আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের আর কত টাকা চাই?



জিম্বাবুয়ের উদীয়মান তরুণ পেসার কাইল জারভিস ক্রিকেট বোর্ডের সাথে বেতন-ভাতা সংক্রান্ত দ্বন্দের জের ধরে ২০১৩ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়ে নাম লেখান কাউন্টি দল ল্যাঙ্কাশায়ারে। উদ্দেশ্য একটাই, জীবিকার একটা নিরাপদ সংস্থান করা। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে এটা মোটেই কোন বিচ্ছন্ন ঘটনা নয়। এমন ঘটনা ঘটছে শ্রীলংকা বা ওয়েস্টইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডেও। লঙ্কান বোর্ড বছরের পর বছর ধরে ঋণগ্রস্ত, ২০১০-১১ সালে ক্রিকেটাররা ৮ মাস ছিলেন বেতন বঞ্চিত।

ওয়েস্টইন্ডিয়ানরা তাদের ছেলেমেয়েদের ক্রিকেটার বানানোর চেয়ে এ্যাথলেট হিসেবে গড়ে তুলতেই বেশী মনযোগী, কারণ এ্যাথলেটিকস ক্রিকেটের চেয়ে ঢের বেশী অর্থকরী। বাংলাদেশে বেতন-ভাতার কোন সমস্যা না থাকলেও বছর জুড়ে ক্রিকেটকে ঠিকমত মাঠে রাখা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনা।

এমনকি যেখানে বর্তমান টেস্ট ক্রিকেটের এক নাম্বার দল দক্ষিণ আফ্রিকাকেও টাকার যোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে ভারতীয় ক্রিকেট কন্টোল বোর্ড, বিসিসিআই এর দেড় হাজার কোটি টাকা (১১০০ কোটি রুপি) ব্যাংকে অলস পড়ে আছে! কিন্তু বিসিসিআই এতেও সন্তুষ্ট নয়। এরপরও ভারতের দাবি আইসিসির লভ্যাংশের ”সমবন্টন নীতি”র পরিবর্তন এনে এই লভ্যাংশ অর্জনে যার যার ”অবদান” অনুযায়ী তা বন্টন করার। আইসিসির নেট আয়ের ৭৫ শতাংশ এর স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেয়া হয়।

বাকি অংশ থেকে অন্যান্য সহযোগী সদস্যসের মধ্যে বন্টন করা হয়। কিন্তু ভারতের দাবি হচ্ছে এই লভ্যাংশ বন্টন করা হোক আইসিসির আয়-উন্নতিতে যার যার অবদান অনুযায়ী। সে হিসেবে আইসিসির বাণিজ্যলক্ষ্মী ভারতের পকেটেই যাবে লভ্যাংশের সিংহভাগ। একেই কি বলে যখন রোম পোড়ে তখন নিরো বাশি বাজায়? কেননা আইসিসির ৭.৫ শতাংশ লভ্যাংশ না পেলেও ভারতের কিছুই যায় আসে না। কিন্তু জিম্বাবুয়ে বা শ্রীলংকা বা ওয়েস্টইন্ডিজের বাজেট থেকে সামান্য কম পড়লেও তাদেরকে হয়তো ছাটাই করতে হবে কোন বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট বা বয়ষভিত্তিক কোন আসর।



ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ২০১২-১৩ অর্থ বছরে মোট আয় ১২০০ কোটি টাকা আর খরচপাতি বাদে নেট আয় ৪৪০ কোটি টাকা। নিমবাসের কাছে বৈশ্বিক মিডিয়াস্বত্ব বিক্রয়, জি টেলিফিল্মসের কাছে নিরপেক্ষ মাঠের খেলার স্বত্ব বিক্রয়, নাইকির সাথে অফিসিয়াল কিট সরবরাহের পৃষ্ঠপোষকতা চুক্তি, সাহারার সাথে ক্রিকেট দলের পৃষ্ঠপোষকতার চুক্তি, হোটেল, ভ্রমণ, মাঠ ব্যবহার ইত্যাদি অন্যন্য আরও বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষকতা এবং অবশ্যই সোনার ডিম পাড়া হাঁস আইপিএল মিলিয়ে অপরাপর ক্রিকেট বোর্ড থেকেতো বটেই সবচেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দীর চেয়েও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই-এর আয় দ্বিগুণ।

আইসিসির উপার্জনে সবচেয়ে বেশী/তিন চতুর্থাংশ অবদান রাখা ভারতের এমন দাবি ঠিক অন্যায্য না হলেও ক্রিকেটের বিশ্বায়নের পথে এটা একটা বড় হুমকি। কেননা ক্রিকেট এখনও হাতে গোণা গুটিকয়েক দেশের খেলা। ফুটবল বা অন্যান্য খেলার মতো বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেবার জন্য এই মুহুর্তে প্রয়োজন ভেদাভেদহীন এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী একজন অবিভাবক।



এ জগতে হায় সেই বেশী চায় আছে যার ভুরি ভুরি
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি। ।

শতবর্ষ আগে কবিগুরু তার এই বিখ্যাত চরণদুটি রচনার সময় ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড, বিসিসিআই-এর কথাও মাথায় রেখেছিলেন কিনা কে জানে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.