ে যায় সেই নারী যোদ্ধাদের নাম।

তাদের নামানুসারেই এই জঙ্গলের নাম হয় ‘আমাজান’ জঙ্গল।

আমাজান জঙ্গল আমাজন নদীর অববাহিকায় অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিরক্ষীয় বন, যা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তরভাগে অবস্থিত ৯টি দেশের অন্তর্ভুক্ত। আমাজন অরণ্য ৬০% রয়েছে ব্রাজিলে, ১৩% রয়েছে পেরুতে এবং বাকি অংশ রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনেজুএলা, ইকুয়েড়র, বলিভিয়া, গুয়ানা, সুরিনাম এবং ফ্রেঞ্ছ গুইআনাতে। এ বনে আছে ১২০ ফুট উঁচু গাছ, ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ২.৫ মিলিয়ন প্রজাতির কীট-পতঙ্গ ১,২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২৮ প্রজাতির উভচর এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ হাজারো প্রজাতির অজানা জীব-অণুজীব। এখানকার প্রাণীবৈচিত্র অতুলনীয়।



আমাজান পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী হলেও পানির পরিমাণের দিক থেকে এক নম্বরে রয়েছে। আমাজান নদ প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ পঁচাত্তর হাজার ঘনমিটার পানি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আটলান্টিকে। পৃথিবীর তাবৎ নদনদী হয়ে যত পানি সাগর-মহাসাগরে পতিত হচ্ছে এর এক-পঞ্চমাংশ পতিত হয় কেবল আমাজান হয়েই। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, আমাজান নদের যে পরিমাণ পানি আটলান্টিকে পৌঁছে তা নদটির মোট পানিপ্রবাহের মাত্র ৩৩ ভাগ। আমাজানের মোহনা পৃথিবীর অন্যসব নদনদীর চেয়ে চওড়া।

এর প্রস্থ ৩২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এ মোহনার মধ্যেই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্বাদু পানির দ্বীপ মারাকোর অবস্থান। সমুদ্রের কাছাকাছি কয়েকশ কিলোমিটারের মধ্যে আমাজানের কোথাও কোথাও গভীরতা এমন কি সমুদ্রতল থেকেও বেশি! আমাজান নদের প্রধান দুই সন্তান অর্থাৎ শাখা নদী কুরুয়া ও মাদিরা। পৃথিবীর মোট স্বাদু পানির এক পঞ্চমাংশ স্বাদু পানি আসে আমাজন নদী থেকে।

একটি মজার তথ্য হলো, আমাজানের রয়েছে তিনটি নাম।

পেরুর আন্দিজ পর্বতমালার উত্সস্থলে আমাজানের নাম রিও সুলিমোস। রিও নেগো হলো ম্যানারুসের কাছ পর্যন্ত অংশ। আর ম্যানারুস থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত চলে আসা অংশের নাম রিও আমাজোনাস। সভ্য জগতের মানুষের মধ্যে সবচেয়ে প্রথম আমাজান আবিষ্কার করেন ফ্রান্সিস দ্য অরিলেনা। তিনি ছিলেন স্পেনের রাজপুত্র।

১৫৪১ সোনার শহর নামে খ্যাত এল-ডোরাডো শহরের খোঁজে বেরিয়ে আমাজানের সন্ধান পান তিনি।

আমাজান বনে মৌমাছির লক্ষ লক্ষ মধুর চাক দেখা যায়। একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী বলেন, 'আমাজান বনরাজ্য হচ্ছে জীববিজ্ঞানের এক বিরাট লাইব্রেরি, ভেষজ রসায়নের পৃথিবীর বৃহত্তম ল্যাবরেটরি, বিশ্ব আবহাওয়ার প্রাণকেন্দ্র। ' একটি প্রাণীর শরীর কাচের মত স্বচ্ছ। সব কিছু বাহির থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

তার শরীরের ভিতরের সব অঙ্গ প্রতঙ্গ এমনকি সে কি খেয়েছে সব খাবার। তার হৃদপিণ্ড যে পাম্প করছে সেই হৃতপিণ্ডের প্রতিটি কম্পন বাহির থেকে দেখা যাচ্ছে তখন ব্যাপারটা কেমন হয় বলুনতো! এমনই এক অদ্ভুদ ব্যাঙ পাওয়া আমাজান জঙ্গলে যাকে কাঁচ ব্যাঙ বা গ্লাস ফ্রগ বলা হয়। এই ব্যাঙের পেটের দিকের চামরা খুবই স্বচ্ছ হয়ে থাকে। এরা আমাদের দেশের গেছো ব্যাঙ এর মতো এবং এরা খুব ছোট হয়ে থাকে মাত্র এক থেকে তিন ইঞ্চি।

এই বনের স্তন্যপায়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাগুয়ার, গোলাপি ডলফিন, তামানডুয়া, তাপির, মানাতি, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি,বাদুড় ইত্যাদি।

পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঈগল, টুকান, হোয়াটজিন, দ্রুতগামী হামিং বার্ড এবং আরও রঙ-বেরঙের অনেক পাখি। পৃথিবীর সকল পাখির এক পঞ্চমাংশ পাখি এই বনের অধিবাসী। সরিসৃপের মধ্যে আছে বিখ্যাত সাপ বোয়া যা তার শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে। তাছাড়া রয়েছে কুমির, অ্যালিগেটর, কচ্ছপ প্রভৃতি। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পিঁপড়া, বড় তলাপোকা, রঙ-বেরঙের প্রজাপতি, শুঁয়োপোকা আর জানা অজানা হরেক রকমের পোকা-মাকড়ের বসতি এই আমাজনে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.