প্রথমে চকলেট মিশ্রণকে ভারি যন্ত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সে যন্ত্রে পিষে পিষে প্রত্যেকটি দলা চিপে বের করে নেওয়া হয়। এরপরে ব্যবহার করা হয় রোডলফি লিন্ডট-এর আবিষ্কৃত এক বিশাল পাত্র। সে পাত্রে মিশ্রণকে ব্লেন্ড করে আরও মসৃণ করা হয়। একদম ভেলভেটের মতো।
তারপর চকলেট মিশ্রণকে একবার ঠাণ্ডা করা হয়, তারপর আবার গরম করা হয়। তারপর ফের ঠাণ্ডা করা হয়, তারপর আবার গরম। যতক্ষণ না চকচকে ভাব আসে, ততক্ষণ এভাবেই ঠাণ্ডা-গরম করতে হয়।
দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ার চকলেট কেবল চারকোনা করেই বানানো হত। কিন্তু মিল্টন হার্সেই সেই প্রথাও ভেঙে ফেললেন।
মিল্টন হার্সেই ছিলেন আমেরিকার এক চকলেট প্রস্তুতকারী। তার কাছে মনে হল, ব্যাপারটি খুবই একঘেয়ে। তিনি চকলেটের আকার বদলে বানালেন ছোট ছোট চ‚ড়ার মতো আকৃতির চকলেট। শুধু তাই না, তিনি সেগুলোকে মোড়কে মুড়িয়ে আরও রোমাঞ্চকর করে তুললেন। সে ১৯০৭ সালের কথা।
এর পরপরই অন্য কারখানাগুলোও বিভিন্ন আকার-আকৃতির চকলেট বানাতে শুরু করে দিল। আর এর পরের ধাপে চকলেটকে আরও মজাদার করতে বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে সার্ভ করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
১৯১২ সাল। আমেরিকায় থাকতেন এক ক্যান্ডি প্রস্তুতকারী। নাম হাওয়েল ক্যাম্পবেল।
সে সময় তিনি আগ্রহী হয়ে উঠলেন চকলেটের ব্যাপারে। তিনি চকচকে চকলেটের সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন চিনাবাদাম, ক্যারামেল আর মার্সমেলো। এরপর সে মিশ্রণে কিছু চিনি জাতীয় মিষ্টির টুকরো ছিটিয়ে দিলেন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল চকলেট মেশানো প্রথম জলখাবার।
এই নতুন খাবারটির স্বাদ প্রথম নিলেন ক্যাম্পবেল নিজেই।
সেটা তার খুব ভালোও লেগে গেল। নতুন এই খাবারটির নাম তিনি দিলেন ‘গো গো ক্লাস্টার’। গো গো ক্লাস্টার বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছিল।
ঐ একই বছরের কথা। এক বেলজিয়ান চকলেট প্রস্তুতকারী, জিন নিউহাউস চকলেট তৈরির ইতিহাসে যোগ করেন আরেকটি নতুন পালক।
তিনি আবিষ্কার করলেন খোলসের মতো শক্ত চকলেট, যার ভেতরে ‘পুর’ ভরে দেওয়া যায়। ক্রিমযুক্ত বাদামের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি করলেন ‘পুর’। সেই পুর ভরে দিলেন চকলেটের শক্ত খোলের ভেতর। তারপর চকলেটের খোলা অংশ আরও চকলেট দিয়ে আটকে দিলেন।
আর কী চাই! তারপর থেকে চকলেট প্রস্তুতকারীরা বানাতে লাগলেন নানা ধরনের চকলেট-- রেশমি ক্যারামেল, চাবানোর টফি, বাদাম-দেওয়া-চকলেট, ক্রিম-দেওয়া-ভ্যানিলা, আরও কত কী!
এখনকার বেশিরভাগ চকলেট কোম্পানিই তো বিশাল।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল, এদের প্রায় সবারই সূচনা ঘটেছিল ছোটখাটো পারিবারিক ব্যবসা দিয়ে।
প্রথমেই বলা যায় জন ক্যাডবেরির কথা। ১৮২৪ সালে ইংল্যান্ডে একটি দোকান খোলেন জন ক্যাডবেরি। সেখানে চা-কফির পাশাপাশি তিনি নিজ-হাতে তৈরি তরল চকলেটও বিক্রি করতে শুরু করলেন। সেই তরল চকলেট পরে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে গেল যে, ক্যাডবেরি আস্ত একটা কোকো ও চকলেটের কারখানাই স্থাপন করে বসেন।
আর এখন ক্যাডবেরি চকলেট তো বিশ্বজুড়েই বিক্রি হয়।
১৯১১ সালে ফ্রাংক আর এথেল মার্স আবার ঘরে বানানো মাখন-ক্রিম ক্যান্ডির ব্যবসা শুরু করেন আমেরিকায়। তাদের ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে ১৯২৩ সালে, যখন ফ্রাংক এক ধরনের গাঁজানো শস্যদানা ও দুধসমৃদ্ধ চকলেট তৈরি করার ফর্মুলা আবিষ্কার করে ফেললেন।
প্রথমে ফ্রাংক এক ধরনের ফাঁপা বাদাম চিনির মিশ্রণ তৈরি করলেন। এরপর সেটা ঢেকে দিলেন ক্যারামেল দিয়ে।
তার উপরে আবার দিলেন দুধ মেশানো চকলেট।
১৯৪১ সালে ফ্রাংক আর এথেলের ছেলে ফরেস্ট নতুন আরেক বুদ্ধি বের করলেন। তিনি এমন এক ধরনের চিনি আবিষ্কার করলেন, যা হাতে নিলে গলে যায় না। তারপর সেই চিনি দিয়ে ঢেকে দিলেন চকলেটকে।
মার্স মুরি নামের এক আমেরিকান ভদ্রলোক ফরেস্টকে এ কাজের জন্য টাকা-পয়সা দেন।
তাই তাদের এই নতুন চকলেটের নাম তারা দেন এম এন্ড এম’স। এখন এই মার্স পরিবারের চকলেটও পাওয়া যায় বিশ্বের সব জায়গায়।
যখন মায়ানরা প্রথম পঁচা কোকোর বীজ থেকে সুগন্ধ পেয়েছিল, তারা হয়তো ভেবেছিল, নতুন আর রোমাঞ্চকর কোনো কিছুর সন্ধান পেয়ে গেছে তারা। কিন্তু তারা কি ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিল, তাদের আবিষ্কৃত এই চকলেট কী পরিমাণ জনপ্রিয় হবে ভবিষ্যতে!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।