আপন সত্ত্বাই জ্বলতে চাই, নিজে পুড়ে অন্যকে আলোকিত করতে চাই.। .। ।
কোন ভূমিকা ছাড়াই শুরু করলাম । আজকাল যে শব্দটা আমরা খুব বেশী শুনি সেটি হল সাম্প্রদায়িক হামলা ।
এই হামলার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না আমাদেরই মতো সাধারণ মানুষ । আমাদের হিন্দু ভাইয়েরা । আমরা বাংলাদেশে বসবাস করি । আমরা বাংলাদেশী । এখানকার মানুষের সব চেয়ে বড় পরিচয় তারা মানুষ, তারা বাংলাদেশী ।
কিন্তু তাঁর পরও আমরা সাম্প্রদায়িকতার হাত থেকে মুক্ত না । কারন অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক মানুষ সমূহ বাস করে । এখানে আছে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, আছে কিছু খ্রিষ্টান । তারা সবাই মানুষ । বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন কোন একা হিন্দু বা মুসলিমের রক্তে স্বাধীন হয় না, সেখানে সবাই ছিল ।
হাজারো মানুষের লাশের মিছিলে ছিল না কোন হিন্দু, মুসলিম সেখানে সবাই ছিল মানুষ , ছিল লাশ, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের লাশ । তাই ছিল না সৎকার করার ভিন্ন পদ্ধতি , দেওয়া হয়েছিল গন কবর । তাহলে আজ সেই দেশের মানুষের মাঝে কেন এত সাম্প্রদায়িকতা । কারন আর কিছুই না, কারন একটাই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট । আমাদের দেশের দুই রাজনৈতিক দল আজ দেশের সমস্ত মানুষকে দুইটা শিবিরে বিভক্ত করেছেন।
এখন আর তারা মানুষ না হয়ে গেছে আওয়ামীলীগ না হয় বিএনপি । আজ দেশের এই ব্যবস্থাই এক ভাইকে আরেক ভাইয়ের মুখোমুখি করে দিয়েছে । যেহেতু হিন্দুদের উপর হামলা করা হচ্ছে সুতরাং দোষটা স্বাভাবিক ভাবেই মুসলিমদের উপর আসে । এটাই স্বাভাবিক এবং সঠিক । কিন্তু আমার কথা হল হিন্দুরা সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত ???? খুব সাধারণ একটা উদাহারন টানতে চাই ।
ক্রিকেট খুব জনপ্রিয় একটা খেলা এদেশের মানুষের কাছে । আজন্ম আবেগী জনগণ হিসাবে এদেশের একটা দুর্নাম বিদেশে আছে । আর আমরা যে কতটা আবেগি সেটা ক্রিকেটের কোন আসর বলে দেয় । এখানে কোন হিন্দু মুসলিম থাকার কথা নয় । কিন্তু আমি দেখেছি বাংলাদেশ ভারত ম্যাচে বাংলাদেশের হারের পর তাদের উচ্ছাস, বাজি আর ঢোলের শব্দ ।
আরও একটা উধাহারন আমি দিতে চায় , বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ হিন্দুই সরকারী চাকরি থেকে অবসরের পর তাকে আর এদেশে দেখা যায় না, পরবর্তীতে শোনা যায় আগেই ছেলেমেয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন এখন তারা বাকি ছিলেন তাই তারাও যাচ্ছেন। আমি সরকারকে বলব শুধুমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অর্থ পাচার খুজে দেখবেন না, খুজে দেখেন সাধারণ মানুষের মাঝেই কতো মানুষ অর্থ পাচার করছে প্রতিনিয়ত । আমারই এক খুব কাছের বন্ধু ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র। খুব ভাল বন্ধুত্ত আমাদের সবার সাথে । সে কিছুদিন আগে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে এদেশেরই কোন চির আকাঙ্ক্ষিত জায়গায় ।
তাই সব সময়ই তাঁর কাছে আমাদের তথা এদেশের মানুষের আশা অনেক বেশী । কিন্তু কিছুদিন আগে যা শুনলাম তা রীতিমত অবাক করার মত কথা, তাঁর পিতামাতা নাকি চাচ্ছে না সে এদেশে পড়াশোনা করুক । তারা তাকে পার্শ্ববর্তী কোন দেশে নিয়ে যেতে চায় । কিন্তু সে মনে প্রানে রাজি না । আমি জানি না সে কতক্ষণ তাঁর অবস্থানে অটূট থাকতে পারবে , কিন্তু আমি অনেক হিন্দু বন্ধুকেই দেখেছি পড়াশোনা শেষের আগেই চলে যেতে ।
এদেশে তাঁর নিজ হাতে মানুষ করা সন্তানগুলো ফিরিয়ে আনতে পারে নায়, মাতৃত্বের দাবী নিয়ে দাঁড়াতেও পারে নায় । কি জন্য তারা চলে যায়, কি সুখের আশায়, কেন ?
