এডিটেড
অতিসাম্প্রতিক সময়ের দুটি খবর:
ভারত:
চীনের গোয়েন্দা বিমান ভেবে ভারতের সেনাবাহিনী লাগামহীন শ্রম এবং প্রচুর অর্থ খরচ করে দুটি গ্রহকে ছয় মাস ধরে অনুসরণ করেছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। এতে সারাবিশ্বে হাস্যরসের খোড়াকে পরিণত হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
কলকাতাভিত্তিক টেলিগ্রাফের বরাত দিয়ে শনিবার বিবিসি জানায়,চীনের গোয়েন্দা নজরদারি ধরতে গত আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনের মনুষ্যবিহীন বিমান(ড্রোন)ভেবে বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহকে অনুসরণ করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এ সময় তারা চীনের সীমান্ত রেখা অতিক্রম করে ভারতের আকাশ সীমায় ঢোকা অজ্ঞাত বস্তুর ৩২৯টি ছবি সংগ্রহ করে। সেগুলো ১৫৫ বার সীমান্ত রেখা অতিক্রম করে বলে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা জানান।
তারা মনে করেন এগুলো চীনের গোয়েন্দাবিমান। এরজন্য গোপনে বিভিন্ন কমিটি খোলা হয়। ভারতীয়সেনারা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে তদন্ত করতে থাকে। উন্নত প্রযুক্তির জন্য জার্মানি,ব্রিটেনের মত দেশগুলোর দ্বারস্হ হয় তারা। কিন্তু কোনভাবেই কোনকিছু বুঝে উঠতে না পেরে নিরুপায় হয়ে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য ভারতের জ্যোতির্পদার্থবিদদের শরণাপন্ন হয়।
এ বিষয়ে জ্যোতির্বিদ তুষার প্রভু টেলিগ্রাফকে বলেন,“এসব অজ্ঞাত বস্তু মহাজাগতিক না বৈশ্বিক তা বের করার দায়িত্ব ছিল আমাদের। তারা আরও আগে যোগাযোগ করলে আমরা আসল কথা বের করে ফেলতে পারতাম। এতে রাষ্ট্রের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করা শুরু করি। ”
অবশেষে তারকাপুঞ্জের গতিবিধির সঙ্গে তুলনা করে জানা যায় সেগুলো গ্রহ।
হিমালয় সীমান্ত এলাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। চীনের গোয়েন্দারা তাদের সীমান্তে অনুপ্রবেশ করেছে বলে প্রায়ই অভিযোগ করা হয় ভারতের পক্ষ থেকে। চীন অবশ্য এব্যাপারে কোন জবাব দেয়না।
আবার চাইনিজ রাইফেলের নিচে অপদস্হ হয়ে কিছুই করতে পারেনা ভারত। এছাড়াও কাশ্মীর সীমান্তে দলে দলে পাকিস্তানী বিভিন্নবিদ্রোহী গ্রুপ দলে দলে প্রবেশ করলেও তাদের আটকানো সম্ভব হয়না।
সীমান্তে ভারতের অবস্হা খুবই শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
ISI(পাকিস্তান):
পাকিস্তানভিত্তিক ইন্টেলিজ্যান্স আইএসআই অন্য সব সংস্হাকে পেছনে ফেলে সেরা সংস্হার আসন দখল করেছে ২০১৩ সালে।
অর্থাৎ "র"- সহ অন্যান্য সংস্হা যেখানে ভারতের সেনাদের এত বড় একটা খবরের পেছনের খবর জানান দিতে ব্যর্থ সেখানে আইএসআই টপ র্যাংকড ইনটেলিজেন্সে পরিণত। উল্লেখ্য ২০১৩ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী "র"-এর অবস্হান আট নম্বরে।
একটি দেশের সেনাদের সাফল্যের শক্তিনির্ধারণে তার ইনটেলিজ্যান্স শক্তিশালী হওয়া অতিব জরুরী।
না তার মানে এ নয় যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের সেনাবাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী হয়ে গিয়েছে। বরং ভারতের সেনাবাহিনীই এগিয়ে আছে সবদিক থেকে। কারগিলযুদ্ধ,১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে জয়লাভ করা ভারতীয় বাহিনী এখনও এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তানের চেয়ে।
উপরের খবর দুইটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় কারণ পাক-ভারত সংঘাতে আমাদের অবস্হান নিরপেক্ষ। পাক-ভারত সংঘাতে পারমাণবিকবোমার ব্যবহার শুরু হলে তবেই তা আমাদের ভাবনার বিষয় তার আগে নয়।
