আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইসিসির আগে বিসিবির গালি প্রাপ্য!



"এই রাজীব ভাইয়া, শুনেছো, বাংলাদেশ আর টেস্ট খেলতে পারবে না!"
"হ্যা, আমি শুনেছি যে একটা প্রপোজাল রাখা হয়েছে আইসিসিতে, কিন্তু ওটাতো এখনও পাস হয়নি। ওটা কেবল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর ইন্ডিয়ার দাবী। "
"বাংলাদেশও ওটার পক্ষে ভোট দিবে। "
তারেকের এই কথাটায় আমি এত অবাক হলাম যে কিছুক্ষণ কথাই খুঁজে পেলাম না।
"হ্যালো! হ্যালো! ফোন রেখে দিলা নাকি? হ্যালো! হ্যালো!"
খবরে জানলাম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মেজরিটি ভোটার এই দাবীর পক্ষে তাঁদের যুক্তি দেখিয়েছেন, "এর ফলে আমাদের আয় বেড়ে যাবে।

"
আরেকজনের দাবী আরও মজার। "আগামী দশ বছরেও আমরা আটে উঠবো কিনা জানিনা, কাজেই ওদের দাবীটা মেনে নেয়াই ভাল। বড় ভাইদের বিপক্ষে গেলে যদি ওদের রোষানলে পড়তে হয়! আর তাছাড়া এখনওতো নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে খুব একটা লাভ হচ্ছে না!"
কী হাস্যকর কথা! এরা নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পরিচালনা কমিটির সদস্য!
ভাই, টাকা আয় করার ইচ্ছে থাকলে বাইরে গিয়ে ব্যবসা করেন। পান বিড়ির দোকান দেন, রেস্টুরেন্ট দেন, ব্যাংক দেন, যা খুশি তা করেন; কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডে বসলে শুধু ক্রিকেটের স্বার্থই চিন্তা করতে হবে। এখানে আপনাদের টাকা কামাতে বসানো হয়নি।


যেখানে খোদ বাংলাদেশেরই আগ্রহ নেই, সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কেন শুধু শুধু এর বিরোধিতা করতে যাবে?
ক্রিকেটারদের খেলার মান বৃদ্ধি করতে টেস্ট ক্রিকেটের কোনই বিকল্প নেই। উদাহরন দিলেই সবাই বুঝতে পারবেন।
একটা সময়ে আমরা কেনিয়ার সাথে খেলতে গিয়েই হিমশিম খেতাম। ম্যাচের পর ম্যাচ হারতাম। ফাঁকে তালে একটা জিততে পারলেই আনন্দে একেবারে আত্মহারা হয়ে যেতাম! রং খেলাখেলি, রাস্তায় রাস্তায় বিজয় মিছিল! কেনিয়ার সাথে বাংলাদেশের খেলা হলে প্রচার করা হতো "চিরপ্রতিদ্বন্দী" হিসেবে।

এর পরেই আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পেলাম। কেনিয়া পেল না। এখন কেনিয়ার সাথে আমাদের ক্রিকেটের তুলনা চলে?
জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রেও তাই। মুগাবী সরকারের জন্য তারা টেস্ট ক্রিকেটে অনিয়মিত হতেই তাদের খেলার মানও পড়ে গেল। একটা সময়ে তারা আমাদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে থাকলেও এখন আমাদের কাছে তাদের নিয়মিতই হারতে হয়।


