আজ সকালে ফিরলাম সাতক্ষীরা থেকে । দিনাজপুরে যাওয়া সম্ভব হয়নি । যাই হোক সাতক্ষীরাতে যে চিত্র দেখলাম তা হল ছোট বড় হামলার স্বীকার সাতাত্তরটি পরিবার তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাররে সংখ্যা উনিশটি । । এদের মধ্যে মুসলিম হিন্দু দুই পরিবারই রয়েছে ।
মন্দির ভাঙা, বাড়িঘর পোড়ানো হয়েছে । সব চেয়ে ভয়ঙ্কর কথা ধর্ষিত হয়েছে বলে বলছে কেউ কেউ কিন্তু কোন প্রকার তথ্য তারা দেয়নি । মারা গেছে মোট দশজন । সরকারি ভাবে সাহায্য দেয়া হয়েছে তবে পরিমাণটা জানতে পারিনি । ব্যক্তিগত ভাবে এক জন ঐ পরিবারগুলোকে বিশ হাজার করে টাকা এবং কম্বল বিতরণ করেছে বলে জানালেন ওখানকার ডিসি ।
তিনি আরও জানালেন প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন ২০ তারিখ পরিদর্শনে । তাই আপাতত সাতক্ষীরাতে আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন নেই ।
খুব “খবর” টাইপের লেখা লিখলাম । ঠিক লেখা না তথ্যগুলো সংক্ষেপে দিলাম । এবার আসি আসল কথায় ।
সাতক্ষীরা, যশোর , ঠাকুরগাঁ, দিনাজপুর , বরিশাল সব যায়গার হামলার ঘটনার সূত্রপাত প্রায় একই । ভোটবাজি । কেউ ভোট পাবার জন্য, কেউ কেন ভোট দিল এই অপরাধে, কেউ ভোট যেন না দেয় এই জন্য । যশোরের পঁয়ত্রিশটি পরিবার এবং সাতক্ষীরাতে নয়টি পরিবারের সাথে কথা বললাম । এমনিতেই তারা প্রচণ্ড আতঙ্কে আছে তাই মুখ খোলে না সহজে তার পরেও যশোরে যা জানালো তা হলে , ভোটের আগে থেকেই তাদের নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছিল যেন কোন ভাবেই তারা ভোট না দেয় ।
তারা বিষয়টি প্রশাসন কে জানায় প্রশাসন আশ্বাস দিলেও তারা কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি । ভোটের দিন সকালে ভোট দিতে যাবার সময় রাস্তায় তাদের হুমকি দেয়া হয় এবং মারধোর করা হয় । ভোট দিয়ে ফেরার পরপরই প্রথমে জনা পঞ্চাশেক লোক তাদের আক্রমণ করে এর পরে বাইরে থেকে খবর দিয়ে তারা আরও দেড় দুইশ লোক নিয়ে হামলা চালায় । মালোপাড়ায় ঢুকতেই প্রথম বাড়ীটিতে আগুন ধড়িয়ে দেয় বাধা দিতে গেলে দু জনের মাথায় বাড়ি দেয় এবং একজনের পা রড দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দেয় । এর পরে একে একে দা , রড , লাঠি নিয়ে তারা ভাঙচুর এবং বাড়িঘর , ঠাকুর ঘর , সব কুপিয়ে পুড়িয়ে দেয় ।
এক মেয়ের সাথে কথা হল ও ক্লাস নাইনে পড়ে । ও এক ভয়াবহ তথ্য দিল “ দিদি ইজ্জৎ নিয়া বাচিছি” । আমি নির্বাক, মাথা নিচু করে ছিলাম খানিকটা সময় । ওর দিকে তাকাবার সাহস আমার হয়নি । এক দিদি বললেন ওরা 'মালাউন' বলে চিৎকার করে দা নিয়ে ওদের পেছনে ছুটেছে আর বলছে দাড়া তোদের ভোট দেয়া ছুটাচ্ছি ।
মহিলা, বৃদ্ধ , বাচ্চারা , আতঙ্কিত হয়ে নদীর পাঁড়ে চলে যায় ওখান থেকে নৌকা করে ঔ পাড়ে চেয়ারম্যান যিনি লীগ মনোনীত প্রার্থী তিনি তাদের আশ্রয় দেন এবং তার লোকজন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করে । পরবর্তীতে সরকার কঠোর নির্দেশ দিলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় ।
