আমার লেখা জুড়ে আমার ভালবাসা ছাড়া আর কিছু নেই।
- তার মানে তুমি খাবে না?
- একটু আগে সকালের ভাত খেলাম, এখন পেট ভরা।
- আমাকে শিখাচ্ছ? এখন বাজে ২ টা, আর তুমি বলতেছ ,তুমি একটু আগে সকালের ভাত খাইছ?
কথাটা বলে উত্তর শুনবার জন্য রুম্মানের দিকে তাকাল, ইপা। ইপা মেয়েটার রাগ করার অসীম ক্ষমতা আছে। হাসতে হাসতে রাগ করে, কাঁদতে কাঁদতে রাগ করে, ভাল বাসতে বাসতে রাগ করে।
আর রুম্মানের, বোধহয় উল্টাপাল্টা কাজ করার অসীম ক্ষমতা আছে। যা করে তার কিছুই ইপার পছন্দ হয় না। যা করে তাই ইপার রাগ করার মত হয়ে যায়। এই যে আজ দুপুরে ইপার দেখা করতে আসল। ইপাই বলেছে অবশ্য।
এটা রাগ করার মত কিছু না। কিন্তু আজ ইপা অনেক শখ করে ,রান্না করে নিয়ে আসল, রুম্মানকে খাওয়াবে তাই। রুম্মানকে খেতে বলাতে,দুপুর ২ টার সময় এসে বলছে, সকালের ভাত খেল একটু আগে। পেট ভরা। এতো শখ করে রান্না করল,ইপার রাগ হবে না?
আর রুম্মানও ঠিক বুঝতে পারে না, কি বললে ইপা রাগ করবে, কি বললে করবে না।
যাই করে, মনে হয় ভুল হয়ে গেল। মেয়েটা এতো শখ করে রান্না করে আনল, রুম্মানকে খাওয়াবে। আর রুম্মান একবার জানতেও চাইল না কি রান্না করেছে। উল্টা বলল,পেট ভরা। রাগিয়ে দিল ইপাকে।
রাগ ভাঙাতে হবে। রুম্মান বলল, আসলে আমি ঘুম থেকে উঠলাম ১২ টার দিকে। উঠে ফ্রেশ হয়ে খেতে খেতে দেরী হয়ে গেল।
- তার মানে তুমি খাবে না?
- না, খাব তো। কিন্তু এখন পেট ভরা।
চল, আমরা এখন গল্প করি। পরে দুজন একসাথে খাব, আচ্ছা?
- না। তুমি খাবে কিনা বল?
মেয়েটা রেগেই যাচ্ছে। এতো অল্পতে কেউ রাগ করে?রুম্মানের কি করা উচিৎ, ভাবনায় আসছে না। হঠাৎ বলল, আচ্ছা তুমি কি রান্না করে আনলে আমার জন্য?
ইপার মুখটা আনন্দে চিক চিক করে উঠল।
রাগী মুখে অনেকটা আনন্দের ছাপ, অপরূপ লাগছে। টিফিন বক্সটা খুলল ইপা। নুডুলস রান্না করে নিয়ে এসেছে। বক্সটা খুলে ইপা বলল, দেখো দেখো, আমি তোমার জন্য নুডুলস রান্না করে আনলাম। আমি নিজে রান্না করেছি, তোমার জন্য।
আমার বান্ধবীরা খেতে চাইল, দেই নি। একটুও না। বুয়া রান্নার সময় সাহায্য করতে চাইল, তাও করতে দেই নি। একাই রান্না করলাম। তোমার জন্য শুধু।
দেখো দেখো।
রুম্মান ইপার দিকে তাকিয়ে আছে অপলকে, মেয়েটা আসলেই কত আগ্রহ নিয়ে, কত ভালবাসা নিয়ে রান্না করেছে। ইপা রুম্মানের দিকে তাকিয়ে বলল, এই এই, আমাকে কি দেখো?দেখনা আমি রান্না করে আনলাম তোমার জন্য।
রুম্মান টিফিন বক্সের দিকে তাকিয়ে দেখল, পুরো বক্স ভর্তি নুডুলস। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খেতে অনেক সুস্বাদু হবে।
কিন্তু তাই বলে এতখানি? রুম্মান বলল, এতো রান্না করছ কেন?
