ও পথ মাড়িও না যে পথ তুমি চেননাকো----
পুরো খবরের জন্য অপেক্ষা করুন ।
প্রয়াত বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। অবসান ঘটল বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমার একটা যুগের। বহুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। গত ২৬ দিন ধরে ভর্তি ছিলেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
আজ সকাল ৮টা ২৫ নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হন মহানায়িকা। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। রেখে গেলেন অভিনেত্রী কন্যা মুনমুন সেন ও দুই নাতনি রিয়া এবং রাইমাকে। তার মৃত্যুতে সারা দেশের শিল্পজগতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
অবিভক্ত ভারতের অধুনা বাংলাদেশের পাবনা জেলাতে ১৯৩১ সালে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রমা দাশগুপ্ত। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯৪৭ সালে বর্ধিষ্ণু শিল্পপতি পরিবারের সন্তান দিবানাথ সেনকে বিয়ের সূত্রে কলকাতায় আসেন পাবনার রমা। বিয়ের পরে ১৯৫২ সালে `শেষ কথায়` রূপোলী পর্দায় নায়িকার ভূমিকায় প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন তার। পাবনার রমার নাম বদলে হয় সুচিত্রা।
আর তার পরেরটা শুধুই ইতিহাস। তার হাত ধরেই বদলে যায় বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকার সংজ্ঞা। সুচিত্রার চাহনি, কটাক্ষ, হাসি অভিনয় প্রতিভায় মগ্ন হয়েছিলেন আবালবৃদ্ধবনিতা। এই সময় তৈরি হয় অবিস্মরণীয় উত্তম-সুচিত্রা জুটি। মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে জুড়ি বেঁধে সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে উপহার দিয়েছিলেন একের পর এক সুপারহিট ছবি।
বস্তুত সুচিত্রার জীবনের প্রথম হিট ছবি সাড়ে চুয়াত্তরেই প্রথম দেখা মেলে বাংলা চলচ্চিত্রের চির রোম্যান্টিক চির নতুন এই জুটির। উত্তম কুমার ছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অশোক কুমার, বসন্ত চ্যাটার্জীর সহ বেশ কিছু নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অসাধারণ কিছু ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি।
`শাপ মোচন`, `হারানো সুর`, `পথে হল দেরি`, `ইন্দ্রাণী`, `সপ্তপদী`, `গৃহদাহ`, `হার মানা হার`, `হসপিটাল`, `সাত পাকে বাঁধা`, `সাগরিকা`, `দত্তা` প্রভৃতি সিনেমায় সুচিত্রা সেন তার অসাধারণ প্রতিভার সাক্ষর রেখেছিলেন। বাংলার গণ্ডি ছাড়িয়ে হিন্দি ছবির জগতেও সুচিত্রা করেছিলেন বেশ কিছু অসাধারণ সিনেমা। ১৯৫৫ তে দেবদাস সিনেমায় দিলীপ কুমারের বিপরীতে পার্বতীর ভূমিকায় প্রথম দেখা যায় তাঁকে।
`মমতা` এবং `আঁধি` সিনেমার জন্য ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারের মাধ্যমে সুচিত্রার অভিনয় প্রতিভার প্রতি কুর্ণিশ জানিয়েছিল বলিউড।
১৯৬৩ তে প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসাবে `সপ্তপদী`-র জন্য পান মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভালে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার । ১৯৭৮ সালে `প্রণয় পাশা`-র পরেই হঠাৎ করেই স্বেচ্ছা অবসরে চলে যান মহানায়িকা। তারপর আর কখনও প্রকাশ্যে দেখা যায়নি `মিসেস সেন`-কে। এমনকি ২০০৫ সালে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারও প্রত্যাখান করেন তিনি।
২০১২ সালে বঙ্গ বিভূষণ পুরস্কার পান। তার হয়ে কন্যা মুনমুন সেন এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।
সুচিত্রা সেন আসলে শুধু একটা নাম নয়। তিনি বাঙালি হৃদয়ে একটা মিথ। এত বছর অন্তরালে থেকেও তার জাদুতে এখনও সবাই সমান মগ্ন।
বিন্দুমাত্র ভাঁটা পড়েনি তার আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তায়। বাঙালিদের কাছে নায়িকা শব্দটির সমার্থক সুচিত্রা সেন। তিনি চলে গেলেও পরবর্তী বেশ কিছু প্রজন্ম তার স্মৃতি রোমন্থনেই সমৃদ্ধ হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।