আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরনো পাণ্ডুলিপি - ১ম অংশ

জীবন যেখানে যেমন...
কভার পেজঃ

মুখবন্ধঃ

চাঁদনী রাত।
নদীর রুপোলি জল জোছনার আলোয় চিকচিক করছে। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। প্রকৃতি যেন হঠাৎ করেই ব্যস্ততার কোলাহল থেকে মুক্তি পেয়েছে। ধানক্ষেতের মাঝখানে কাকতাড়ুয়াটা এই নরম আলোয় একটা অদ্ভুত বীভৎস পরিবেশ সৃষ্টির হাস্যকর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

ঝিঁঝিঁ পোকারা অনবরত সংগীত সাধনা করেই চলেছে। রাতের তারা আর নির্জনতার গন্ধ মিলেমিশে একটা চমৎকার রোমান্টিক আবহ তৈরী করেছে। এমন একটা আকর্ষণীয় পরিবেশ কি আর শহরের অলিতে গলিতে খুঁজে পাওয়া যায়?
নদীর শান্ত জলে পা ডুবিয়ে উদাসীনতায় বিলীন হয়ে এই পরিবেশটা উপভোগ করছিল আর গুনগুন করে গান গাইছিল তানিম। তানিমের বেসুরো গলাকে সমর্থন জানাতেই যেন ঝিঁঝিঁরা তাদের সুর বাড়িয়ে দিল।
“কিরে থামলি কেন? রাতের নির্জনতায় তোর গান তো নতুন মাত্রা এনে দিচ্ছে।

”, হঠাৎ ফারজানার কণ্ঠস্বরে চমকে ওঠে তানিম। “তুই কখন এলি?”, থতমত খেয়ে বলে সে। “এইমাত্র। এখন চল ওদিকে কি কান্ড হচ্ছে জানিস?”, উচ্ছ্বসিত কণ্ঠ ফারজানার। “কি হচ্ছে?”, নিতান্ত অনীহার সাথে জানতে চায় তানিম।

অপর পক্ষ তার নিরানন্দে এতটাই বিমর্ষ হয়ে পড়ল যে সে আর কিছু বলতে চাইল না। গোমড়ামুখে ফারজানা উঠে দাঁড়ায় এবং তানিমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাঁটা শুরু করে। তানিম তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনুগত বালকের মতো। নদী থেকে বাড়ি কিছুটা দূরেই বলা চলে। মসজিদের কাছাকাছি আসতেই ফারজানা বলে ওঠে, “ওরা সবাই মিলে রাহিকে ভয় দেখানোর প্ল্যান করেছে।

অনেক মজা হবে। হাঁদাটার অবস্থা ভেবে এখনি আমার হাসি পাচ্ছে। তাড়াতাড়ি পা চালা। ” “এই সামান্য কারণে আমাকে ডেকে আনলি? নদীর পাড়ের এমন চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করার আনন্দ তোর মাথায় ঢুকবে না। ”, অস্ফুট বিরক্তি ঝরে তানিমের কণ্ঠে।

“Sorry, স্যার। কেন যে উলুবনে মুক্তো ছড়াতে আসি। আমারি ভুল। ”, বলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ফারজানা।
“কিরে রাগ করলি নাকি?”
-“অ্যাঁই, ছুঁবি না আমারে।

তুই আমার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবি। ”
“ইস! বললেই যেন শুনি। চারিদিকে তাকিয়ে দেখ। ”
-“কি দেখব?”
“পুরো রাস্তা সুনসান। শুধু তুই আর আমি।


ফারজানা একবার ঢোক গেলে। বলে, “তাতে কী?”
“নির্জন এই রাতে তোকে এখন আমার হাত থেকে বাঁচানোর কেউ নেই। ” বলেই একটা রক্তহিম করা হাসি হাসে তানিম। ফারজানা একটু ভয়ই পায়। সে কার সাথে দাঁড়িয়ে আছে? এ কি তানিম নাকি অন্য কিছু? করুণ সুরে একটা কুকুর ডেকে ওঠে আর নীরব চাঁদনী রাতের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দেয় নির্মমভাবে।


“হুম, যা বলছিলাম। ”, নাহিয়ান একটা কাশি দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে।
“কি বলছিলি?”, ল্যাপটপ থেকে চোখ না তুলেই প্রশ্ন করে আবির।
“হুম শোন। আবির আর বাবলু সোজা ওর পেছন দিক দিয়ে অ্যাটাক করবি।

আমি পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছি। ওর সামনে থেকে আসব। ”
“আর আমি?”, নিশি প্রশ্ন করে।
“ও হ্যাঁ, তুমি আমার সাথে এসো। আর তোরাও বের হয়ে যা।

”, বলে নিশিকে নিয়ে বের হয়ে যায় নাহিয়ান। আবির আর বাবলুও সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ওই তো উঠানে হাঁদাটাকে দেখা যাচ্ছে। ধীরে ধীরে এগোতে থাকে আবির ও বাবলু।
উঠোনে একটা চেয়ারে বসে মাত্র রচনা করা কবিতাটা উল্টে পাল্টে দেখছিল আর নিজেই নিজেকে বাহবা দিচ্ছিল রাহি।

