আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

waiting

নিজেকে নিয়ে কিছু একটা লেখার চেষ্টা, এখোনো করে যাচ্ছি . . .


ছেলেটা এই নিয়ে হাত ঘড়ি দেখলো তিন বার, বিকাল চারটা বেজে তেরো মিনিট হয়ে গেছে। অথচ আরো প্রায় ঘন্টা খানেক আগে এসে এখানে সে দাড়িয়ে আছে। বাবলী'র আসার কথা ছিল বিকেল তিনটায় কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার কোন টিকিটুকুও দেখা যাচ্ছেনা।

ছেলেটা আড়ং এর শো রুমের নীচে পায়চারী করছিল, রাস্তা ভর্তি মানুষ, গাড়ী - হরদম চলছে, রিকশার যানজট, ছেলে-মেয়ে এসব দেখেই যতটুকু সময় পার করা যায় সে চেষ্টাই সে করে যাচ্ছিলো কিন্তু কতক্ষণ। কয়েকবার ফোন দেবার চেষ্টা করেও ইচ্ছে করেই রাগে বাবলী'কে আর ফোন দেইনি।

সে আজ দেখতে চাই তিনটার কথা বলে সে কয়টায় আসে।

প্রায়শই এই ব্যপারটা ওদের দুজনের মধ্যে ঘটে। বাবলী ছেলেটার প্রিয় মানুষ। যেদিন ওরা দেখা করবে বলে বাবলী তার আগেই জানিয়ে দেয় কয়টার মধ্যে সে পৌছবে, ছেলেটা অফিস থেকে সেভাবে ছুটি ম্যানেজ করে চলে আসে দেখা করবার জন্য। ওরা এজন্য একটা স্থান ঠিক করেছে যেখানে প্রথমে দুজনে একসাথে হবে তারপর যেখানে খুশী ঘুরতে যাবে, আর সে জায়গাটাই হলো আড়ং।

কিন্তু এ ব্যপারটা পুরোনো নয়, ছেলেটা অনেকবার বুঝিয়ে বলেছে, রাগ করে বলেছে, অভিমান করে দেখা না করার কথাও বলেছে, অথচ বাবলী বরাবরের মতই ঠিক একই কাজ'টা সবসময় করবে, যে সময় আসবে বলে কথা দিবে কখনো সে সময় উপস্থিত হতে পারবেনা, কিছু না কিছু সময় দেরী হবেই।

কিন্তু আজ হচ্ছে মহা দেরী। এক, দু মিনিট করতে করতে প্রায় ঘন্টা খানেক পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু তবুও সে আসছেনা। ছেলেটা নিজে নিজেই রাগ করে আবার নিজেকেই বোঝালো, হয়তো কোন ঝামেলা হতে পারে সে জন্য আসতে দেরী হচ্ছে। তবু ধৈর্য বলে কথা, আর এভাবে রাস্তার ধারে কতক্ষণই বা পায়চারী করা যায়।

কিছুক্ষণ সে, যেখানটাতে রিকশাগুলো এসে থামে ওখানটায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো, কখন - কোন রিকশা'তে সে আসে। কিন্তু না, তবুও সে আসছিল না।

এই শেষ, আর এটাই শেষ মিনিট এর পর আর এক মুহুর্ত না, যথেষ্ট হয়েছে; এর বেশী কোন বাড়াবাড়িই ভাল না। কথাগুলো ছেলেটা নিজেই মনে মনে বলছিল আর রাস্তার চারপাশ'টা দেখছিলো, বাবলী এসে পড়লো কি না। বাবলী বলেছিল আজ সে নীল রং-এর একটা কাপড় পড়বে আর তাইতো এ রাস্তা দিয়ে যতজন নীল পোষাকের মেয়ে গিয়েছে একটাও তার চোখ এড়াইনি কিন্তু তারা কেউই বাবলী ছিলনা।

বাবলী'র কোন পাত্তাই নেই, এত যে দেরী হচ্ছে একটা খবরও তো দিতে পারে, সে দায়িত্বটুকুও সে পালন করেনি। ছেলেটা সত্যি সত্যি তখন প্রচন্ড রেগে গেল, কপালে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম আর ভ্রু কুচকানোঁ চেহারা দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে কিছু একটা হয়েছে তার !

