কামনায় পৃথিবীর সকল সুন্দর দুচোখ মেলে দেখতে চাই সকলের অন্তর। আর কতকাল আমরা এসব দেখব আর সইব? ভারতে ধর্ষন এর ঘটনায় যেখানে সার ভারতবাসী সবকিছু তোলপাড় করে দিচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে একটা মেয়ে গনধর্ষনের স্বীকার হয়ে অনিশ্চিত এক জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার পাশে কি কেউ থাকবে না?
আজ দৈনিক সমকালে একটা নিউজ পড়ে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। আমরা এ কোন সমাজে বসবাস করছি।
পুরো দেশটাকে পতিতালয় বানিয়েও যদি ঘুনে ধরা এই সমাজটাতে আমাদের মা বোনদের ইজ্জত আমরা রক্ষা করতে পারি তবে আমি সেটার পক্ষে।
তবুও ধর্ষন নামক শব্দটি আর কোনদিন শুনতে চাই না।
সমকালের লেখাটি নিচে শেয়ার করলাম:
১০ ডিসেম্বর, সকাল ৭টা। টাঙ্গাইলের রসুলপুর এলাকার রেললাইনে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিল ১৫ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রী। স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তির পর জানা গেল, তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এর পর কেটে গেছে ২০ দিন।
হাসপাতালে এখনও মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে সে। এ অবস্থায় মা ছাড়া তার পাশে দাঁড়ায়নি কেউ-ই। ঘটনার জন্য মেয়েটিকে দায়ী করে নির্মম নির্যাতনের পর বাসা থেকে
তাড়িয়ে দিয়েছেন তার বাবা। এলাকার প্রভাবশালীরাও খারাপ মেয়ে আখ্যা দিয়ে তাকে সমাজচ্যুতির ঘোষণা দিয়েছেন। সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেলেও প্রকাশ্যে ঘুরছে ধর্ষণকারীরা।
ব্যবস্থা নেয়নি থানা পুলিশও।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নয়াদিলি্লতে যাত্রীবাহী বাসে গণধর্ষণের শিকার হন এক মেডিকেল ছাত্রী। টানা ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হার মানেন এ 'ভারতকন্যা'। তার এ মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ক্ষোভে উত্তাল ভারত। দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির রায় না হওয়া পর্যন্ত অনশনের ঘোষণা দিয়েছে তার পরিবার।
ঘটনার প্রতিবাদে সরকার থেকে শুরু করে বিরোধী দল_ সবাই এক কাতারে। মেয়েটির মরদেহ গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ছুটে যান এয়ারপোর্টে।
নির্যাতিত এ ভারতকন্যার পাশে দেশ এবং পরিবার দাঁড়ালেও বাংলাদেশে এ চিত্র উল্টো। এখানে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ সাম্প্রতিক সময়ে খুব একটা চোখে পড়ে না। সচেতন মহলের মতে, ভারতের ঘটনা থেকে অবশ্যই শিক্ষা নিতে হবে বাংলাদেশকে।
সব নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
জানা গেছে, গত ৬ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের মেয়েটিকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে একটি বাসায় ৪ দিন আটকে রেখে গণধর্ষণ করে ৬-৭ যুবক। এর পরই মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ফেলে যায় রেললাইনে। প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু লোকচক্ষুর ভয়ে তাকে বাসায় নিয়ে যান মা।
তখনই বাদ সাধেন বাবা। মেয়েটি এবং তার মাকে শারীরিক নির্যাতন করে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন। নিরুপায় মা মেয়েকে নিয়ে আবার হাসপাতালে হাজির হন। এলাকার প্রভাবশালীরা মেয়েটির মাকে জানিয়ে দিয়েছেন, 'চরিত্রহীন' মেয়েকে নিয়ে তিনি গ্রামে প্রবেশ করতে পারবেন না।
এই মেয়েটির মতো বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত অনেকেই ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়লেও কেউই তাদের পাশে দাঁড়ায় না।
এমনকি পরিবারগুলোও চায় ঘটনাটি আড়াল করতে। নারী নেত্রীদের মতে, বাংলাদেশে কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের ভয় এবং সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে পরিবারই তথ্য গোপন করতে চায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মেতে ওঠে ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র হননে। আর মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয় এসব তথ্য। বাদ যায় না নির্যাতিতার নাম-ঠিকানাও।
মানবাধিকারকর্মী, সমাজবিজ্ঞানী ও আইনজীবীরা বলছেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলেই ধর্ষণের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে সবার আগে ধর্ষিতাকে হয়রানি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তারা।
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী সমকালকে বলেন, আমাদের সমাজে ধর্ষিতার দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। ধর্ষণের মতো বর্বর সহিংসতার শিকার হয়ে আরও নির্মম পরিস্থিতিতে পড়েন তারা বিচার চাইতে গিয়ে। ধর্ষণ প্রমাণের নামে মেয়েটিকে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করা হয়।
হাসপাতাল থেকে কোর্ট_ প্রতিটি স্তরে সে বারবার ধর্ষিত হয়। তা ছাড়া মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকে হাল ছেড়ে দেন। ধর্ষণসহ সব নারী নির্যাতন মামলার দ্রুত বিচার সম্পন্ন হওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। একই সঙ্গে থাকতে হবে সম্মিলিত প্রতিবাদ-প্রতিরোধ।
পত্রিকার পাতা খুললে প্রতিদিনই চোখে পড়ে এক একটি লোমহর্ষক ঘটনা।
এক বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত কেউই রেহাই পায় না নরপশুদের পৈশাচিক তাণ্ডব থেকে।