- কই এতো? ২ প্যাকেট নুডুলস, ২ টা ডিম, আর হাফ কোয়ার্টার মুরগী দিয়ে। এতো টুকু খেতে পারবে না?
রুম্মান ইপার মুখের দিকে আর একবার তাকাল। বুঝতে চেষ্টা করল, না খাবার কথা বললে, আবার রাগ করবে কিনা ইপা। এরপর মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, কেন পারব না? অবশ্যই পারব।
একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ইপা বলল, নাও খাও।
কত ভাল তুমি।
রুম্মানের দিকে বক্সটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, কেমন হইছে একেবারে সত্যি কথা বলবে। আমাকে মিথ্যা কথা বললে, কিন্তু বুঝে ফেলব।
রুম্মান হাতে চামচ নিয়ে খাওয়া শুরু করল। আসলেই অনেক ভাল হয়েছে রান্না।
রুম্মান খাচ্ছে আর ইপা আগ্রহ নিয়ে দেখছে। তবে রুম্মানের খেতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আসলেই পেটটা ভরা। ইপা তা বুঝতে পেরে বলল, এতো আস্তে খাচ্ছ কেন? মুখের এই অবস্থা কেন? খুব খারাপ হইছে রান্না?
- আরে না, তা হবে কেন? আসলে পেট ভরা তো। তাই একটু কষ্ট হচ্ছে।
মাঝখানে একটু বিরতি নেই? পরে খাই আবার?
- জ্বি না, তা হবে না। একেবারে পুরুটুকু খেতে হবে।
- এতোখানি? আচ্ছা, আমি একাই খাব? তুমি নাও, তুমিও খাও।
- তাও হবে না। আমি তোমার জন্য রান্না করেছি, তুমি খাবে।
আমার বান্ধবীদের পর্যন্ত আমি দেই নি।
- ও জান, একটু তো বুঝ, আমার ব্যাপারটা। আমি এতো নুডুলস একসাথে খাই নি। এতো খাওয়া সম্ভব বল?
- সম্ভব। এই জন্যই তোমার এই অবস্থা।
খাবে না,আর দিন দিন শুকিয়ে কাঠ হবে। আমার পাশে হাঁট আর লোকে নানা কথা বলে। একটু খেয়ে দেয়ে মোটা হতে পার না? এতোটুকু নুডুলস খেতে পারবে না?
রুম্মান কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগল। ইপা তাকিয়ে রুম্মানের খাওয়া দেখছে। ছেলেটার আসলেই কষ্ট হচ্ছে খেতে।
কিন্তু এতো কষ্ট করে রান্না করা, রুম্মান খাবে না?ইপা রুম্মানের হাতটা ধরল। রুম্মান আস্তে করে মাথা তুলে তাকাল। ইপা বলল, থাক, আর খেতে হবে না।
- আরে না, খেতে পারব, সত্যি রান্না ভাল হয়েছে। বিশ্বাস কর।
রাগ কইর না প্লিজ।
- আমি কি শুধু রাগই করি? ভালবাসতে পারি না?
রুম্মান কথাটা শুনে থমকে গেল। ইপার চোখের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাল। ইপা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল, দাও তোমার খেতে কষ্ট হচ্ছে। আমি খাইয়ে দেই।
রুম্মান আস্তে করে মাথা নাড়ল। আর ইপা রুম্মানকে খাইয়ে দিতে লাগল। রুম্মানের চোখ, ইপার মুখের উপর আটকা। এই মিষ্টি মুখটা থেকে চোখ ফেরানো দায়। একমনে খেয়ে যাচ্ছে রুম্মান, আর ইপা খাইয়ে দিচ্ছে।
রুম্মানকে দেখতে কত অবুঝ লাগছে। মনে হচ্ছে খুব অবাক হয়েছে। এতো ভালবাসা হয়ত আশা করেনি। ভেবে বসে আছে, ইপা শুধু রাগই করতে পারে।
দুজনের এই দৃষ্টির মাঝে দারুণ ভালবাসা চলছে।
মুগ্ধতা ঘিরে দুজন থমকে আছে। ভালবাসা বুঝি এমনই। কখনও ভয়ে থাকা, এই বুঝি রাগ করল। কখনও ভেবে নেয়া, আর কত রাগ করব। একটু না হয় ভালবাসি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।