হলিউডে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাইয়েরা তাদের ছাপ রেখে গেছেন প্রবলভাবে। তাদের উপস্থিতির কারণে কখনও বদলে গেছে ইন্ডাস্ট্রির ধরণ, আবার কখনও বদলে গেছে সিনেমার স্টাইলের সংজ্ঞা। একাল-সেকালের তেমনই কিছু ভাইকে দেখলেন সুমন রায়-
ওয়ার্নার ব্রাদারস
এরাই হয়তো হলিউডের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ভাই। তাদের বাবা-মা ছিলেন ইহুদি। পোল্যান্ড থেকে তারা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে আমেরিকা মহাদেশে চলে আসেন।
প্রথমে কানাডায় থাকার পর তারা আমেরিকাতে বসবাস শুরু করেন। চার ওয়ার্নার ভাই হ্যারি (আসল নাম হির্সজ), অ্যালবার্ট (আসল নাম আরন), স্যাম (আসল নাম স্মাল) আর জ্যাক (আসল নাম জেকব) বিংশ শতকের গোড়াতেই চলে আসেন চলচ্চিত্র ব্যবসায়।
১৯২৩ সালের ৪ এপ্রিল ব্যাংকার মোটলে ফ্লিন্টের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে অফিসিয়ালি তারা 'ওয়ার্নার ব্রাদারস পিকচারস, ইনকরপোরেটেড' নামে কোম্পানি তৈরি করেন। যদিও ১৯৬০ সালে ওয়ার্নার ব্রাদারসের তরফে দাবি করা হয়েছিল, তাদের কোম্পানি ১৯০৫-এ তৈরি হয়। এখন পর্যন্ত ওয়ার্নার ব্রাদারসরা হলিউডের প্রথম সারির চলচ্চিত্র নির্মাতা।
এপস্টিয়েন ব্রাদারস
হলিউড ভাইদের মধ্যে অভিনেতা এবং প্রযোজক বাদ দিয়ে তালিকা তৈরি করতে গেলে একেবারে প্রথমেই আসতে বাধ্য এপস্টিয়েন ব্রাদারসের নাম। চলচ্চিত্র দুনিয়া এপস্টিয়েন ভাইদের একসঙ্গে খুব বেশি সময়জুড়ে কাজ করতে দেখেনি। যমজ ভাতৃদ্বয় জুলিয়াস জে এপস্টিয়েন এবং ফিলিপ জি এপস্টিয়েন খুব বেশি দিন একসঙ্গে কাজ করতে পারেননি, কারণ ফিলিপ ১৯৫২ সালে মাত্র ৪২ বছর বয়সে মারা যান। জুলিয়াস তার দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত কাজ করলেও, তার নিজের কিংবা তাদের দুই ভাইয়ের সেরা কাজ বলতে গেলে একটি ছবির কথাই মুহূর্তে মনে পড়তে বাধ্য সবার। 'ক্যাসাব্লাংকা'।
সেরা চিত্রনাট্যের জন্য হাওয়ার্ড কচের সঙ্গে ভাগাভাগি করে ১৯৪৪ সালে অস্কার জেতেন দুই ভাই। এছাড়াও 'দ্য লাস্ট টাইম আই স প্যারিস', 'আর্সেনিক অ্যান্ড ওল্ড লেস'-এর মতো বিখ্যাত ছবিতেও তারা একসঙ্গে চিত্রনাট্যের কাজ করেছিলেন।
কফম্যান ব্রাদারসকফম্যান ভাইদের একসঙ্গে মনে রাখার কারণ অবশ্য তেমনভাবে নেই। কারণ এক ভাই চার্লি কফম্যান হলিউডের প্রথম সারির চিত্রনাট্যকারদের মধ্যে একজন। সেখানে দ্বিতীয় জন, ডোনাল্ড কফম্যান প্রায় চলচ্চিত্র দুনিয়ার সঙ্গে সেভাবেই যুক্তই নন।