আমরা কী খুব খারাপ খেলি? ঘরের মাঠে আমাদের রেকর্ড কী খুব বেশি খারাপ? ওয়েস্টইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ডকে এসে নাস্তানাবুদ হতে হয় আমাদের কাছে। এবারে শ্রীলংকাকেও পেয়ে বসবো আমরা ইনশাল্লাহ! গত এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে আমরা দুইবারই 'প্রায়' হারিয়েই বসেছিলাম। ইন্ডিয়া আর শ্রীলঙ্কাতো পাত্তাই পায়নি!
আর বাইরের মাঠে আমাদের রেকর্ড নিয়ে কথা বলছে? কারা? ইন্ডিয়া? তাদের নিজেদের রেকর্ডের দিকে একবারও কী খেয়াল করেছে তারা? গত দশ টেস্টের নয়্টাতেই হেরেছে, গত পাঁচ ওয়ানডের চারটাতে। ঘরের মাঠে জিতে জিতে নাম্বার ওয়ান হয়ে বাহাদুরী দেখাতে এসেছে!
বরং আইসিসিতে এই প্রস্তাব দিতে পারতো, যেহেতু বাংলাদেশ এখনও দশ নম্বর দল, কাজেই তার সাথে টেস্ট সিরিজ খেলতে হলে আগামী কয়েকবছর বিশ্বের বড় দলগুলোকে অবশ্যই বাংলাদেশে এসে খেলতে হবে। তাহলে লড়াইটা ব্যালেন্সে আসবে।

এবং যখন বাংলাদেশ যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে যাবে, তখন বাইরে সিরিজ খেলতে যাবে। এইরকম অবিরাম হোম সিরিজের আয়োজন করতে থাকলে আমাদের বোর্ড সদস্যদেরও আয় বাড়ত, যেটা তাদের মূল ভাবনা।
একসময়ে আইসিসির লক্ষ্য ছিল ক্রিকেটকে গ্লোবালাইজড করা। এই প্রস্তাব পাশ হলে গ্লোবালাইজড হওয়া বহুদূর, বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের খেলার মানই নেমে যাবে। নেপালের সাথে খেলার জন্য আমাদের সাকিব আল হাসান কতক্ষন প্র্যাকটিস করবেন? কমন সেন্স।

এখানেও একটা বাস্তব উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। এই কিছুদিন আগেও অস্ট্রেলিয়া কী দাপটের সাথেই না বিশ্ব শাসন করেছে। নিজেদের ক্রিকেটকে একদম ভিনগ্রহের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। একটা সময়ে তারা উপলব্ধি করলো, তাদের কোনই কম্পিটিশন নেই। ব্যস, এখন তাদের ইন্ডিয়াতে এসে নাকাল হতে হয়।

এই অ্যাসেজের আগের দুই দুইটা অ্যাসেজও তাদের হারতে হয়েছিল। এই অস্ট্রেলিয়াকে দেখে কেউ আগে থেকেই হার মেনে বসে না। তারা জানে, এদের হারানো সম্ভব।
কিন্তু এসব বলে কোন লাভ আছে? আমাদের শ্রীনিবাসন দাদার মাথায় এখন ঘুরছে টাকার চিন্তা। তার আরও টাকা চাই! আমাদের বোর্ড পরিচালকদেরও মাথায় ঘুরছে একই চিন্তা।

তাদেরও আরও টাকা চাই। বউ আমেরিকায় শপিংয়ে যেতে চায়, ছেলে-মেয়েরা বন্ধু বান্ধবকে দামী দামী রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে চায়, বিএমডব্লিউ ফাইভ সিরিজেও তাদের পেট ভরে না, সেভেন সিরিজ না হলে কী 'কূল' দেখায়? তাদের আরও টাকা চাই! সেই শপিং, ডিনারের বিল, দামী গাড়ি কিনতে হলে হাজার হাজার উঠতি ক্রিকেটারের স্বপ্ন বেঁচতে হবে। ক্ষতি কী?
"হ্যালো! রাজীব ভাইয়া, হ্যালো! আছো? নাকি লাইনটা কেটে গেল?"
"আছি। মনে মনে গালাগালি করছিলাম বোর্ড মেম্বারদের। মানুষ এতোটা মেরুদন্ডহীন কিভাবে হয়?"
"মনে মনে কেন? জোরে জোরেই দাওনা।

আমরাও সবাই মিলে একসাথে ওদের গালি দেই!"

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.