জামাত-শিবির দূরে গিয়া মর! আমেরিকা-ইরাক যুদ্ধের সময়কার কথা। আমাকে তখন একদমই পোলাপান বলা যায়। দেশে তখন একটা ট্রেডিশন দেখা গেল “কুশপুত্তলিকা” বানানোর। জায়গায় জায়গায় বুশের পুতুল/প্রতিকৃতি বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হত কিংবা রড দিয়ে পেটানো হত, আগুন ধরিয়ে দেয়া হত।
আমরাও মহা উৎসাহে কাজে নেমে পড়লাম ।
আমি, আমাদের দোকানের দুই কর্মচারী আর আমার লজিং টিচার ছিলাম এই শৈল্পিক কাজের কারিগর। বাশ আর কঞ্চি দিয়ে ফ্রেম তৈরী করে খড় দিয়ে মুড়িয়ে একদম মানুষের সাইজের একটা পুতুল তৈরী করা হল। বাবার পুরোন শার্ট-প্যান্ট আর কোট পড়ানো হল। আমার একজোড়া পুরোনো কেডস আর আমার টিচারের কাউবয় হ্যাট পড়ানো হলো। আমার দাদু আবার বুশের হাতে একটা হারিকেন বেধে দিলো।
ঠিক হলো রাত আটটার দিকে বুশকে রাস্তার পাশের গাছে ঝুলিয়ে দেয়া হবে।
এখানে একটু বলে রাখি, আমাদের এলাকা একটু মফস্বল ধরনের, আর উত্তর পশ্চিম দিকে প্রায় ৫ কিমি পরেই গ্রামের শুরু। গ্রামের মানুষ আমাদের বাজারে আসতো, চায়ের দোকানে টিভি দেখতো, আড্ডা মারতো আর রাত বাড়লে বাসায় ফিরে যেত। বাজারে যাওয়ার রাস্তাটা আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে গেছে। তখন এত ঘন বসতিও ছিলো না।
আমাদের বাড়ির আশে পাশে পুকুর, নালা আর পতিত জমি ছিল।
সেই সময়ে আমার আবার ইলেক্ট্রনিক্স এর উপর ঝোক ছিল । তখনই সম্ভবত আমাদের এলাকায় ছোট ছোট এলইডি লাইট প্রথম আসে। দুই টাকা পিস হিসেবে পাওয়া যেত। আমি একটু ইঞ্জিনিয়ারিং খাটালাম, বুশের চোখের জায়গায় লাল এলইডি লাইট আর বুকের সাথে নীল লাইট লাগালাম ।
পাওয়ার সোর্স দিলাম ইয়েজ টর্চ লাইটের ব্যাটারি থেকে।
তখন আবার আমাদের বড়ই গাছে ইদুরে খুব উৎপাত করতো। বড়ই গাছটাও রাস্তার পাশে ছিল। ইদুরের উৎপাত ঠেকাতে আমরা বড়ই গাছে টিনের কন্টেইনার বেধে দিয়েছিলাম। একটা দড়ির এক প্রান্ত টিনের কন্টেইনারের সাথে আরেক প্রান্ত আমার টিচারের রুমে ছিল।
আমার এই টিচার রাত জেগে পড়াশুনা করতেন, তাই তার দায়িত্ব ছিল একটু পর পর দড়ি টেনে টিনের কন্টেইনার নাড়িয়ে দেয়া। কন্টেইনার নাড়ালে এর ভেতরে রাখা ইটের টুকরার জন্য ঘটর ঘটর শব্দ হতো।
রাত আটটার একটু পরেই জর্জ ডব্লিউ বুশ সাহেবকে দড়ি দিয়ে রাস্তার পাশের গাছে বেধে দেয়া হলো, ইরাক যুদ্ধের প্রতিবাদ স্বরুপ । আমি ব্যাটারির সাথে লাইট কানেকশন দিয়ে দিলাম, আম্মু বুশের হাতের হারিকেনে তেল ভরে ডিম করে আলো জ্বেলে দিলো। বিশ্বাস করবেন না, বুশকে তখন সেইরাম হ্যান্চাম লাগছিলো।
রাতে টিচার তার দায়িত্ব মতই একটু পর পর টিনের কন্টেইনার নাড়িয়ে শব্দ করেছেন, যার ফলাফল পাওয়া গেল ভোরবেলায় । ভোরে স্যার পুতুলের অবস্থা দেখতে গিয়ে দেখেন, আমাদের বাসার সামনে এলোমেলো ভাবে প্রচুর স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । গেরুয়া রংয়ের একটা লুঙ্গিও পাওয়া গেল । (বিদ্রঃ আমাদের এলাকার কবিরাজ আংকেল সব সময় গেরুয়া লুঙ্গি পরতেন )। স্যার পরিস্থিতি বুঝতে পেরে দেরী না করে তখনই বুশ সাহেবকে গাছ থেকে নামিয়ে নিয়ে আসেন ।
সকাল বেলায়ই এলাকায় মুখরোচক অনেক ভুতের গল্প শোনা গেল। সবাই এক ফিরিঙ্গি ভুতের গল্প বলতে লাগলো, যে বাতাসে ভেসে থাকতে পারে, যার চোখ দিয়ে রক্ত বেরোয়, গা দিয়ে নীল আলো বেরোয়, হাতে আগুন জ্বলে । এলাকার সব চায়ের দোকানে এই একই টপিকে আলোচনা হতো।
কবিরাজ আংকেল এর গল্পটাও বেশ মজাদার, ফিরিঙ্গি ভুত নাকি লুঙ্গি কখনো দেখে নাই , কবিরাজ আংকেলের লুঙ্গি দেখে পছন্দ হওয়ায় কবিরাজ আংকেলের লুঙ্গি টেনে খুলে রেখে দিয়েছিলো । কবিরাজ আংকেল তখন এলাকার বিশাল বড় সেলিব্রেটি , প্রায়ই ফিরিঙ্গি ভুত তাকে স্বপ্নে নানা রকম ঔষধি গাছের খবর দিয়ে যায় ।
আমাদের বাড়িও বেশ বিখ্যাত হয়ে গেল, অনেকেই আমাদের বাড়ি দেখতে আসতো, তবে মজার ব্যাপার হলো একটু রাত হলেই সবাই এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতো না, পুরোনো রেল রাস্তা দিয়ে একটু ঘুরে যাতায়াত করতো।
এই ঘটনা ঘটানোর জন্য আমাদের আব্বু অনেক রাগ করেছিল , আবার আব্বুই কিন্তু চায়ের দোকানের আলোচনাগুলো বাসায় এসে বলতো , আর হাসতে হাসতে ঘর কাপিয়ে দিতো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।