এবার আসল কথায় যাই,একাত্তরে স্বাধীনতা লাভের পর শূন্য থেকে বর্তমান অবস্থানে এসেছে বাংলাদেশ। সিটি ব্যাংক এনএর মতো প্রভাবশালী বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে,২০৩০ সালে বিশ্বের প্রধান ১০টি অর্থনৈতিক দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। এই পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দেয়,দেশ এগোচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে এর অর্থনীতি আর ধারাবাহিকভাবে চলছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। অবধারিতভাবেই ২০৩০ বা তার কিছু সময়ের মধ্যে বাংলাদেশও পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয়ে যাবে।
অর্থাৎ সেনাবাহিনীতে লোকবল বাড়াতে পারলে ভারত আর পাকিস্তানকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা আমাদেরও রয়েছে। এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিৎ এ মুহুর্তে।
ভারতের বাংলাদেশ নীতি:
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত কম গুপ্তচরবৃত্তি চালায়না। ভারত এঅঞ্চলের নব্য সম্রাজ্যবাদীগোষ্ঠী। তারা দক্ষিণ এশিয়ায় এককআঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।
আর এআধিপত্যকে পূজি করেই তারা বিশ্বের অন্যান্য বড় প্রতিদ্বন্দী চীন,যুক্তরাষ্ট্র,ব্রাজিল এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ান প্রতিদ্বন্দীদের সাথে টক্কর দেওয়ার ধান্দায় আছে।
বাংলাদেশের প্রতি ভারতের নীতি হল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কুনজড় থেকে এরা বাংলাদেশকে আগলে রাখার চেষ্টা করে। তাদের আশঙ্কা বাংলাদেশ কোনভাবে পাকিস্তানের সমকক্ষ মনোভাবের কোন শক্তি হয়ে গেল কিনা!তবে কুনজর থেকে বাঁচানোর উছিলায় যে চালটা চালে তারা তা হল এর বিনিময়ে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা বাগিয়ে নিতে তৎপর থাকে তারা। একদিকে যেমন তারা চায়না শিল্প-বাণিজ্যে বাংলাদেশ লাগামহীন উন্নতি করুক সেইসাথে বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা,জঙ্গীবাদ হোক এটাও চায়না তারা। কেননা এসবের বিস্তার ঘটলে বাংলাদেশ শক্তিশালী হবে এবং তা ব্যবহার করে পাকিস্তানের বাংলাদেশ সংক্রান্ত সন্দেহজনক সীমান্তনীতির কাছে পরাজিত হতে পারে তারা।
এটায় বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মূল ভয়। তাছাড়া বিএসএফ কতৃক সীমান্তহত্যার প্রতিশোধ বাংলাদেশ নেবেই,এ আশঙ্কা থেকে বাংলাদেশ যেন ভারতের হিসাবের বাইরে মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে সেদেকেও নিশ্চয় তাদের নজর আছে। সোজা কথায় বলতে গেলে তারা চায়না বাংলাদেশ কোন ডামি দেশে পরিণত হোক এবং পূর্ব পাকিস্তানে পরিণত হোক আবার এটাও চায়না বাংলাদেশ নিজ পরিচয়ে পৃথিবীর মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হোক। তাই বিগত বছরগুলোতে সব হিসাব-নিকাশ কসলে দেখা যায় নিজ স্বার্থেই বাংলাদেশের অভিভাবক হওয়ার বাসনা রাখে ভারত গোপণীয়ভাবেই যা বাংলাদেশের অর্থনীতি আর সামরিকশক্তি মাত্রাতিরিক্ত শক্তিশালী হয়ে গেলে অসম্ভব হয়ে পড়বে। এসব কিছু থেকে বাঁচার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার হার বাড়ানো খুবই জরুরী এখন থেকেই।
তবেই যেকোন সমস্যার মোকাবেলা সঠিকভাবে করা সম্ভব হবে।
পাকিস্তানের বাংলাদেশ নীতি:
যেহেতু আগেই বলেছি ভারতের সামরিক শক্তি অপেক্ষাকৃত বেশী,তাই পাকিস্তানভিত্তিক বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠী এবং ভারতের অভ্যন্তরের বিদ্রোহী স্বাধীনতাকামী গ্রুপগুলো পাকিস্তানের পক্ষে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। সেই সাথে বাংলাদেশকে নিজের হাতে আনতে পারলে সেই লক্ষ্যে আরও এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। পূর্ব পাকিস্তান ৪২ বছর আগেই হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়ায় তাদের বর্তমান লক্ষ্য বাংলাদেশের ভূখন্ডকে ব্যবহার করে জঙ্গীবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে চাপে রাখা। একটা আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন জাতি হিসেবে বাঙ্গালী যা কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনা।
