বুধবার সন্ধ্যা থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের আটক করা হয়। এর মধ্যে কয়েকজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
বড়দিনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার গুলশানের ওই কার্যালয়ে খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ওই অনুষ্ঠানের আগে-পরে পুলিশের আটক অভিযান চলে।
এর আগে সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার গুলশানের বাড়ির সামনে থেকে আটক করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে।
পুলিশের এই তৎপরতায় ক্ষোভ জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “অফিসে কোনো নেতাকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। গেইট থেকে নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমার বাসায়ও একই অবস্থা। এর নাম গণতন্ত্র!”
মঙ্গলবার ঢাকাযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণার পর রাতেই খালেদার গুলশানের বাড়িতে পুলিশ পাহারা জোরদার করা হয়। কার্যালয়ের সামনেও ছিল পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি।
সন্ধ্যায় খালেদা জিয়া আসার পর গুলশানের কার্যালয়ে ঢোকার পথে পুলিশ তাদের গাড়িতে তুলে নেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠতম সদস্য আর এ গনিকে। তাকে অবশ্য ছেড়ে দেয়া হয়।
খালেদা জিয়া কার্যালয়ে ঢোকেন সাড়ে ৭টার দিকে। বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর পেশাজীবী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে রাত ১২টার দিকে বের হন তিনি। এই সময়ের মধ্যে বাকিদের আটক করা হয়।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্য শাম্মী আখতার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কারাবন্দি আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিদ আউয়াল, ছাত্রদল নেতা আনিসুল ইসলাম অভি, বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নানকে গুলশানের কার্যালয়ের সামনে থেকে আটক করা হয়েছে।
তাদেরসহ সাবেক সংসদ সদস্য বকুলের মুক্তি দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, “স্বৈরশাসক সরকার বিরোধী দলকে দাবিয়ে রাখতে যেভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন ও গ্রেপ্তার চালাচ্ছে, তাতে তাদের শেষ রক্ষা হবে না। ”
সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তারকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তাবিদ আউয়ালকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এই বছরের মাঝামাঝিতে বিএনপির নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ফখরুলসহ দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করেছিল।
সম্প্রতি ওই কার্যালয় থেকে যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকেও আটক করা হয়।
সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তারকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
তাবিদ আউয়ালকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে যাওয়ার পর রাত সোয়া ৮টার দিকে ঢুকতে বাধা পান আর এ গনি। ওই সময় বাদানুবাদের এক পর্যায়ে তাকেসহ পাঁচজনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান অঞ্চলের সহকারী কমিশনার নুরুল আমিন বলেন, আর এ গনিকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন তারা।
“আমরা তাকে গ্রেপ্তারই করিনি, ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি আসবে কেন? তিনি কার্যালয়ে ঢুকতে চেয়েছিলেন, আমরা তাকে ওখান থেকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। ”
রাত সোয়া ৯টার দিকে কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পথে শাম্মীকে পুলিশ তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
তবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা উনাকে গ্রেপ্তার করিনি। ”
শাম্মীর সঙ্গে আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিদ আউয়ালকেও তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
মাল্টিমোড গ্রুপের ডেপুটি সিইও তাবিদের বাবা ব্যবসায়ী নেতা মিন্টুকে এক মাস আগে খালেদার বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এর মধ্যে শফিক রেহমানকে আটকের চেষ্টা চালিয়ে পরে মত বদলায় পুলিশ। রাত পৌনে ১০টার দিকে শফিক রেহমান বেরিয়ে এলে তাকে বগলদাবা করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা চালায় পুলিশ সদস্যরা।
ওই সময় বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন সেখানে ছিলেন। তখন পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে তার গাড়িতে শফিক রেহমানকে তুলে দেন।
এক পুলিশ কর্মকর্তা তখন শফিক রেহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “যান স্যার, আপনাকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা। ”
নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনের মধ্যে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েজন নেতা আটক হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
এর মধ্যে রয়েছেন মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, রুহুল কবির রিজভী, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, গোলাম আকবর খন্দকার, আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
পেশাজীবী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক
পুলিশের ধর-পাকড়ের পর বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে যান বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা, যার মধ্যে খন্দকার মাহবুবও ছিলেন।
খালেদার কার্যালয়ের সামনে ধরপাকড়ের পর সেখানে খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ পেশাজীবী নেতারা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, তাকে আটকের পর ছেড়ে দেয়া হয়।
খালেদার কার্যালয়ের সামনে ধরপাকড়ের পর সেখানে খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ পেশাজীবী নেতারা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, তাকে আটকের পর ছেড়ে দেয়া হয়।
এছাড়াও যান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, মাহফুজ উল্লাহ।
তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর রাত ১২টার দিকে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে বাড়ির পথে রওনা হন বিরোধীদলীয় নেতা।
নির্বাচন প্রতিহত এবং নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ‘ঢাকা অভিযাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণার পর মঙ্গলবার রাতেই খালেদার বাড়ির বাড়ির সামনে পাহারায় থাকা পুলিশ বাড়ানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার নূরুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তার বাসায় আগের চেয়ে দ্বিগুণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ”
এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মূলত বিরোধী দলীয় নেতার নিরাপত্তার জন্যই এ ব্যবস্থা। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।