বাংলাদেশের গৌরব সুশৃঙ্খল একটি সেনাবাহিনী। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাংলাদেশের রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। দেশের ক্রান্তিলগ্নে জনগণের পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়ায় আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। এর উদাহরণ আমরা অনেক দেখেছি; আইলা দুর্গত এলাকায়, নিমতলীর অগ্নিকান্ডে এমনকি সর্বশেষ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে, এর বাইরে নানারকম উন্নয়ন কর্মকান্ডে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের মেধা ও মননের পরিচয় দিয়েছেন। দৃষ্টি-নন্দন হাতিরঝিল তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
নানা সময়ে দেশের অভ্যন্তরে জনমানুষের যা কল্যাণকর, মঙ্গলজনক সেখানে প্রয়োজনমতো পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল সবসময় এই সেনাবাহিনীকে বিতর্কে আনার চেষ্টায় লিপ্ত, সুযোগ এলেই সেনাবাহিনীকে নিয়ে রাজনীতিও করতে দ্বিধা করেন না। ১৯৭৫-এ সেনাবাহিনীকে একটি জঘণ্যতম হত্যাকান্ডে জড়িয়ে এর শুরু; এরপর নানা সময়ে এর অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলাসহ ক্যু তৈরি এবং রাজনৈতিক কাজে সেনাবাহিনীকে অপব্যবহার করে আসছে একটি রাজনৈতিক দল। বলতে দ্বিধা নেই, এক্ষেত্রে বিএনপি ও তার প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের অগ্রণী ভূমিকার কথা সবারই জানা। এমনকি জেনারেল জিয়ার শাসনামলে বিভিন্ন ছোট-বড় সামরিক অভ্যুত্থানে সেনা সদস্যদের মৃত্যু নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
তৎকালীন বিএনপি শাসনামলে ১৯৭৭-১৯৮১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ২১টি সামরিক অভ্যুত্থানে ১২০০’র বেশি সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য নিহত হলেও এসব অভ্যুত্থানের কোনো দৃশ্যমান বিচার হয়নি।
আবার জিয়ার শাসনামলেই বিনাবিচারে সেনাসদস্যদের নির্মম ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানোর মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনাও ঘটেছে। সেগুলোর বিচার আজ অবধি হয়নি। এটা সবারই জানা, জেনারেল জিয়ার সময় সামরিক বাহিনীতে সেনা অভ্যুত্থানের সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিল বা সম্পৃক্ত ছিল বলে সন্দেহ ছিল তাদেরকে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করা হয়েছে। সাধারণত অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়ে থাকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে তাদের ২/৪ জনের মৃত্যুদ- হয়ে থাকে।
সম্পৃক্ত বাকিদের অন্যান্য শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু তার সময়ে অভ্যুত্থানকারীদের প্রায় সকলের মৃত্যুদ- হয়েছে। সে সময় ২ সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের মৃত্যুদ- হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। শেষ পর্যন্ত জিয়াউর রহমান নিজেও সেনাঅভ্যুত্থানেই নিহত হয়েছেন। অথচ প্রচার করা হয়ে থাকে তিনি নাকি সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছেন।
দীর্ঘ ধারাবাহিক চক্রান্তের আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায় ঘটে যায় ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক একটি অধ্যায় রচিত হয়ে যায়, রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর জওয়ানদের কথিত বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করার মধ্য দিয়ে। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র এক মাসের মধ্যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে নবগঠিত মহাজোট সরকার। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানদের নানাভাবে সহযোগিতায় বিএনপির একাধিক নেতার জড়িত থাকার প্রমাণ জাতি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিডিআর জওয়ানদের বিরুদ্ধে বিচারকার্যের সময় বিপক্ষের আইনজীবীরা সবাই ছিল বিএনপিপন্থি।
তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়টি হলো, তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহের সময় রহস্যজনকভাবে আত্মগোপনে থাকা খালেদা জিয়ার অবস্থান নিয়েও জনমনে রয়েছে ব্যাপক সন্দেহ।
মহাজোট সরকার বিজিবিকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নতুন আইনের খসড়া মন্ত্রীসভায় অনুমোদনের পর ‘বর্ডার গার্ড আইন ২০১০’ সংসদে পাশ করা করেছে। ফলে বিডিআর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি নামে আতœপ্রকাশ করেছে। এছাড়া বিডিআর হত্যাকা-ের বিচারের জন্য এবং বিজিবিতে ভবিষ্যতে যে কোনো প্রকার বিদ্রোহ বন্ধের জন্য ‘বিজিবি অ্যাক্ট-২০১০’ সংসদে পাস করেছে; যা আর্মি অ্যাক্টের অনুরূপ। এই আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-।
