আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাইভা ইন AET

এই ব্লগের যাবতীয় কর্মকান্ড জুনায়েদ খানের অনুর্বর মস্তিষ্কের অহেতুক পাগলামি ! বৈ কিছু নয়।

আরাম-কেদারা খানা টানিয়া বসিবামাত্র সামন হইতে প্রশ্ন আসিল – ‘সুনির্মল বসুর “সবার আমি ছাত্র” কবিতাখানি পড়িয়াছো?’
যাহার পর নাই উৎফুল্ল হইয়া উত্তর করিলাম - ‘জ্বি জনাব! বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর ...’
গুরু এবং শিষ্য দু’জন মিলিয়া কবিতাখানির প্রথম স্তবক আবৃতি করিলাম! গুরু এইবার শেষ স্তবকে চলিয়া গেলেন- ‘শেষ স্তবকে কবি কি বলিয়াছেন?’ কবিতা খানা আমার মুখস্ত ছিল। গুরুর মুখ হইতে কাড়িয়া লইয়া বলিলাম,

“এই পৃথিবীর বিরাট খাতায় পাঠ্য যে সব পাতায় পাতায়
শিখছি সেসব কৌতূহলে নেই দ্বিধা লেশ মাত্র!”

আমাদের আবৃতি দেখিয়া জুনিয়র গুরু মিটিমিটি করিয়া রহস্যজনক হাসি হাসিলেন।

কবিতা আবৃতি শেষ হইলে J.S. Faires এর ‘Design of Machine Elements’ পুস্তকখানা সামনে দিয়া গুরু বলিলেন, ‘দ্বিতীয় অধ্যায় বাহির কর। অমুক পৃষ্ঠায় ছাত্রদিগের জন্য কিছু উপদেশ বাক্য রহিয়াছে।

তুমি কি কখনো খুলিয়া দেখিয়াছ?’
গুরুর এইরূপ প্রশ্নে বিচলিত না হইয়া পারিলাম না। গোবর ভর্তি মস্তকখানাকে একবার ক্লোক-ওয়াইজ এবং আরেকবার কাউন্টার ক্লোক-ওয়াইজ ঘুরাইয়া যাহা বুঝাইবার ছিল বুঝাইয়া দিলাম। গুরু পেট্রোল বোমার মত জ্বলিয়া উঠিলেন! ‘এই ছয় মাসে করিয়াছো টা কি? নতুন বই সামনে পাইলে আমরা সাগ্রহে পড়িয়া ফেলিতাম!’ মনে মনে কহিলাম প্রথম/দ্বিতীয় ভাগে আমরাও তাহাই করিয়াছি। পঞ্চদশ শ্রেণীর ফাঁকিবাজ ছাত্রের নিকট হইতে ইহা আশা করা অপরাধ! সাধারণ পুস্তক হইলেও কথা ছিল কিন্তু মেশিন ডিজাইন ভিন্ন বস্তু। পরীক্ষার পূর্ব রাত্র ছাড়া ইহা পড়িবার ইচ্ছা আমার কোন কালেই হয় নাই।

‘বলো স্টিল কি জিনিস?’ কহিলাম ‘ বিশেষ উপায়ে তৈয়ারীকৃত লোইজাত পদার্থ!’ ‘ইহা কি মেটাল?’ কোন কিছু না ভাবিয়াই উত্তর করিলাম, ‘জ্বি জনাব!’ নাগাসাকির এটম বোমা মনে হয় দ্বিতীয়বারের মত বিস্ফোরিত হইল! ‘Steel itself is an alloy!’ অকস্মাৎ বিস্ফোরণে বধির হইয়া গুরুর পবিত্র মুখখানার দিকে ফ্যালফ্যাল নেত্রে কিছুক্ষণ তাকিয়া থাকিলাম। ‘পাঁচখানা বেল্টের সাহায্যে একখানা পুলি ঘুরিতেছে। হঠাৎ একখানা বেল্ট ছিঁড়িয়া গেল। তুমি কি করিবে?’ তটস্থ মুখে কৃত্তিম হাসি আনিয়া ভয়ে ভয়ে বলিলাম, ‘কিছুই করিব না! চারখানা বেল্ট দিয়াই পুলি ঘুরিবে!’ গুরু মনে হয় এইরূপ উত্তর আশা করেন নাই। ‘চারখানা বেল্ট দিয়া পুলি চলিলে পাঁচখানার কি প্রয়োজন ছিল?’ গুরুর কথায় যুক্তি আছে বটে।

শেষ চিকিৎসা হিসেবে ‘Replacement’ এর কথা মনে উঁকি দিল। বুকে সাহস সঞ্চয় করিয়া বলিয়া ফেলিলাম, ‘তবে রিপ্লেস করিব!’ গুরুর মুখ আলোকিত হইয়া উঠিল। ‘তাহার মানে তুমি একখানা বেল্ট রিপ্লেস করিবে?’ গুরুর উজ্জ্বল মুখ দেখিয়া কোন কিছু না ভাবিয়াই মস্তকখানা আপ-ডাউন করিলাম। গুরু চেঁচিয়া উঠিলেন- ‘পুরাতন আর নুতন বেল্টের টেনশন কি এক হইবে? ডিজাইনিং পড়িয়া এই শিখিয়াছো?’ মনে মনে ভাবিলাম পাশ লইয়া টেনশন করিয়াই কুল পাইতেছিনা সেইখানে বেল্টের টেনশন পরিমাপ করিবার অবকাশ কোথায়? ত্যক্ত-বিরক্ত গুরু যারপর নাই নিরাশ হইয়া বলিলেন ‘চলিয়া যাও... তোমাদের দ্বারা কিচ্ছু হইবে না!’ আমিও যারপর নাই খুশিতে ডগমগ হইয়া বাহির হইয়া আসিলাম! খুশির অবশ্য একটা বিশেষ কারণ আছে!

‘লেভেল থ্রি শেষ করেছি...
আমি এখন লেভেল ফোরে!
রুখবে আমায় কে?’


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.