মাটির সরু পথ চলে গেছে ম্যানগ্রোভ বনের ভেতর দিয়ে, থেমেছে বঙ্গোপসাগরের কূলে। পথ চলতে চলতে ছবি তুলছেন ওমর ভাই, অন্য দুই সঙ্গী ইফতেখার আর শান্তনু।
সোনাদিয়া সৈকতের উদ্দেশে মহেশখালীর ঘটিভাঙ্গা থেকে আমাদের যাত্রা।
এই প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার সময় বারবার মনে হলো, সাগরবুকের ছোট্ট সুন্দর এই জায়গাটি যেন বাকি ভূখণ্ড থেকে আলাদা। তিন-তিনটি সাগর চ্যানেলের ওপর দুটি সেতু ও একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে একে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে।
ইনানী, সেন্টমার্টিন—এই দুই সৈকতের কথা তো অনেকেরই জানা। তবে শান্ত- নিরিবিলি সোনাদিয়া সৈকত চেনেন কম মানুষই। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুকাল থেকে।
এখানে আসতে হলে অবশ্য একটু প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। জোয়ার থাকলে নৌকায় করেও যাওয়া যায়।
তবে হেঁটে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা, প্যারাবনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় দুই চোখ ভরে যাবে অসাধারণ সব দৃশ্য দেখে। সাগর চ্যানেলে জেলেদের মাছ ধরা, ছোট ছোট নালাসমৃদ্ধ বনের সৌন্দর্য এবং সে বনের নুনিয়া, সাদা, কালো বাইনসহ নানা ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ আপনাকে মুগ্ধ করবে। ভাটার সময় দেখতে পাবেন নালায় মাছ কুড়ানোর দৃশ্য আর বনের মধ্যে মহিষের পাল চরে বেড়ানো। বন পার হলেই ঠিক সোনাদিয়ার আগে চোখে পড়ে বিশাল এক লবণখেত।
লবণচাষিদের সঙ্গে কথা বলা শেষে যখন আমরা পৌঁছালাম সোনাদিয়ার সৈকতে, হাঁটার ক্লান্তি উবে গেল যেন নিমেষে।
মাত্র নয় বর্গকিলোমিটারের এই সোনাদিয়ার তিন দিকে বঙ্গোপসাগর। আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষের বাস এখানে। কোনো বাজার নেই। কয়েকটি মুদির দোকান ছাড়া ভরসা ওই মহেশখালীর ঘটিভাঙ্গা।
সোনাদিয়া সৈকতের মূল আকর্ষণ লাল কাঁকড়ার লুকোচুরি খেলা, কচ্ছপের ডিম ও ঝিনুকের আস্তরণ। শত শত লাল কাঁকড়ার বিচরণ সৈকতে। মানুষের আভাস পাওয়ামাত্রই শুরু হয়ে যায় তাদের লুকোচুরি খেলা। সৈকতের বুকে কাঁকড়ার পায়ের ছাপ দেখে ভ্রম হতে পারে কোনো শিল্পীর তুলির আঁচড় কি না। রাতের বেলা সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম পাড়ার আদর্শ সময়।
শীতের সকালে আপনিও দেখে আসতে পারেন সোনাদিয়া সৈকতের বালুর নিচে কচ্ছপের পেড়ে যাওয়া শত শত ডিম। খুব সকালে বালু হাতড়িয়ে ডিম কুড়ানোর কাজটি করে কিশোর মোকাররম। সোনাদিয়া মৎস্যজীবী সমিতি প্রতিষ্ঠিত এখানকার একমাত্র হ্যাচারিটিতে বাচ্চা ফুটিয়ে সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয় সেসব কচ্ছপশিশু। প্রতি দুই দিন পর এখানে চার থেকে পাঁচ শ ডিম সংগ্রহ করা হয় বলে জানায় মোকাররম।
এখানে রাতে থাকার ব্যবস্থা নেই।
তাই মন চাইলেও দেখতে পেলাম না সোনাদিয়ার সৈকতে সূর্যাস্ত।
যেভাবে যাবেন
কক্সবাজার এসে পরের দিন খুব সকালে বেরিয়ে পড়ুন কিছু শুকনা খাবার সঙ্গে নিয়ে। শহরের ৬ নম্বর ঘাট থেকে স্পিডবোটে মহেশখালীর গোরকঘাটা যাওয়া যায়। মহেশখালী সদর থেকে মিশুক কিংবা অটোরিকশায় যেতে হবে ঘটিভাঙ্গা। তারপর হাঁটা আরম্ভ করুন অথবা নৌকা ঠিক করে নিন।
জেনে রাখুন, সোনাদিয়ায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তাই দিনে দিনে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিয়েই বের হওয়া ভালো। এ ছাড়া কক্সবাজার থেকে স্পিডবোটে করেও দেখে আসতে পারেন সোনাদিয়ার সৌন্দর্য। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।