আইন প্রণয়নের পর এই আইনের আলোকেই বিচারকার্য সম্পন্ন হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে আসামির সংখ্যা বিবেচনায় এতো বড় বিচার কার্যক্রম কোথাও কখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। সঙ্গত কারণেই এই বিচারকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও প্রশ্নাতীত করার লক্ষ্যে কিছুটা সময় লেগেছে। এরই সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট এই বিচার বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে বিরতিহীনভাবে নানাবিধ অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তারা ক্ষমতায় গেলে বিজিবি’র নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম এবং পোশাক বহাল রাখার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বিএনপি-জামায়াত জোটের অনেকেই ঐ সময় সেনা বিধি-৫ মোতাবেক সেনা আইনে এ বিদ্রোহের বিচারের বিরোধিতা করেছিল। বিডিআর-এর বিচার সংক্রান্ত বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে সেনাবাহিনী ও দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চক্রান্তে জড়িত ছিলো।
সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ক্যান্টনমেন্টের ৬ মইনুল রোডের বাড়ি থেকে রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু বাড়িটি ছাড়ার পর তিনি সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে নানারকম গুজব ছড়িয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। এমনকি সশস্ত্রবাহিনী দিবসে তাঁকে নিমন্ত্রণ করলেও তিনি আর সেখানে যাননি।
অপরদিকে, ২০১২ সালে খালেদা জিয়া বিভিন্ন জায়গায় লংমার্চ, রোডমার্চের নামে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য দেশব্যাপী বিভিন্ন সভা-সেমিনার করেন, সেখানে সেনাবাহিনীকে নিয়েও মন্তব্য করেন। সবসময় তাদের আহ্বান করেন ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খালেদা জিয়ার এই আহ্বানকে অগণতান্ত্রিক পন্থা বলে কোনো প্রকার ভ্রƒক্ষেপ করেনি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়। মূলত বিভিন্ন সময়ে তিনি একটি অগণতান্ত্রিক সরকার আনার চক্রান্তই করেছেন।
অতীতের মতো বর্তমানেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী নিয়ে সরগরম করে তোলার জন্য মূলত তিনি এরকম বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী প্রভাব বিস্তার করেছে; ক্ষেত্র বিশেষে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক ভূমিকা জনগণ কতৃক প্রশংসিত হয়েছে। তাই দেখা যায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা। কেননা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল সেনাবাহিনী। বিগত সরকারগুলোর লুটপাট, দুর্নীতি আর ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জনগণ যখন প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতায় ভুগছে তখন সেনাবাহিনীকে সে ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনৈতিক ভূমিকায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, দেশের পরিস্থিতি যাই হোক, সেটা ক্ষমতাসীন সরকারের বাইরে বরাবর খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা গ্রহণের আমন্ত্রণ অনেকটা রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর আস্থাহীনতার পরিচয় বহন করে।
গত কয়েক বছরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ দেশ ও দেশের বাইরে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এ ধরনের মিশনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর বিদেশে যে শুধু মর্যাদা বাড়িয়েছে তা-ই নয়, বরং বিভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে নিজেদের অভিজ্ঞতার পরিধি বিস্তৃত হতে সহায়তা করেছে এবং বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য ও চর্চার সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছে। অধিকন্তু, এতে অংশগ্রহণকারী সেনাসদস্যরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়তি আয় করতে পেরেছেন। পালাক্রমে ১ লাখ ২২ হাজার সেনা সদস্য ও সেনা কর্মকর্তা এ ধরনের মিশনে অংশ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ অর্জন একদিনে হয়নি। জাতির পিতা তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের মাধ্যমে এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সামরিক দিক দিয়েও এদেশকে স্বাবলম্বী করতে চেয়েছিলেন। তাঁর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এ অঞ্চলে একটি মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠা হোক। তাই স্বাধীনতার পর তিনি সেনাবাহিনীতে দক্ষ অফিসার গড়ে তোলার জন্য কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে জাতির পিতার নেওয়া পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময়কালেও অব্যাহত রয়েছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যাপক অগ্রগতি ও উন্নতি সাধিত হয়েছিল। ওই সময়কালে সেনাবাহিনীর উন্নতিকল্পে নেওয়া হয়েছিল নানা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ওই সময়কালে গঠিত হয় একটি কম্পোজিট ব্রিগেড, একটি পদাতিক ব্রিগেড, একটি সাঁজোয়া ইউনিট, দুটি আর্টিলারি রেজিমেন্ট, একটি রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, দুটি ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন, তিনটি পদাতিক রেজিমেন্ট ও একটি এসটি ব্যাটালিয়ন। তিনটি ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সমন্বয়ে ব্রিগেড আকারের স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনও গড়ে তোলা হয়। উন্নত অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহসহ সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয় দুটি ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ট্যাংক; এর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সিনিয়র অফিসার ও সমমর্যাদার অসামরিক কর্মকর্তাদের প্রতিরক্ষা নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এদেশের শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং। আধুনিক কারিগরি শিক্ষা ও তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশের জন্য গড়ে তোলা হয় মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে দেশকে আরো এগিয়ে নেওয়ার জন্য গড়ে তোলা হয় আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ। নতুন বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট গঠনসহ এই রেজিমেন্টের সদস্যদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার এবং নন-কমিশন্ড অফিসারদের উপযুুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় এনসিওস একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সার্বিক সমন্বয়ের জন্য পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল সেনাবাহিনীতে মহিলা অফিসার নিয়োগ। এছাড়া সেনাবাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করার পাশাপাশি উন্নত বাসস্থান, সৈনিকদের রসদ ভাতা বৃদ্ধি এবং টিফিন ভাতা প্রবর্তনসহ তাদের জন্য দুপুরে রুটির পরিবর্তে ভাতের প্রচলন করা হয়। সেনাসদস্যদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠা করা হয় ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয় নতুন মডেলের বিভিন্ন দূরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র। প্রতিষ্ঠিত হয় তিনটি নতুন পদাতিক ব্রিগেড, আটটি নতুন পদাতিক ইউনিট, ৪টি আর্টিলারি রেজিমেন্ট।
সেই সাথে প্রতিষ্ঠা করা হয় ট্রেনিং ডিভিশন ‘আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড’ সংক্ষেপে আর্টডক।
সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের এই ধারা মহাজোট সরকারের বর্তমান শাসনামলেও অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী সদস্যদের খাবারের মান বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিন বাহিনীতে কর্মরত সৈনিকদের রেশনে সমতা আনা হয়েছে। সেনাবাহিনী সদস্যদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার ও অন্যান্য পদবির সদস্যদের অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটি ৪ মাস হতে ৬ মাসে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও সেনা সদস্যদের সাধারণ পারিবারিক অবসর ভাতা ২৫% হতে বৃদ্ধি করে ৩৯% করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর অপারেশনাল ক্ষমতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের জন্য অত্যাধুনিক ট্যাংক, এআরভি, মিসাইল, ওয়েপন লোকেটিং রাডারসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ কামান ও ট্যাংকের গোলাবারুদ ক্রয় করা হচ্ছে। সাঁজোয়া ইউনিটসমূহকে আধুনিকীকরণ ও আর্টিলারি রেজিমেন্টের জন্য সেলফ প্রপেন্ড কামান ও সাউন্ড রেঞ্জিং ইকুইপমেন্ট, পদাতিক রেজিমেন্টের উন্নয়ন ও কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে নতুন করে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। একই সাথে সেনাবাহিনীর কল্যাণ কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্রাস্ট ব্যাংক ও হোটেল র্যাডিসন চালু করা হয়।
সেনাবাহিনীকে আরো কার্যকর ও যুগোপযোগী করতে উন্নত প্রযুক্তির সমরাস্ত্র সংগ্রহের কার্যক্রম নেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রয়োজনীয় খসড়া জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি ও ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন প্রকল্পে বর্তমান সরকার রাশিয়া থেকে এক বিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র ক্রয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। ভবিষ্যতে এসব অস্ত্র সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সর্বোপরি, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই নিরলস কাজ করে গেছে।
শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও যাতে দেশের সম্মান অক্ষুণœ রাখতে পারে তার জন্য সময়োপযোগী সব পদক্ষেপও সবসময় নিয়েছে সরকার। তাই সচেতন দেশবাসীকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে, যেন এই বাহিনীটিকে নিয়ে কোনোরকম সংশয় ও শঙ্কা তৈরি না হয়। সেদিকে সবার সতর্ক দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।