আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।
দিনের শেষে বাংলাদেশ আপাদমস্তক প্যারাসাইটদের দেশ । দিনের শেষে নানাবিধ কৌশলে - অপকৌশলে সবচেয়ে কম সময় , শ্রম দিয়ে নিজের ঘরে লাভের গুড় সবচেয়ে বেশী তোলার সামর্থ্যকেই সাফল্য বলে বিবেচনা করার সমাজেই আমাদের নিত্য বসবাস ।
জন্মলগ্নের শুরু থেকেই বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত এমন কোন সময় অতিক্রান্ত হয়নি যখন সমাজের , রাষ্ট্রের স্তরে স্তরে চুরিচামারি , লুটপাট , পরগাছা স্বভাবের দরুণ অসংখ্য মানুষের সৃষ্টিশীল সম্ভাবনা অংকুরেই বিনষ্ট হয়নি । দেশের অর্থনীতি , রাজনীতি , সংস্কৃতির যেদিকেই তাকানো যাক ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ী , পাতি আমলা , কেরানী , প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিক , টকশো বুদ্ধিজীবী , শহরের বাহ্যিক ঝকঝকে চেহারায় বুঁদ উচ্চ-মধ্যবিত্ত সমাজে অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যেই ভূমিকা পালন করে সেই ভূমিকা্র প্রকৃত মূল্য জায়গায় জায়গায় ধ্বজভঙ্গ রোগের ওষুধ বিক্রী করার মূল্যের চাইতে বেশী কিছু নয় ।
তবুও দিনের শেষে এই আমরাই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী । আমাদের অঙ্গুলী হেলনেই ক্রসফায়ার জায়েজ , সোফা-হানা-টিকফা চুক্তি জায়েজ , ক্ষুদ্র ঋণ জায়েজ , এনজিও-কর্পোরেটের অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা জায়েজ , গার্মেন্টসের ফড়িয়া ব্যবসা জায়েজ এমন অজস্র অনুচিত উচিতে পরিণত হয়ে জায়েজ । এই আমাদের রাজনৈতিক চেতনার সর্বোচ্চো উদাহরণ হলো আসন্ন ৫ তারিখের নির্বাচন হবে কি হবেনা তা নিয়ে অর্থহীন ভাবনাচিন্তায় অযথাই নিজেদের সহ সবার সময় নষ্ট করা ।
আসন্ন ৫ তারিখের নির্বাচন হলে তাতে দেশ - জাতি ক্ষীরে , মাখনে ভরে যাবেনা । আবার এটাও এক অনস্বীকার্য সত্য এই নির্বাচন না হলে দেশে গণতন্ত্র রক্ষা করা যাবে , স্বৈরাচার সরকারের হাত থেকে গোটা রাষ্ট্র মুক্তি পাবে এমন ভাবনেওয়ালারা হয় আবাল নয়তো ধান্দাবাজ ।
যার কনামাত্রও অস্তিত্ব কোথাও দৃশ্যমান নয় সেটা রক্ষা করার প্রশ্ন আসে কোত্থেকে ? যা হচ্ছে তা হলো এমন সময়ে বিনা বিচারে নানাবিধ স্যাবোটেজ , কিলিং ইত্যাদির বিষয়ে এক ধরণের অলিখিত ইনডেমনিটি তৈরী হয়ে যাচ্ছে । এমনই এক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে যাতে ব্যক্তিগত শত্রুতাকেও রাজনৈতিক এক অবয়ব দিয়ে নিজ নিজ স্বার্থানুযায়ী তাকে চরিতার্থ করা যাচ্ছে । যা ঘটছে , যা অনিবার্যভাবেই ঘটবে তা হলো অসংখ্য ক্যাজুয়াল্টিকে ক্যাশ করে যে যার মতো করে নিজেদের কাজকর্ম করে যাবে । প্যারাসাইটদের দেশ বলে কথা !!!!!!
বিভিন্ন বিদেশী কূটনৈতিক , বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইত্যাদির ভূমিকা বাংলাদেশের আপাদমস্তক নগ্ন চেহারাকে তুলে ধরেছে । টালমাটাল সময়ে টিকফা চুক্তি সাক্ষর করানো গেছে , কাঁদের মোল্লার ফাঁসী কার্যকরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারকে একটা সময় পর্যন্ত চাপে রাখা গেছে , আসন্ন ৫ তারিখের নির্বাচন নিয়ে ঘনঘন তাদের দেশে আগমন ঘটছে ।
আমাদের অবশেষে বোধদয় ঘটেছে !!!!!! নাহ এই এনজিওবাজ , কর্পোরেট , ডঃ ঈউনূস , মানবাধিকার সংস্থানসমূহ , আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ বড্ড খারাপ জিনিস । এদের সংস্পর্শ অত্যন্ত সংক্রামক । আমাদের চোখে তারা এখনো পর্যন্ত নিষ্ঠুর , হৃদয়হীন , কিন্তু প্যারাসাইট কদাপি নয় । আমাদের মেঠো মেঠো অনুযোগ সেই পর্যন্ত যাবারই ক্ষমতা রাখেনা । এই বিষয়টা গ্রামে কোন ছেলে ধর্ষণ করলে সালিশে ছেলের বাপের ছেলেকে মার দিতে দিতে দৌড়ানী দেওয়ার মতো ।
এমনই সেই দৌড়ানী যাতে ছেলেও দৌড়ে পালিয়ে গেলো , লোকে ছেলের বাবার চরিত্রেরও প্রশংসা করলো কিন্তু ধর্ষণের কোন বিচার হলোনা !!!!!!!!!
অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদ লিখে গিয়েছিলেন " সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাবে " । গোটা সমাজের প্যারাসাইট চরিত্র , রাজনীতি , অর্থনীতিতে ভিক্ষাবৃত্তির প্রবণতার কারণে সেই কঠোর সত্যকেও বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মেঠো মেঠো সাহিত্যিক ভাষা বলে মনে হয় । দায়টা কার ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।