সুচিত্রা সেন তো এ দেশের মেয়ে। পাবনায় তার পৈতৃক নিবাস, শ্বশুরবাড়ি। সেখান থেকে তাকে চলে যেতে হলো কেন? '৪৭-পরবর্তী সময় থেকে হিন্দু সম্প্রদায়কে নানা নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্যে দেশ ছাড়তে হয়েছে। সেই নির্যাতনের অভিজ্ঞতা নিয়ে সুচিত্রা সেনও এখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। আজ দেশ ভাগের প্রায় ৬৬ বছর পর আবার সেই একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বাংলাদেশে।
কেন এত বছরে একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে পারলাম না? শুক্রবার এ টি এন নিউজের টকশো 'নিউজ আওয়ার এঙ্ট্রা'-এ প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এ কথা বলেন।
মুন্নী সাহার উপস্থাপনায় তিনি বলেন, সুচিত্রা সেন বাঙালির আবেগের জায়গাকে কাঁপিয়েছিলেন। তার ডাকনাম ছিল রমা। আজকে যখন ফিল্মে রমা রমা বলে চিৎকার শুনি তখন মনে হয় এই রমা আমাদেরই ছিলেন। আমরাই তো পারতাম এই রমাকে অনেক বড় করে দিতে।
তাকে কেন চলে যেতে হলো? কেন একটা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমরা এমন আচরণ করব? আমাদের সরকার, জনগণ, সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ সবাই মিলে কেন প্রতিরোধের জায়গাটি তৈরি করতে পারলাম না? কেন সুচিত্রা সেনের চলে যাওয়ার গল্পটি আমাদের জীবনে বার বার ফিরে আসছে? সেলিনা হোসেন বলেন, আমি উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জায়গা ঘুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের আর্তনাদ দেখে এসেছি। মানুষের সে কী কান্না! কাঁদবেই না কেন? যে মানুষ তার বসতবাড়ি, দোকান, জমির ফসল- সব কিছু হারিয়েছে তার কান্না ছাড়া কী আছে? তাকে একটা কম্বল, পাঁচ কেজি চাল, পাঁচ কেজি ডাল দিলে কি তার সান্ত্বনা হয়? তারা বলেছে, ভাত দিয়েন না, ত্রাণ দিয়েন না, নিরাপত্তা দেন। দেশে নির্বাচন হবে। মানুষ নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবে। যাকে খুশি ভোট দেবে।
কেন তাকে জোর করে একটি ঘরে আটকে রাখা হবে? কেন একদল মানুষকে জোর করে স্কুল ঘরে আটকে রেখে তালা দিয়ে দেওয়া হবে? এই পুড়ে যাওয়ার রাজনীতি কবে বন্ধ হবে? আগে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মীয় সম্প্রদায়কে যুক্ত করার প্রবণতা ছিল না। আজ এটা প্রবল হয়েছে। তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই নিজস্ব ধর্ম আছে। সেই ধর্ম নিজের ইচ্ছামতো পালনের অধিকার সবার আছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।
'ধর্ম যার যার, উৎসব সবার' এমন একটি কথা আমরা সব সময় বলে থাকি। আজ হিন্দুদের বলা হয় সংখ্যালঘু। অনেকেই আমার কাছে আপত্তি করেছেন- দিদি, আপনারা শব্দটি বন্ধ করুন। আমরা সংখ্যালঘু না, আমরা একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ। একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমি হিন্দু ভাইবোনদের বলতে পারিনি 'সংখ্যালঘু' শব্দটা বাদ দেব।
আজ রাজনৈতিক উৎপাতের কারণে শব্দটি মিডিয়া হয়ে মানুষের মুখে মুখে উঠে এসেছে। আজকে তাদের ঠিকমতো নিরাপত্তা দিতে পারলেই এ শব্দটি আমাদের জীবন থেকে তাড়াতে পারব। সেলিনা হোসেন বলেন, আমরা সংখ্যালঘু বলে কেন তাদের মানবেতর অপমানিত জীবনের দিকে ধাবিত করে দিচ্ছি? এ শব্দটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ শব্দটি দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে অপমানিত করছি। তারা এ দেশের সম্মানিত সাংবিধানিক নাগরিক।
সেই জায়গাটিকে ঠিক করতে না পারলে আমরা সামাজিকভাবে পিছিয়ে যাব। শুধু সরকারের দিক থেকে নয়, সামাজিকভাবেও এ পরিমণ্ডল তৈরি করতে হবে। আমরা কীসের সংখ্যাগুরু? আমরা সন্ত্রাসী, আমরা দুর্নীতিবাজ। আমরা লুটতরাজ করি। আমরা এমন সংখ্যাগুরু মানুষ যে, একজন ভালো আদর্শবান অন্য ধর্মের মানুষকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে যেতে পারি না!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।