আজ বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ নাই । এটা একই মায়ের সৎভাইয়ে পরিনত করেছে । আজ কেন হিন্দু বলতে আওয়ামীলীগ বোঝায়, কেন জামায়েত বলতে জঙ্গি বোঝায় । আজ কেন দাঁড়ি টুপি না থাকলে নাস্তিক আর থাকলে জঙ্গি বলে ধরে নেওয়া হয় ।
ধর্ম কেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হল । ধর্মকে কেন ব্যবহার করা হল । ভোট টানার নানা মিথ্যা কথার ফুলঝুরি থাকে না আশা নিরাশার বানি । আজ ঠিক ধর্মকেও ঠিক সেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে দেওয়া হচ্ছে ভুল ব্যাখ্যা, ঘটছে কোরআন পড়ানো সহ হিন্দুদের দেবতা পোড়ানোর মতো ঘটনা । দেশের মানুষ কি এটা চায় ।
চায় না । কাদের স্বার্থে আপনারা রাজনীতি করেন ? মানুষ এখন রাজনীতি মুক্ত বাংলাদেশ চায় । যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে রাজনীতি । শিক্ষা ব্যবস্থাতো অনেক আগেই কুলসিত হয়েছে । মানুষ গড়ার কারিগর সিক্ষক্রা আজ নিজেরাও দুই শিবিরে বিভক্ত, জীবন বাঁচানো ডাক্তাররাও আজ বিভক্ত, আর আইনজীবীরা তো অনেক আগেই ।
কেন আজ নির্বাচনের শুরু থেকে ক্ষমতার শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক মাঠ গরম রাখতে হয়, কেন এক পক্ষ অন্য পক্ষকে মাঠে নামার আহ্বান জানায় । হরতাল অবরোধের নামে আজ নির্বিচারে মানুষ মারতে দেখছি আমরা । ৭১ সালে শহীদ হওয়া মানুষ গুলো কি বাংলদেশ স্বাধীন করেছিল নাকি কোন দেশটা রাজনৈতিক পরাশক্তির কাছে সমর্পণ করে গিয়েছিল । কেন আজ কিছু হলে পুলিশের ভয় না দেখিয়ে তথাকথিত ভাইয়ের ভয় দেখানো হয় । শুনেছি আইনের হাত অনেক লম্বা কিন্তু রাজনীতি আজ সেখানেও বেড়ি দিয়ে দিয়েছে ।
সাম্প্রদায়িকতা অবশ্যই আমাদের কাম্য নয় । সাম্প্রদায়িকতা কোন দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে পারে না , বরং বাঁধা হিসাবে আবির্ভূত হয় । আমরা একটা সুখী ও সুন্দর বাংলাদেশ চেয়েছি । যেখানে থাকবে সুশাসন, সুন্দর বিচার ব্যবস্থা, কিছু না হোক অন্তত কাজের উদ্দেশে বের হয়ে লাশ হয়ে ফিরবে না এমন নিশ্চয়তা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।