আমার প্রশ্নটা ছিল তাহলে আগে কেন চেয়ারম্যান , লীগের মনোনীত এমপি রণজিৎ বসু চুপ ছিলেন । ওখানকার ইউএনও নাম সিফাত বেগম । উনি এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন যে ওনারা সঙ্গে সঙ্গে একশনে গেছেন ।
তবে যেহেতু এটি আইনি প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্ব হয়েছে । চার জন কে এরেস্ট করা হয়েছে আর বাকিদের বিরুদ্ধে দ্রুত একশন নেবার জন্য তার উপর প্রেশার আছে ।
সবার সাথে কথা বলে আমার যেটা মনে হয়েছে জামাত বিএনপি আক্রমণ করে আর প্রশাসন “আইনি জটিলতার” কারণ দেখিয়ে ঢিলামি করে এর ফল ভোগে ঐ সব নির্যাতিত মানুষ ।
অন্যকথা
কল্লোল মোস্তফা একটা রিপোর্ট করেছেন , যার শিরোনাম “যশোরের মালোপাড়ার হিন্দুরা: আ.লীগের হামলার অভিযোগ এবং একটি সরেজমিন তদন্ত”।
আমি উত্তরে লিখেছি , মিথ্যা বলার একটা সীমা থাকা উচিৎ , হেডলাইন দেখে প্রথম আলোর মিথ্যাচার এর কথা মনে পড়ে গেল ।
ঐ দিন ছিলাম আমি ওখানে, কল্লোল ভাই এর সাথে চোখাচোখি হয়েছে কয়েকবার । পঁয়ত্রিশ পরিবারের সাথে কথা বলেছি । আমার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে । তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রকাশ করি নি । যাই হোক
আওমীলীগ হামলা করেছে এ কথা তারা কেউ বলেনি বরং ভোট দিতে যাবার অপরাধ ছিল তাদের ।
তারা সবাই বলেছে আওয়ামী বিরোধীরা হামলা করেছে । বর্তমানে তারা এও হুমকি দিচ্ছে “ বাপেরা ক্ষমতায় আর কয়দিন , এর পরে দেখি তোরা কই যাস" ।
প্রাথমিক ভাবে প্রশাসন নিশ্চুপ ছিল এটা সত্যি তবে বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন । হামলা ঠেকাতে যে চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি নিজে লীগের যারা আহত হয়েছে তারাও লীগার । লীগের দোষ ধরুন ঠিক আছে কিন্তু দোষ না থাকলেও দোষ ধরা , কেমন যেন সতীনের প্রতি বিদ্বেষ টাইপ আচরন মনে হয় ।
আজকাল লীগের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই নিউজ হিট হয় , ভিউয়ার বাড়ে । কল্লোল মোস্তফা পন্ডিত জন । ওনার রিপোর্ট এর হেড লাইন ছিল , “ যশোরের মালোপাড়ার হিন্দুরা: আ.লীগের হামলার অভিযোগ এবং একটি সরেজমিন তদন্ত” - খুবই অযৌক্তিক । তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল , উনি কেন লিখলেন না ঐ চেয়ারম্যান এর কথা ?
ওনার লেখাটা তিন বার পড়লাম এবং অবাক হলাম এই তথ্যগুলো ইচ্ছা করে দেননি । এগুলা কি ?
আমি ওখানে ঐ দিন না থাকলে হয়ত তার কথা বিশ্বাস করে লীগ কে চরম গালি দিতাম কিন্তু যেহেতু সত্যটা জানি তাই প্রতিবাদ করলাম ।
আমি একা না আমার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের আরও চার জন , সাথে সুব্রত শুভ ছিল । আমি মিথ্যা বলতে পারি । ওরা ,আর আমার ক্যামেরা নিশ্চই মিথ্যা বলবে না । একটা ভিডিওর খানিকটা অডিও করে দিলাম। ইচ্ছা ছিল না কারন তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে ।
কিন্তু পণ্ডিত জন বলে কথা । তাই ঝুঁকিটা নিলাম তবে সতর্কতা রক্ষা করেই দিয়েছি ।
অডিও
ফড়িং ক্যামেলিয়া
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।