তবু এই যমজ কফম্যান ভাইদের মনে থেকেই যাবে পরিচালক স্পাইক জোনজের 'অ্যাডাপটেশন.' ছবির জন্য। চার্লির লেখা 'বিইং জন ম্যালকোভিচ' বানানোর পর জোনজ এতটাই উত্তেজিত হয়ে পড়েন যে, কফম্যান ভাইদের প্রায় নিজেদের জীবন নিয়েই লেখা অন্য এক গল্প 'অ্যাডাপটেশন.' নিয়ে ছবি বানিয়ে ফেলেন তিনি। যে ছবির চিত্রনাট্যকাররা হলেন কফম্যান ভাইরা। আবার ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রও তারা। আর ছবিতে তাঁদের চরিত্রে অভিনয় করেন নিকোলাস কেজ।
ফোনিক্স ব্রাদারস
এই মুহূর্তে এক ভাই হলিউডের তাবড় অভিনেতাদের মধ্যে একজন। কিন্তু শুরুর গল্পটা একেবারেই অন্যরকম ছিল না। ১৯৭০ সালে জন্ম নেওয়া রিভার ফিনিক্সের মধ্যে হলিউড এক সময় দেখতে পেয়েছিল ভবিষ্যতের সুপারস্টারকে। ১৯৮৬-র 'স্ট্যান্ড বাই মি', ওই বছরেরই 'দ্য মসকুইটো কোস্ট' থেকে শুরু করে ১৯৮৯-তে 'ইন্ডিয়ানা জোনস অ্যান্ড দ্য লাস্ট ক্রুসেড'-এ শিশু ইন্ডিয়ানা, সব ভূমিকাতেই সফল ছিলেন রিভার।
১৯৮৮-তে 'রানিং অন এম্পটি' ছবিতে তার অভিনয় তাকে অস্কার নমিনেশনও দেয়।
তবে নিঃসন্দেহে জীবনের সেরা কাজটি তিনি করেন গাস ভান সান্তের 'মাই ওউন প্রাইভেট আইদাহো'-তে। ১৯৯৩ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে ড্রাগ ওভারডোজে মারা যান তিনি। জনি ডেপের লস অ্যাঞ্জেলস ক্লাবের ভাইপার রুমের বাইরে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
অন্য ভাই জোয়াকিন ফিনিক্সের উত্থান কিন্তু তার কিছু পরে। চার বছরের দাদার মৃত্যুর পর ফিনিক্স পরিবারের ছোট ভাইকে প্রথম বড় ব্রেক দেন ওই গাস ভান সান্ত-ই।
'টু ডাই ফর' ছবিতে। এরপর থেকে একের পর এক বিখ্যাত ছবি। 'গ্ল্যাডিয়েটর', 'ওয়াক দ্য লাইন' হয়ে হালের 'দ্য মাস্টার' কিংবা 'হার', জোয়াকিন ফিনিক্স এখন হলিউডের বড় নাম।
অ্যাফ্লেক ব্রাদারস
বন্ধু ম্যাট ডেমনের সঙ্গে চিত্রনাট্যকার হিসেবে হলিউডে এসেছিলেন বেন অ্যাফ্লেক। 'গুড উইল হান্টিং' ছবির জন্য পেয়েছিলেন অস্কারও।
কিন্তু তারপর বেশি করে নেমে পড়েন অভিনয়ে। অভিনেতা হিসাবে তিনি আজও তেমন সফল নন। কিন্তু পরিচালক হিসেবে বিরাট সাফল্য ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছেন তিনি।
২০১৩-তে 'আরগো' ছবির বিশাল জনপ্রিয়তা তো বটেই পেয়েছেন সেরা ছবির অস্কারও। ছোট ভাই ক্যাসি অ্যাফ্লেক অভিনেতা হিসেবে যে দারুণ সফল তা বলা না গেলেও, কাজ করে ফেলেছেন সোদেরবার্গ এবং গাস ভান সান্তের মতো পরিচালকের সঙ্গে।
দাদা বেনের পরিচালনায় 'গন বেবি গন' নিঃসন্দেহে তার জীবনের সেরা কাজ। কিন্তু নিজের প্রতিভায় প্রায় সবাইকে তিনি চমকে দিয়েছিলেন পরিচালনায় এসে। ২০১০-এ মুক্তি পায় তার প্রথম ফুল লেংথ ফিচার 'আই অ্যাম স্টিল হিয়ার'। বক্সঅফিসে সেভাবে সাফল্য না পেলেও সমালোচক মহলে রীতিমতো সাড়া ফেলে এই ছবি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।