আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বইয়ের পসরা থাকলেও বেচাকেনা নেই

অমর একুশে গ্রন্থমেলার গতকাল দ্বিতীয় দিনে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দর্শনার্থী এবং লেখকদের লক্ষ্য করা গেলেও যেন ম্রিয়মান ছিল মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত দর্শনার্থীরা। প্রকাশকরা বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসলেও বিকিকিনি চোখে পড়ার মতো ছিল না। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সঠিক সমন্বয় ঘটেনি বলে হতাশার রেখা ফুটে উঠেছিল প্রকাশকদের কপালে। তবে ধীরে ধীরে মেলায় প্রাণের স্পন্দন ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বেশ কয়েকজন প্রকাশক। মেলা প্রাঙ্গণে মাত্রাতিরিক্ত ধুলা আর শৌচাগার না থাকার কারণে অনেক দর্শনার্থীই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন এবারের মেলা নিয়ে।

বিক্রয় কর্মীদের জন্য কোনো টয়লেট না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অনুপম প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মিলন কান্তি নাথ বলেন, ইউটিলিটির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই বিপদে পড়ছেন।

এবারই প্রথম মেলা নিয়ে যাওয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। যেখানে ২৩২টি প্রকাশনা সংস্থাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৩২ ইউনিট। অনেকেই এখনো সাজিয়ে তুলতে পারেননি স্টল। পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে চারটি প্রকাশনা সংস্থার স্টল।

এগুলো হলো গতিধারা, অয়ন, মীরা প্রকাশনা ও ধ্রুবপদ। এখনো সাজিয়ে উঠতে পারেনি ইউপিএল, কামরুল বুক হাউস, জ্যোৎস্না পাবলিশার্স ও কবি। এদিকে এখনো বিজ্ঞাপন সরায়নি আকাশ প্রকাশনী, মনন প্রকাশ, পারিজাত প্রকাশনী, নালন্দা ইত্যাদি।

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে বিভিন্ন প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বিতীয় দিনে প্রায় অর্ধশতাধিক নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভাষ থেকে এসেছে হুমায়ূন আজাদের 'নির্বাচিত কবিতা'; অনুপম এনেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রথম কবিতার বই 'ভয় কিংবা ভালোবাসা' ও আনিসুল হকের 'গদ্যকার্টুনসমগ্র ৪'; অন্যপ্রকাশ এনেছে হুমায়ূন আহমেদের শিশুতোষ গ্রন্থ 'কানী ডাইনী' ও মহাদেব সাহার কাব্যগ্রন্থ 'বাংলাদেশ, তোমাকে প্রণাম'; আগামী এনেছে তসলিমা নাসরিনের 'নিষিদ্ধ'; পার্ল পাবলিকেশনের সানোয়ার হোসেনের 'যমুনার দুই মেয়ে ও হাঙর' অ্যাডর্ন থেকে প্রকাশিত হয়েছে ডেইলি সান সম্পাদক আমির হোসেনের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি।

নজরুল মঞ্চে মোড়ক উন্মোচনের নিয়মিত কার্যক্রম লক্ষ্য করা না গেলেও মেলার মূল মঞ্চের আয়োজন বরাবরের মতোই স্বপ্রতিভ ছিল। নিয়মিত আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বিকালে মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিকীর আলো-ছায়ায় জয়নুল আবেদিন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্প-সমালোচক আবুল হাসনাত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আবুল মনসুর, সৈয়দ আজিজুল হক, সাজ্জাদ শরিফ ও ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।

প্রাবন্ধিক বলেন, জয়নুল ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ চিত্রমালা অঙ্কনের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে খ্যাতিমান শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ তার শিল্পীসত্তাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। শতবার্ষিকীর আলো-ছায়ায় আচার্য জয়নুল আবেদিনকে বিচ্ছিন্নভাবে নয়, সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা প্রয়োজন। তার সৃষ্টি, তার ব্যক্তিত্ব, লোকশিল্প ও ঐতিহ্যভাবনা এবং দেশ আত্দার মর্মবেদনা ও সংকট উত্তরণের জন্য তার ভাবনাকে নিয়ে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে চর্চা হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি।

আলোচকরা বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশের শিল্পকলা-আন্দোলনে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার নিবিড় সংশ্লেষ ঘটিয়েছেন।

তার রেখা ও রঙে বাঙালির জাতিমানস প্রকাশিত। তার হাত ধরে আমাদের চিত্রশিল্প আজ অজস্র বৈচিত্র্য-অভিমুখী। জন্মশতবর্ষে তাকে স্মরণের পাশাপাশি তার সূত্র ধরে নতুন করে আমাদের চিত্রশিল্পের দার্শনিক-ঐতিহাসিক-নান্দনিক তদন্ত হওয়া জরুরি।

সভাপতির বক্তব্যে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, জন্মশতবর্ষে জয়নুল আবেদিনের জীবন ও শিল্পকর্মের দিকে নতুন করে ফিরে তাকাতে হবে। কারণ জয়নুল আবেদিনের বিচিত্র শিল্পসৃষ্টির নানা ধারার মূল্যায়নই পারে উত্তর প্রজন্মের শিল্পীদের মাঝে তার অঙ্গীকারঋদ্ধ শিল্পীমানসের যোগাযোগ ঘটাতে।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী দিল আফরোজ রেবা, দিলরুবা খান, চন্দনা মজুমদার, মীনা বড়ুয়া, আবুবকর সিদ্দিক, পাগলা বাবুল, মো. নূরুল ইসলাম, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, অনিমা মুক্তি গোমেজ, পল্লবী সরকার মালতী এবং এনামুল হক। আজ মেলার তৃতীয় দিনের আয়োজনে রয়েছে মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবদুস সবুর খান। আলোচনায় অংশ নেবেন মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ফরিদ উদ্দীন মাসউদ, আমিনুর রহমান সুলতান, এ এস এম বোরহান উদ্দীন। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।