স্থানীয়রা বলছে, এলাকার আধিপত্য নিয়ে এই বিরোধ চলছে আর নির্বাচন এলে তা প্রকট হয়।
দশম সংসদ নির্বাচনের পরদিন সোমবার দুই পক্ষ সংঘাতে জড়ালে নিহত হন তিনজন, আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন আটজন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনটি গোষ্ঠীর লোকজন সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল। তারা হল- মধুচর, রামনাথপুর গ্রামের চকদার গোষ্ঠী, খন্দকার (খনকা) গোষ্ঠী ও মোল্লা গোষ্ঠী। এর মধ্যে খন্দকার ও মোল্লা গোষ্ঠী এক।
বিলাসপুররের মালেক তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই বিরোধ কোনো জমি বা টাকা-পয়সা সংক্রান্ত নয়। এলাকায় নিজেদের আধিপত্য নিয়েই মূলত বিরোধ। নির্বাচন এলেই তাদের মধ্যে বিরোধ আরো প্রকট হয়। ”
এই তিন গোষ্ঠীর অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। তবে কিছু দিন আগে খন্দকার ও মোল্লা গোষ্ঠী জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দেয়া শুরু করে।
এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল মান্নান খান। তিনি ভোটে হেরে যান জাতীয় পার্টির নেতা ও প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলামের কাছে।
আবুল কাসেম নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আহত আনোয়ার মোল্লাকে নিয়েই এ সংঘর্ঘের ঘটনা ঘটে।
“আনোয়ার মোল্লা লাঙ্গলের এজেন্ট ছিল। গতকাল (রোববার) দুপুরে তার সঙ্গে হুকুম চকদারের লোকজনের ঝগড়া হয়।
”
কাসেমের কথার মধ্যেই বৃদ্ধ মালেক তালুকদার বলে উঠেন, “কয়েকদিন আগেও আমি দুই পক্ষকে সতর্ক করে বলেছিলাম যে, তোদের মধ্যে কেউ খুন না হওয়া পর্যন্ত তোদের রক্ত ঠাণ্ডা হবে না। ”
আহত আনোয়ারের ভাই তৈয়ব আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনের আগে তারা আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এ কারণেই প্রতিপক্ষরা হামলা চালায়। ”
দেশি অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষের এই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়। ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন বলে সহকারী পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
নিহতরা হলেন- মোর্শেদ খন্দকার (৫০), তার ছেলে মাসুদ খন্দকার (২৮) ও আলাউদ্দিন চেয়ারম্যানের ভাগ্নে মকবুল মুন্সী (৩৬)।
স্থানীয়রা জানান, আলাউদ্দিন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হলেও নির্বাচনে তিনি সালমার পক্ষে কাজ করেন। আর তার প্রতিপক্ষ বাশার চকদার পরাজিত প্রার্থী মান্নান খানের অনুসারী ছিলেন।
এলাকার অধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওই দুই পক্ষের মধ্যে বহুদিন ধরেই বিরোধ চলছিল জানিয়ে ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিহতরা সবাই আলাউদ্দিনের সমর্থক।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন, আনোয়ার মোল্লা (৬০), তার বোন বসিরন নেছা (৫৫), বসিরনের ছেলে সুমন (১৪), আনোয়ারের আত্মীয় শাহজালাল খন্দকার (৫৫), তার স্ত্রী সালেহা বেগম (৪৫), আনোয়ারের মামাতো ভাই রেজাউল মোল্লা (৫০), আনোয়ারের স্বজন শাহ আলম (৩৫) ও আসলাম মোল্লা (৫০)।
এদেরকে প্রথমে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে বসিরন নেছা, সুমন, শাহ আলম ও সালেহা বেগমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
স্থানীয়রা জানায়, হাজারবিঘা গ্রামে বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা ও দোহার থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাশার চকদারের সমর্থকরা সোমবার সকাল ৯টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।
সংর্ঘের আহত আনোয়ার খন্দকারের বোন বসিরন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চকদার গোষ্ঠীর লোকজন দেশি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সকালে তাদের গ্রামে অতর্কিত হামলা চালায়।
তিনি আনোয়ারকে বাঁচাতে গিলে হাতে ও মাথায় আঘাত পান।
আনোয়ারের মামাতো ভাই আহত রেজাউল মোল্লা বলেন, হামলাকারীরা প্রথমে হাজারবিঘা গ্রামের ঢুকে মসজিদের কাছে এসে মকবুল মুন্সীকে পায়। তাকে কুপিয়ে হত্যার পর আনোয়ারের বাড়িতে ঢুকে।
দা, কুড়াল, চাপাতি, টেটা, চেনি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রায় দুইশ’ লোকজন হামলায় অংশ নেয় বলে আলাউদ্দিন পক্ষের অভিযোগ।
রেজাউল বলেন, “চকদার বংশের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করে মেরে গেছে। আমরা যে যার যার বাসায় ছিলাম।
”
দোহার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নির্বাচনের পর সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও এটি আসলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হয়েছে।
দীর্ঘদিন এই থানার কর্মরত এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “নির্বাচনের আগেও এই গোষ্ঠীরগুলোর মধ্যে বাজারে ও বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা দেখেছি এবং অনেক সময় সেই উত্তেজনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সমাধানও করতে হয়েছে। ”
এই সংঘর্ষের পর চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সহকারী পুলিশ সুপার শহীদুল জানান। গ্রেপ্তাররা হলেন, আনোয়ার চকদার, খোকন চকদার, তোতা চকচার ও আলী খন্দকার।
দোহার থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, যারা এ সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মধ্যেই মামলা হচ্ছে।
ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।