চাঁদের আলোয় পরিবেশটা রোমান্টিক বলেই মনে হচ্ছে তার কাছে। হঠাৎ ঘাড়ের কাছে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ল। রাহি এক ঝটকায় পিছনে ঘুরে দেখে কেউ নেই। একটু ভীতু প্রকৃতির রাহি বেশ ভয় পেয়ে যায়। রাহি চারিদিকে ঘুরেফিরে দেখে।

পিছনে ঘর আর ডানদিকে পায়ে চলা পথ, বাঁ দিকে ধানক্ষেত আর ওর সামনে বাঁশবাগানের মাথায় একটা পূর্ণ চাঁদ। হঠাৎ করেই চাঁদটা মেঘে ঢেকে যায়। চারদিক ছেয়ে যায় আঁধারে। লোডশেডিং হওয়ায় আঁধারটা বেশ গাঢ় বলেই মনে হয় রাহির কাছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথেই সে একটা চেয়ার আর তার লেখার খাতাটা তুলে নিয়ে বাঁশবাগানের সামনে চাঁদ দেখতে চলে চলে এসেছে।

এখন বুঝতে পারছে কি বোকামীটাই না করেছে। অন্তত একটা মোম আনা উচিত ছিল। হঠাৎ একটা ভ্যাপসা দুর্গন্ধ নাকে আসে তার। কিছুক্ষণ অনুসন্ধান করে বুঝতে পারে তার সামনের বাঁশবাগান থেকেই আসছে গন্ধটা। রাহি অস্বস্তি বোধ করতে থাকে।

সে চেয়ারটা তুলে নিয়ে খাতাটা বগলে করে বাড়ির দিকে আসতে থাকে। হঠাৎ রাহি লক্ষ্য করে তার পা মাটির সাথে আটকে গেছে। গাঢ় অন্ধকারের মধ্যেও সে তার পা চেপে ধরা লোমশ কালো হাতটা ভালোভাবেই দেখতে পায়।
রাহির চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে আবির আর বাবলু। এসে দেখে রাহি অচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে।

দুজনে মিলে ওকে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসে। ওর চোখেমুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরায়। দৌড়াতে দৌড়াতে ঘরে ঢোকে নিশি আর নাহিয়ান। “রাহি ঠিক আছে তো? যে একটা চিৎকার দিল!”, নাহিয়ান হাঁপাতে হাঁপাতে বলে। “ভাইয়া, আপনাদের এতটা করা উচিত হয় নাই।

আমরা আসতাম তারপর না হয় একটু হালকা মজা করতেন। ”, নিশি রাহির পাশে বিছানার এক কোণে উঠে বসে। “দেখ, নিশি। মজা নিও না। ছেলেটার হার্ট অ্যাটাকও তো হতে পারত।

এতটা ভয় দেখানোর কি কোন দরকার ছিল?”, আবির পাল্টা প্রশ্ন করে। “একটা লিমিট তো মেইনটেইন করবি, শালা নাহিয়ান”, বাবলুর গলায় ক্ষোভ। “মানে কি? তোরা বলতে চাস তোরা ভয় দেখাস নাই?”, নাহিয়ান বলে ওঠে। আবির আর বাবলু সজোরে মাথা নাড়ে। তারা ভয় দেখায়নি রাহিকে।

“তাহলে? আমরাও তো কিছু করিনি। আমরা পৌঁছার আগেই ভাইয়ার চিৎকার শুনতে পাই। তারপর বাঁশবাগানের সামনে ওনাকে না পেয়ে দৌড়ে চলে আসে বাড়িতে। ”, নিশি বিস্ময় প্রকাশ করে। আবির আর বাবলু পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।

এবার রাহি কথা বলে ওঠে।
রিশাদ ঘরে প্রবেশ করল। “কি রে রোমিও কই?”, নাহিয়ান জিজ্ঞেস করে। “তার জুলিয়েটের সাথে। ”, বলে রিশাদ একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে।

“রাহি, তোর কি অবস্থা? কেমন উপভোগ করলি চাঁদের সাথে?”, রাহি কোন উত্তর দেয় না। বাবলু ওকে সব খুলে বলে। রাহি একা একা বসে ছিল। হঠাৎ ওর ঘাড়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ে। ও ভয় পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসতে থাকে।

হঠাৎ একটা কালো লোমশ হাত ওর পা চেপে ধরে। গাঢ় আঁধারে ও হাতটি ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না। হাতটা ওকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে। ও একসময় মাটিতে পড়ে যায় আর চেতনা হারিয়ে ফেলে। পুরো ঘটনা শুনে রিশাদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।

বলে, “আরে এইসব কিছু না। অন্ধকারে কি না কি দেখে ভয় পেয়েছে। সবই মনের কল্পনা। ”, রিশাদের হাসিমুখের আড়ালে দুশিন্তার ছাপটা কেউ লক্ষ্য করে না।

(চলবে)
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।