.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা
ঋণ নেই এমন মানুষ পাওয়া দুর্লভ । অথচ এত এত ঋণের পরেও তারা স্বচ্ছল, বিনোদন, সাধ-আল্লাদের ঘাটতি-কমতি নেই। জীবনটা বাকির খাতায় চলবে এটা হয়তো দেশে থাকতে ভাবতেই পারতাম না। দেশে সবকিছুই নগদে ঘটে। যথেষ্ঠ সম্পদশালী হলেই হয়ত ব্যাঙ্ক ঋণ মিলে।
পশ্চিমে শত প্রকার বীমা প্রতিষ্ঠান মানুষের ঋণের ভাগ্য প্রকৃতি নির্ধারণ করছে। দুর্ঘটনা, চিকিৎসা, মামলা যেকোনভাবে আপনার উপর চেপে বসতে পারে আরো কঠিনতর ঋণ যেটা মাসের কিস্তিতে দিয়েও সারা জীবনেও পরিশোধযোগ্য না। ঋণ পরিশোধের অপারগতায় আপনাকে তারা জেলে দিবেনা, কিন্তু ভবিষ্যতে ঋণ নেবার অনিবার্য বাস্তবতায় আপনাকে এক ঘরে করে ফেলবে।
ঋণকে ডাল-ভাতের মত বাস্তবতা মনে করে শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ফেলার মত মানুষের অভাব নেই। আপনি মরে গেছেন, আপনার ঋণ মাফ।
মামলা শেষ। কিন্তু পরকালে যাদের অন্ধ বিশ্বাস--তারা কি তৃপ্তি নিয়ে মরতে পারবে? অথবা ঋণের বোঝা ঠেলার জন্য মাসে মাসে যাদের সুদ দেয়া লাগে, আসলের সাথে । ঋণ শোধের আগেই যদি মৃত্যু হয়।
যারা ছাত্র হয়ে আসে তাদের ৬-১২ হাজার ডলার ঋণ জমে যায়। চাকুরি পেলে খরচ আরো বাড়ে, ঘর বাড়ি করার ইচ্ছে জাগে ।
তারপর সন্তানের পড়ালেখার বিশাল খরচ। এত এত ট্যাক্স দেবার পরে পুরোপুরি ঋণমুক্ত হয়ে ওঠা কি হয় আদৌ? সাথে যদি কোন দুর্ঘটনা যোগ হয়, যার কোন বীমা ছিলনা।
পশ্চিমে অমানুষিক পরিশ্রমের পরে যে উপার্জন, পরিবেশ, পরিস্থিতি, ধর্ম -সংস্কৃতির সাথে বেহিসাবি আপোস করা চলার যে মনোবৃত্তি তৈরি করতে হয় --তার সাথে বোঝাপোড়া প্রায়শই দুরহ। হালাল-হারাম, মদ-পর্ক, নামাযে স্থান-কাল ভুলে গেলে একটা জাগতিক উন্নতির রাস্তা তৈরি হয়--জীবনকে সহজসাধ্য করে নিতে অনেকেই সে পথেই প্রবাস জীবনটা গড়ে নেন। কিন্তু ধর্ম-সঙস্কৃতির কারাগার থেকে মুক্ত হতে না পারলে এই আপোসের টানা পোড়েনটা দুরহ।
অথবা ওরা নিজের দেশের যোগ্যতর মানুষ ফেলে আমাকে কেন বৃত্তি, চাকুরি সুবিধা দিবে সেটাই বোধগম্যতার মাঝে আসেনি এই ৫ বছরের প্রবাস জীবনে। এক বা একাধিক ডিগ্রির পরে নিজেকে কেন যথেষ্ট উপার্জনক্ষম মনে করবো, তারও যৌক্তিকতা পাইনা।
নামাযের সময় বিরতি বা স্থান না পেলে নিজেকে নিতান্তই হতভাগ্য মনে হয়। হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসা ঋণের আতঙ্ক আমাকে স্বস্তি দেয়না। ভিন দেশের নাগরিক হিসেবে একজন এটর্নি জোগাড় করার সামর্থ্য বা বীমা কোম্পানি আইন -আদালতের কঠোর মারপ্যাচে আমি জড়োসড়ো হয়ে থাকি।
ধর্মের বাধাগুলো সরিয়ে লোকাচারের সাথে মিশে গেলেই উন্নতি --এটা তো মর্ত্যের নিয়ম।
কিন্তু আমি ঋণ নিয়ে মরতে চাইনা, প্রবাসে ৫ বছর পরেও এতটুকু উন্নতি না হবার আক্ষেপ ছাড়াই বাঁচতে চাই, সামর্থ্য অনুযায়ী দু'বেলা রুটি খেয়েই বাঁচতে চাই । সামর্থ্যের বাইরে ক্রেডিট কার্ডের উপর ঋণগ্রস্থ থেকে সুখ-স্বচ্ছলতা চাইনা। আমি চাইনা যে ঋণ শোধের সামর্থ্য নেই, সেই ঋণ নিয়ে সুদের চাকা ঘুরিয়ে পশ্চিমা দেশে সুখি-স্বচ্ছল হতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।