আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হঠাৎ চাঙ্গা শেয়ারবাজার

দরপতনের ধারাবাহিক বৃত্ত ভেঙে হঠাৎ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের দুই শেয়ারবাজার। চলতি বছরের শুরু থেকেই উভয় শেয়ারবাজারের সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি জানুয়ারিতে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বেড়েছে প্রায় ৫০০ পয়েন্ট। যেখানে ২০১৩ সালে এক বছরে সূচক বেড়েছিল মাত্র ২০০ পয়েন্ট। বর্তমানে গড় লেনদেন হার বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০ কোটি টাকার ওপর রয়েছে।

ঢাকার মতো চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জেও (সিএসই) সার্বিক সূচক ও লেনদেনে গতি ফিরেছে একইভাবে।

শেয়ারবাজারের এই চাঙ্গা ভাব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হলেও পাশাপাশি শঙ্কাও সৃষ্টি করেছে। নানামুখী গুজবও রয়েছে। অনেকের মতে, এ উত্থানের পেছনে হয়তো কোনো কারসাজি চক্র সক্রিয়। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, দীর্ঘদিন পর এটা বাজারের স্বাভাবিক আচরণ।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন ইতিবাচক কিছু পদক্ষেপের কারণে বাজারে চাঙ্গা ভাব ফিরেছে। তাদের বিশ্লেষণে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম, সরকারের ইতিবাচক মনোভাব, ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বৃহৎ বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা প্রভৃতি কারণে শেয়ারবাজার আবার গতি পেয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি, এই মুহূর্তে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করায় বাজারে সূচক ও লেনদেন বাড়ছে। গত বছরের শুরুতে যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও শেষ দিকে সহিংতার কারণে দেশের পুরো আর্থিক ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সব ধরনের অস্থিরতা কাটিয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরেছে শেয়ারবাজারে।

দেশে বর্তমানে কোনো হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচি না থাকায় বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা আবার বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। ফলে বাজারে চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত সাধারণত জানুয়ারি থেকে জুন মাস কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম হিসেবে পরিচিত। গত ডিসেম্বর মাসে যেসব কোম্পানির অর্থবছর সমাপ্ত হয়েছে তার কয়েকটি ভালো লভ্যাংশ দেবে এমন আগাম প্রচার বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এসব কোম্পানির শেয়ারের দরও ঊধর্্বমুখী রয়েছে। তৃতীয়ত বর্তমান সরকার গঠিত হওয়ার পরই শেয়ারবাজার নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সমর্থন আদায়ের জন্য ইতোমধ্যে বাজার স্থিতিশীল করতে সংশ্লিষ্টদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চতুর্থত বাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর সম্প্রতি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। মুদ্রানীতিতে ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর ফলে ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ফলে ব্যাংকগুলো অলস টাকার একটি অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে। মুনাফার আশায় অলস টাকার একটি অংশ বিনিয়োগ সম্ভাবনা বাড়ায় বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পঞ্চমত, বৃহৎ বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় রয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই গত দুই বছরে শেয়ারবাজারে লেনদেন করেননি। কোটি টাকার ওপর বিনিয়োগ রয়েছে এমন কারবারিরা বাজারে সক্রিয় হয়েছেন।

স্থিতিশীল বাজারের অন্যতম শর্ত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ এসেছে বাজারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সভাপতি আহসানুল ইসলাম বলেন, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে। এ ছাড়া লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম হওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বেড়েছে ব্যাংকের বিনিয়োগও। যার ইতিবাচক প্রভাবে বাজার ঊধর্্বমুখী।

অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগকারীদের এঙ্পেক্টেশন বেড়েছে। ফলে তারা বাজারে লেনদেন করায় বাজার ইতিবাচক। তবে বাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা ও ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়ায় বাজার চাঙ্গা হচ্ছে। যদি রাজনীতি আবার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে তবে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতায় আবারও ঘাটতি দেখা দেবে এবং বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্যের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরায় শেয়ারবাজার চাঙ্গা মেজাজে ফিরেছে।

তবে আমাদের মনে সবসময় শঙ্কা থাকে। আমরা চাই আবার যেন ১৯৯৬ বা ২০১০ সালের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে। সে জন্য কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।