চলতি বছরের ১ এপ্রিল রাজধানীর কাফরুল থানাধীন ইব্রাহিমপুরে ২ বছর ৪ মাস বয়সী এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ১ আগস্ট লৌহজংয়ে ধর্ষণের শিকার হয় এক বাক প্রতিবন্ধী। ওই দিনই ধর্ষিতার পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিয়ে থানায় বসেই ঘটনার রফা করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ২৭ সেপ্টেম্বর রামগড়ে পৈশাচিকভাবে গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় ধর্ষণ করা হয় ১২ বছরের এক শিশুকে।
২১ জুন মিরসরাইয়ে ৬ বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ২ জুন রাজধানীর হাতিরপুলে নাহার প্লাজার ১৩ তলায় ১৭ বছর বয়সী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। তার ২৬ টুকরো লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। যা ছিল ২০১২ সালের নারী নির্যাতনের মধ্যে আলোচিত ঘটনাগুলোর অন্যতম।
এমন হাজারো পৈশাচিক ঘটনা চোখে পড়ে প্রতিদিন প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমগুলোতে।
জাতীয় মহিলা পরিষদের তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ৭১১ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গণধর্ষনের শিকার হয়েছেন ১১৯ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৮৯ জনকে। মহিলা পরিষদ বলছে, এ পরিসংখ্যান বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে সংগৃহীত। পত্রিকায় পাতায় খুব কম ঘটনাই উঠে আসে।
ফরেনসিক পরীক্ষার ঝামেলা, আলামত সংগ্রহ এবং অভিযুক্তকে পুলিশের কাছে উপস্থিত হতে বাধ্য করায় অনেকেই লোকলজ্জায় ঘটনা এড়িয়ে যেতে চান। পত্রিকার পাতা থেকে কিছুটা আঁচ করা যায় বাস্তবে এ চিত্র কতটা ভয়াবহ! ধর্ষণের শিকার হলেও বেশির ভাগ নারী বিচার চাইতে যান না। যেসব নারী বিচার চাইতে যান, তাদের পুলিশ, প্রশাসন, সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে যথেষ্ট হেনস্তা হতে হয়।
মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম সমকালকে বলেন, 'ধর্ষণ অপরাধ সারাবিশ্বেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দিলি্লর ঘটনার প্রতিবাদে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যেভাবে মানুষ রাস্তায় নেমেছে; তাতে সরকার ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।
ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো, তাদের নেতানেত্রী সবাই এ ঘটনার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন; বিচার দাবি করেছেন। এটাই আমাদের জন্য বড় শিক্ষা। আমরাও যদি সবাই মিলে ধষণ নামক বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারি, তবেই জাতি এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। '
পুলিশ সদর দফতরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালে ৩ সহস্রাধিক নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বছরের প্রথম ৬ মাসে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক হাজার ৮৬৯ জন।
এদের মধ্যে ১৩ জনকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে। পরিচয় নিশ্চিহ্ন করতে পুড়িয়ে মারার মতো পৈশাচিক ঘটনাও রয়েছে। ২০১২ সালে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীতে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালে ৯ শতাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ২০১১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭১১।
ধর্ষণ ছাড়াও নারী নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য পাওয়া যায় পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যানে। তাদের তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১০ হাজার ২৯ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০১১ সালে এর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩৪৪।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন সমকালকে বলেন, দিলি্লর ঘটনায় দলমত নির্বিশেষে সবাই প্রতিবাদী। আমাদের দেশে এমনটা হয় না।
উল্টো রাজনৈতিক শক্তি থানাকে প্রভাবিত করে, ভিকটিমের বাবা-মাকে প্রভাবিত করে ঘটনা চাপা দিতে চায়। রাষ্ট্র যদি ধর্ষিতার পক্ষে না দাঁড়ায়, আইন যদি তার কলুষতা থেকে মুক্ত হতে না পারে, তাহলে সমাজে এ ধরনের ঘটনা বাড়বেই। প্রশাসনকে অবশ্যই ধর্ষিতার পাশে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। যে কোনো ধর্ষণের ঘটনার পর মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন_ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ধর্ষিতা নয়, ধর্ষকের ছবি বড় করে ছাপিয়ে তাকে সামাজিকভাবে বর্জন করা উচিত।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সহ-সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ধর্ষণের মামলা বিচার করার জন্য আদালতে ক্যামেরা ট্রায়ালের কথা বলা থাকলেও নারী ভিকটিমদের ক্ষেত্রে এটি ঘটছে না। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বিভিন্ন ধরনের আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে ইয়াসমিন ধর্ষণের পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সারাদেশে। আন্দোলনের মুখে অপরাধীদের গ্রেফতার এবং শাস্তি নিশ্চিত করে প্রশাসন। এর পর ১৯৯৮ সালে শিশু তানিয়া ধর্ষণের ঘটনারও প্রতিবাদ হয়েছিল।
কিছুদিন আলোচনায় থেকে তা আড়ালে চলে যায়। এর পর ধর্ষণের আর কোনো ঘটনায় জোরালো প্রতিবাদ হয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।