এই শেষবারের মত ঘড়ি দেখা, শেষ মিনিট হতে আর ত্রিশ সেকেন্ড বাকী। শেষ দশ সেকেন্ড। ছেলেটা চোখ বুজে শেষ পাঁচ সেকেন্ড কাউন্ট শুরু করে দিয়েছে 5..4..3..2..1... & .... আর ঠিক তখনই কে যেন পাশ থেকে হাতে একটা মিষ্টি চিমটি কাটলো, তাড়াতাড়ি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে বাবলী এক হাতে কান ধরে আছে আর এক হাতে একটা মস্ত ব্যাগ। কোনরকম সহানুভূতি না দেখিয়েই ছেলেটা রাগের স্বরেই বললো "এখনই যদি আসবে তাহলে কেন আমাকে এক ঘন্টা আগে আসতে বললে ?" মেয়েটা কাচুমাচু করে কিছু বলতে যাবে তখনই ছেলেটা আবার বলল "কান ধরে আছো কেন, হাত নামাও" এবার তো বাবলী'কে কে পায়, উল্টো ঝাড়ি দিয়ে বলতে আরম্ভ করলো, 'কখন থেকে হাতে এই ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছি, একবারে ধরলেও না' ছেলেটা তাড়াতাড়ি ব্যাগ'টা হাতে নিয়ে মুচকি হেসে দিল।



ছেলেটার এই এক ব্যপার, মেয়েটার উপর কখনো বেশীক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না। এই রাগ করে, খুব রাগ, মনে হবে সব বুঝি এই রাগেই শেষ হয়ে গেল, কিন্তু না; মেয়েটা সামনে এসে দাড়ালেই সেই রাগ যে এই গলির রাস্তা থেকে শুরু করে মহল্লা পাড় হয়ে, শহর ছেড়ে, দেশ থেকে কোথায় পালিয়ে যায় ছেলেটা নিজেই বলতে পারবেনা।

..............................................................................................................................................................


বছর দুইয়ের বেশী হতে চলল, ছেলেটা আর এখানে আসে না; আর অপেক্ষা করেনা বাবলী'র জন্য। ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে নীল কাপড়ের বাবলী'কে আর খুজেঁনা, রাগও হয়না, অভিমান তো নয়; ঘড়ি দেখার কথা না ভুললেও ঘড়ি'র কাঁচটাতে যে ধূলো জমেছে সেটাও খেয়াল হয়না, আর শেষ মিনিটের শেষ পাঁচ সেকেন্ড কাউন্টডাওন-ও গোণা হয়না। ছেলেটা খুব অনুভব করতে থাকে সে সময়গুলোকে, তখন তার মনে হয়; ওই অপেক্ষায় অনেক ভাল ছিল, যত কিছুই হোক প্রিয় মানুষ'টাতো সামনে আসতে, না হয় একটু দেরীই করতো; পাশে দাড়িয়েঁ শক্ত করে হাতটা ধরতো, এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে কপালের উপর উঠিয়ে দিতো .. আরো কত কি !

..............................................................................................................................................................


দীর্ঘদিন পর ছেলেটা আজ আবার সেখানে গেল, কিন্তু কোন মন খারাপ করে নয়।

আর তার এই যাওয়াটা আনন্দের অনেক উচ্ছাসের। কারণ তার বাবলী আবার ফিরে আসছে, তাইতো ঠিক সেখানেই গেল যেখানে জমা হয়ে আছে পেছনের অনেক অনেক স্মৃতি অনেক আত্মকথা। আজ কিছুদিন পরেই বাবলী দেশে ফিরবে, আবার ঠিক এখানেই তাদের দেখা হবে, অপেক্ষা হবে, বাবলী'র দেরী করে আসা নিয়ে রাগ হবে, কথা কাটাকাটি হবে আবার মিলও হবে।

ছেলেটা চোখ বন্ধ করে কাউন্টডাওন শুরু করে আর ভাবতে থাকে - 5..4..3..2..1... & .... বাবলী বুঝি এই এসে চিমটি কেঁটে বললো - "এ্যাই দেখো, আমি এসে গ্যাছি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।