আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুভি রিভিউঃ "Blood Diamond"

লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও'র অভিনীত আমার প্রথম দেখা ছবি হচ্ছে তার "টাইটানিক" মুভিটি । ছবিটি দেখার পর থেকেই আমি তার অসম্ভব একজন ভক্ত বনে যাই । "টাইটানিক" ছবিতে তার অসাধারণ অভিনয় হওয়ার পরও কেনো সে এই ছবির জন্যে অস্কার পাইনি তার জন্যে আমার খুব দুঃখ হয়েছিল । তার সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার দৃশ্যগুলো এখনও প্রথম দেখার মত আমার চোখে জ্বলজ্বল করে । তার অভিনীত বেশকিছু মুভি আমি দেখেছি তার মধ্যে "Blood Diamond" ছবিটিও আমার কাছে দারুণ লেগেছে ।

মুভিতে তার মুভমেন্ট , তার আচার-আচরণ সবকিছু ছবিতে তার চরিত্রের সাথে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে । আর তার অনুসন্ধানী চোখ দারুণ লেগেছে , যেন কোথায় কার মাঝে কি আছে সব যেন তার নখদর্পণে ,সব যেন তার জানা । সম্পদ একটা দেশকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছলতা এনে দিতে পারে ঠিক তেমনি নিয়ে আসতে পারে সেই দেশে সংঘাত এবং সহিংসতার পরিস্থিতির । সেই দেশের মানুষের জীবনে নিয়ে আসতে পারে দুর্বিষহ অবস্থা । আফ্রিকার একটি দেশ সিয়েরা লিওন, যেখানে প্রকৃতিগতভাবেই পাওয়া যায় হীরা বা ডায়মন্ড ।

আর তা নিয়েই সমগ্র দেশজুড়ে অস্থিরতা । হানাহানি, মারামারি , সহিংসতা লেগে থাকে সেখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রুপের মাঝে । অল্প বয়সী ছেলেদের ভেড়ানো হয় সেইসব গ্রুপে । তারপর মানুষ মারার এক দক্ষ সৈনিক হিসেবে গড়ে তোলা হয় তাদের । মানবতা যেন এখানে ভুলন্থিত , কে কার রক্ত নিবে কে কার উপরে থাকবে তার যেন অসম চেষ্টা ।

কিন্তু এই নিষ্ঠুর চেষ্টা সেই দেশের সাধারণ মানুষের জীবন যে কতটা দুর্বিষহ করে তোলে তার ব্যাপারে কারো কোন মাথা ব্যথাই নেই । আর নিজেদের সাথে সহিংসতার পাশাপাশিতো আছেই অন্যদেশের আগ্রাসী মনোভাব । আর এই সবকিছু নিয়েই গড়ে উঠেছে "Blood Diamond" মুভিটি । আসলেই যথার্থ নাম দেওয়া হয়েছে ছবিটির এর কাহিনীর সাথে । একজন মৎস্যশিকারি, একজন স্মাগলার এবং একদল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের লোকদের নিয়ে "Blood Diamond" মুভির কাহিনী মূলত আগাতে থাকে ।

যেখানে হীরার জন্যে স্মাগলার এবং একদল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট হন্যে হয়ে ছুটে । আর এই স্মাগলার চরিত্রে অভিনয় করেছে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও আর মৎস্যশিকারি চরিত্রে অভিনয় করেছে ডিজিমন হনশু । চমৎকার অভিনয় দেখিয়েছে তারা দুজন তাদের নিজ নিজ চরিত্রে । একজন স্মাগলার হিসেবে সবসময় এক অনুসন্ধানী দৃষ্টি ছিল সব দিকে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও । কোথায় কিভাবে কার ডায়মন্ড পাওয়া যাবে , নেয়া যাবে তার পিছনে হন্যে হয়ে সমগ্র ছবিজুড়ে তার বিচরণ দেখা যায় আর মৎস্যশিকারি সলোমন ভেনডি (ডিজিমন হনশু) সবসময় সজাগ থাকে তার পরিবারকে নিয়ে , তার পরিবারকে ফিরে পাওয়া আর তার ছেলে দিয়াকে পূর্বের জীবনে ফিরিয়ে আর এক আপ্রাণ চেষ্টা থাকে তার বাবা হিসেবে ।

ছবিতে তারই এক অস্থির চিত্র ফুটে উঠে কখনও । জীবন যেন তাদের বাঁধা পড়েছে সিয়েরা লিওনে এক দ্বিধা ও দন্দের মাঝে । তার এক জাজ্বল্যল্যমান দৃশ্য ফুটে উঠেছে ছবি জুড়ে । লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও'র অভিনীত "টাইটানিক" মুভির মতন "Blood Diamond" মুভিতেও তার একটা পর্যায়ে মৃত্যু ঘটে । এইখানেও আমার প্রিয় অভিনেতার মৃত্যু , তাইলে কি ইমোশন কাজ করছে ছবিজুড়ে বুঝেন ।

ছবিটি একশনের মুভি হলেও মুভি ভর্তি আবেগ , ভালোবাসা সবই বিরাজমান । মানুষ যে কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তার প্রয়োজনে তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ "Blood Diamond" মুভিটি । একজন মানুষের পরিবার রক্ষা করা নিয়ে যেখানে শংকা সেখানে আবার ডায়মন্ডের লোভে হন্যে হয়ে ঘুরছে আরেকদল মানুষ । খুন কিংবা মৃত্যু কোন কিছুই যেণ তাদের দমাতে পারেনা ডায়মন্ড পাওয়ার লোভ থেকে । আর তার জন্যেই জীবনের ঝুঁকি নিতেও কিছু মানুষ কার্পণ্য করেনা ।

একজন আরেকজনকে হত্যা সব যেন খুব সহজ ব্যাপার আফ্রিকার এই দেশ সিয়েরা লিওনে। ছবিটি মুক্তির সাল ২০০৬ সাল । আইএমডিবি রেটিং ৮ এর এই মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছে যথাক্রমে Leonardo DiCaprio, Djimon Hounsou,Jennifer Connelly সহ আরও অনেকে । আর চার্লস লিভেট ও সি গ্যাবি মিশেল এর লেখা গল্প অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেছেন পরিচালক এডওয়ার্ড জিউক । ১৪৩ মিনিটের এই ছবির কাহিনী ,দৃশ্যায়ন সবকিছুতেই আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওনে ডায়মন্ড নিয়ে হওয়া পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে ।

মানবতা যে পরাজিত হয় মানুষের সম্পদের লোভের কাছে তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই ছবি । ছবির দৃশ্যায়নগুলো আমার খুব চমৎকার লেগেছে । প্রেস কিংবা মানুষের জীবন কিংবা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য সবকিছু দারুণ ছকে ফ্রেমে আবদ্ধ করেছেন পরিচালক এডওয়ার্ড জিউক । আর ছবিজুড়ে Leonardo DiCaprio, Djimon Hounsou এর অভিনয় দারুণভাবে টেনে নিয়ে গেছে আমাকে একজন দর্শক হিসেবে। আর এক কথায় বলা যায় "Blood Diamond"মুভিটি আবেগ , ভালোবাসা ,একশন এর এক চমৎকার মেলবন্ধন ।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.