পাকিস্তান জঙ্গীবাদের লাগামহীন বিস্তারে অনেক আগেই মানসিকভাবে হাল ছেড়ে দিয়েছে। যেহেতু নিজের লেজটা কাটা এবং সেইসাথে আরও নানামুখী ফায়দা আছে এবং সে জানে তার জঙ্গীবাদের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব নয়,তাই আইএসআই টপর্যাংকড হলেও এতে তাদের মাথাব্যাথা নেই।
তাছাড়া জঙ্গীবাদের পাশাপাশি বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তিদের নিরাপদ ভূমি পাকিস্তান। এদের জায়গা দেওয়ার সুবিধা হল এরা সেইসব পদক্ষেপ নিতে পারবে ভারতের বিরুদ্ধে যা তৎক্ষণাত পাকসেনাবাহিনী বা আইএসআই নিলে ক্ষতির পরিমাণ বেশী থাকবে। বিনিময়ে পাকভূখন্ডে সেই সকল ওয়ান্টেড ব্যক্তিদের অস্ত্রব্যবসা,মাদক ব্যবসা,নারী ব্যবসার আইনী দায় হাতে মুক্ত হতে পাকিস্তান সরকার তাদের সহায়তা দেবে।
নিজের দেশের জঙ্গীবাদ রূখে দিতে তারা কতটা তৎপর তা পুরোপুরিই অস্পষ্ট তবে কিভাবে এসব ব্যবহার করে ভারতকে চাপে ফেলা যায় সেটায় তাদের লক্ষ্য। পাক-ভারত সীমান্তের চেয়ে নিরাপত্তা অপেক্ষাকৃত কম বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে তাই একে ব্যবহার করাটায় বুদ্ধিমানের কাজ। তাছাড়া বাংলাদেশে রয়েছে কিছু অগণিত পাকিস্তান ভক্ত উন্মাদ যাদের কাছে পাক-ভারত সংঘাত ধর্মযুদ্ধের মত। মজার ব্যাপার হল পাক-ভারত সংঘাতে এরা পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশকে রিপ্ল্যাসড করে অর্থাৎ পাকিস্তানী স্বত্তার জায়গায় বাংলাদেশকে কল্পনা করে। বাস্তবজগতের সাথে সম্পর্কহীন এদের জ্ঞানের দৌড় ভারত-পাকিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু আরব দেশ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।
বাকী দুনিয়াকেও তারা এসব কিছুর হিসাব থেকে বিচার করতে পছন্দ করে।
এরা সুবিধাজনক সরকার ক্ষমতায় থাকলে জঙ্গীবাদকে বাংলাদেশজূড়ে চাঙ্গা করে তোলে এবং জেনে বুঝেই হোক কিংবা মনের অজান্তেই হোক পাকিস্তানের লাভের রাস্তা সহজ করে দেয়।
মজার ব্যাপার হল ঐ যে ধর্মযুদ্ধ বললাম,পাকিস্তান ও ভারত নিজেদের ভেতরকার প্রতিদ্বন্দীতা এখন আর ধর্মীয় প্রতিদ্বন্দীতা হিসেবে দেখেনা। আমাদের যা করণীয় তা হল শিক্ষার হার বাড়াতেই হবে। প্রকৃত ও বিশুদ্ধ গণতন্ত্রকে শক্তিশালী এবং নিরবিচ্ছিন্ন করতে হবে নাহলে সঠিক নেতৃত্ব উঠে আসা সম্ভব না।
সঠিক নেতৃত্ব উঠে না আসলে নতজানু হয়েই থাকতে হবে। সামরিকশক্তি বাড়ানোটায় মূল লক্ষ্য এবং সবকিছুর সাথে সবকিছুই সম্পর্কিত। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী>শক্তিশালী অর্থনীতি>নিরবিচ্ছিন্ন গণতন্ত্র>শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। তবেই ভারত-পাকিস্তানকে টক্কর দেওয়া সম্ভব। নাহলে নয়।
আসলে পাকিস্তান-ভারত কেউই আমাদের বন্ধু নয়। তারা নিজেদের ফায়দাটায় দেখবে আগে। তাই আমাদেরও সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু দেশের ভেতরে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দীতা আর জনগণের ভেতর পরস্পর অবিশ্বাস আর একতার অভাবের কারণে সে লক্ষ্য পূরণ করাটা অতটা সহজ নয়। একতার অভাব ভারত-পাকিস্তানের কোন চাল কিনা এবং তাদের দ্বারা কোন কোন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে তাও চিহ্নিত করতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।